chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ছাপাখানায় করোনার হানা: মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ

এখন সবাই পেটেভাতে আছে

ইফতেখার নিলয়: করোনার ভয়াল থাবায় নাকাল হয়ে পড়েছে দেশের বেশিরভাগ মধ্যবিত্তের অবস্থা। এই অবস্থার ব্যতিক্রম নয় চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লার প্রিন্টিং প্রেস তথা ছাপাখানার মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ পরিবারে তারাই মূল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা অলস সময় পার করছে। কিছু কিছু ছাপাখানায় অল্প-বিস্তর ব্যস্ততা নজরে এলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। যারা আগে পোস্টার, ব্যানার, বিয়ের কার্ড ও ভিজিটিং কার্ড তৈরি করতো, তাদের আয় এখন নেই বললেই চলে।

নাজিম প্রিন্টার্সের পরিচালক মোহাম্মদ শাহেদ চট্টলার খবরকে বলেন, গত দেড় বছর ধরে বড় পরিসরে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়না। আগে বড় ক্লাবে বা কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হতো, তখন প্রতি সপ্তাহে বিয়ের কার্ডে ছাপানোর ফরমায়েশ পেতাম। এখন সেটা তো একেবারেই নেই। বিয়ে হয় অল্প মানুষ নিয়ে ঘরোয়াভবে। ঘরোয়া বিয়েতে তো আর কার্ড ছাপানোর প্রয়োজন পড়েনা। আমাদের বেশিরভাগ কাজ ছিলো বিয়ের কার্ড বানানো কেন্দ্রীক। আয় কমে গেলে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের কী অবস্থা হয় তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

একই আক্ষেপ প্রকাশ করে হায়দার প্রিন্টার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ হায়দারেরও। তিনি আমাদের বলেন, স্কুলের বই-খাতা, আইডি কার্ড, হাজিরা খাতার কাজ করতাম। আজকে কতদিন স্কুল বন্ধ, আয় কীভাবে হবে? আয় ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সিএন্ডএফ ও সরকারি কিছু অফিসের নথিপত্রের প্রিন্টিংয়ের কাজও পেতাম । এখন সেই অবস্থা আর নেই। করোনায় সব ওলট-পালট হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক ছাপাখানা ব্যবসায়ী বলেন, অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। দোকানভাড়া তো মওকুফ হয়না। সংসার চালাতে হয়। আমরা তো মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। কাড়িকাড়ি টাকা তো আর আমাদের কাছে নেই। সংসার চালানো অনেক কঠিন কাজ এখন আমাদের।

একই সুরে আন্দরকিল্লা ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু হেলাল শাকিল চট্টলার খবরকে বলেন, প্রায় চারশোর মতো ছাপাখানা ব্যবসায়ী আছে। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। আর সবাই বলতে গেলে বিপাকে পড়ে গেছে। এক ব্যবসায়ী তিন লক্ষ টাকার মালামাল কিনে ছোটো পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে করোনা আর লকডাউনে শুরু করার আগেই বাদ দিয়ে চলে গেছে। এখন সবাই পেটেভাতে আছে।

সাধারণত আগে রাজনৈতিক কর্মসূচি, ওয়াজ মাহফিল কিংবা বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে পোস্টার বানানোতেই মূল ব্যস্ততা থাকলেও এখন করোনার প্রকোপে সবকিছুই বন্ধ। জনসমাগম বন্ধ থাকলে তো আর এসব কর্মসূচি বৃহৎ পরিসরে করা সম্ভব নয়। বৃহৎ পরিসরে  করা না হলে তো পোস্টার কিংবা ব্যানার বানানোর প্রয়োজনও পড়েনা।

এছাড়াও আগে ভিজিটিং কার্ড বানানো হলেও এখন তা আর হচ্ছেনা। কারণ, করোনায় অনেকেই নিজস্ব অফিস গুটিয়ে ফেলায় আর কার্ড বানানোর প্রয়োজন পড়ছে না। করোনায় অল্পকিছু সচেতনতামূলক লিফলেট বানানো হলেও তা পর্যাপ্ত না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উপরেও ব্যবসায়ের হালচাল পরিবর্তনের সম্ভাবনা নির্ভর করছে। নাহয় বিপদ আরো বাড়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

ইনি/এনএনআর/চখ

এই বিভাগের আরও খবর