chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

করোনার সুরক্ষা ব্যবস্থা জানতে বিভিন্ন হাসপাতালে সুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা পরিস্থিতি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা জানতে চট্টগ্রামের সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন

এর আগে আজ শনিবার (২৬ জুন) সকাল ১১টায় এসব বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ও জেলা সিভিল সার্জনের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। পরে তিনি নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শনে যান।

বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর এর সাথে মতবিনিময়কালে সুজন বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারী এবং বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে এখনই পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক।

বিশেষ করে গতবছরের করোনা সুরক্ষা ব্যবস্থা মোটেও সুখকর ছিলনা। বিনা চিকিৎসায় করোনা রোগীর মৃত্যু, অব্যবস্থাপনা, নৈরাজ্য নিয়ে রোগী এবং স্বজনদের হাহাকার ছিল চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) এর নিকট একগুচ্ছ প্রস্তাবনা পেশ করেন তিনি।

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রথমেই একটি হট লাইন নাম্বার চালু করার জন্য মত প্রকাশ করে তিনি বলেন, যেখানে ফোন করে রোগীর আত্নীয় স্বজন কোন হাসপাতালে কতটি সিট এবং আইসিইউ খালি আছে তার তথ্য পাবেন। এতে করে রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করার ভোগান্তি কমবে।

রোগীর স্বজনরা যে হাসপাতালকে রোগীর চিকিৎসার উপযুক্ত মনে করবে সেখানেই রোগীকে ভর্তি করাতে পারবে। অনলাইনে হাসপাতালের সিট অথবা আইসিইউ বুকিং করার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করার আহবান সুজনের।

এছাড়া মিথ্যা বুকিংয়ের নামে সিট এবং আইসিইউ বুকিং করে রাখার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে সিট এবং আইসিইউ’র তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে করোনার টিকা গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রবাসীরা বিদেশ যেতে পারছেনা। ফলে বিদেশে তাদের চাকুরি হারা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবাসীদের টিকা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিকট জোর দাবী জানান সুজন।

একই দিন সকালে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি’র সাথে মতবিনিময় করেন সুজন। করোনা চিকিৎসায় জেনারেল হাসপাতালের উজ্জীবিত ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন করোনা চিকিৎসায় জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তা চট্টগ্রামের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

হাসপাতালের বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ সার্বিক ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জেনারেল হাসপাতালের সকলকে করোনা চিকিৎসায় গতবারের মতো সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য সবিনয় আবেদন জানান।

দুজনের সাথে মতবিনিময় শেষে সুজন চট্টগ্রামের বেসরকারী মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল ও পার্কভিউ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের সাথে মতবিনিময় করেন।

এসময় তিনি বলেন বেসরকারি হাসপাতালগুলো গতবারের করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা পেছনে ফেলে বর্তমানে সাহসের সাথে করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছেন যা প্রশংসার যোগ্য।

তবে এখনো বেসরকারী হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগী কিংবা তার আত্নীয় স্বজনদের অভিযোগও কম নয়। বিশেষ করে অযৌক্তিক বিলের কারণে প্রায়শই রোগীর আত্নীয় স্বজনের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনাকাংখিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

তিনি বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন। যেখানে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রতিটি হাসপাতালের প্রবেশ মূখে একটি দৃশ্যমান বোর্ড থাকবে যেখানে হাসপাতালের সিট এবং আইসিইউ’র বিবরণ থাকবে।

কি পরিমাণ সিট খালি আছে তার বর্ণনাও বোর্ডে উল্লেখ থাকবে। তাছাড়া করোনা চিকিৎসায় বাস্তবসম্মত একটি চিকিৎসা প্যাকেজ তৈরী করার অনুরোধ জানান যেখানে একজন রোগী করোনা আক্রান্ত হওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসা শেষ পর্যন্ত তার চিকিৎসার সকল বিবরণ এবং ওষুধের উল্লেখসহ পূর্ণাঙ্গ দাম নির্ধারণ করা থাকবে। যাতে করে রোগীর আত্নীয় স্বজন হাসপাতালের বিল বিষয়ে একটি বাস্তব ধারণা পেতে পারে।

অভিযোগ রয়েছে একজন রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যাওয়া পর্যন্ত লাখ লাখ টাকা বিল আদায় করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্যাকেজ নির্ধারণ করা থাকলে রোগীর সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দূরত্বও কমে আসবে।

হাসপাতাল মালিকগণ সুজনের প্রস্তাবনাসমূহ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন এবং এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়নযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেন।

সুজন হাসপাতালে আগত রোগী এবং রোগীর আত্নীয় স্বজনের সাথে হাসপাতালের সেবা নিয়ে জানতে চান এবং রোগীর চিকিৎসার খবরাখবর নেন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, অনির্বান দাশ বাবুসহ বেসরকারি হাসপাতাল মালিক এবং চিকিৎসকগণ উপস্থিত ছিলেন।

আরএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর