chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিপাকে খুচরা ব্যবসায়ীরা

ইফতেখার নিলয়: চট্টগ্রামে বাজারগুলোতে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। শীতকালীন সবজি, মুরগী, গরুর মাংসের পাশাপাশি ব্যাপকহারে বেড়েছে চাল ও চিনির দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সকালে নগরীর কাজির দেউরি বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বেড়েছে শীতকালীন সবজির দাম। শীতকাল বিদায় নিলেও বাজারে মজুদ থাকা ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাল শাকের দাম বেড়েছে। একইসাথে বেড়েছে মুরগী, গরুর মাংস, চাল ও চিনির দাম।

সবজির বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি সবেমাত্র প্রবেশ করতে শুরু করেছে আর শেষদিকে রয়েছে শীতকালীন সবজির অবস্থান। কিন্তু এই শেষ দিকেও বেড়ে চলেছে শীতকালীন সবজির দাম। ফুলকপি ও বাঁধাকপি কেজি-প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজিতে।

গত সপ্তাহের তুলনায় সবধরনের মুরগীর দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে। গত সপ্তাহেও দেশী মুরগী বিক্রি হয়েছে ৪৮০ টাকায় যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২০ টাকায়। সোনালী মুরগী ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দশ টাকা বেড়ে ফার্মের মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়।

প্রতি সপ্তাহে এভাবে দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মুরগী ব্যবসায়ী শরীফ চট্টলার খবরকে বলেন, ‘আমরা হলাম খুচরা ব্যবসায়ী, অল্প লাভে ব্যবসা করি। দাম বাড়ানো আমাদের কাজ না। যারা মুরগী গুলো চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আনে তারাই বলতে পারবে দাম বাড়ার কারণ। এখন মার্কেটে ক্রেতা সংকট দাম বাড়ার কারণে। আমরা তো দাম বাড়িয়ে ক্রেতা হারাতে পারিনা।’

এদিকে মাছে বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা করে, রূপচাঁদা মাছের দাম দেখা গেছে ৭০০ টাকা করে। বাজারে মাছের সরবরাহ যথেষ্ট দেখা গেলেও, নজরে এসেছে ক্রেতা সংকটের।

একইভাবে গরুর মাংসের দাম পূর্বের তুলনায় বেড়ে ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। নিয়মিত দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনোপ্রকার উত্তর দিতে পারেনি ব্যবসায়ীরা।

বাজারের ক্রেতা শামীম বলেন, ‘যে হারে দাম বেড়েছে তাতে নিম্ন মধ্যবিত্তদের নাজেহাল অবস্থা। আয়ের সাথে বাজার দরের বিশাল ফারাক। যে পরিমাণ টাকা নিয়ে এসেছি তাতে দেখা যাচ্ছে সবকিছু কিনে বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়।’

তবে নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে চাল ও চিনির দাম। মিনিকেট ও পাইজাম চা্ল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজিতে। নাজিরশাইল ৭০ ও জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। বর্তমানে চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬৮ টাকায়। রমজানের পূর্বেই এমন দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের চেয়েও হতাশ দেখা গিয়েছে ব্যবসায়ীদের। তুলনামূলক ক্রেতা সংকটে পড়েছেন তারা।

ইলিয়াছ স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী ইলিয়াছ চট্টলার খবরকে বলেন, ‘আমাদের দোষারোপ না করে আমদানীকারক বা আড়ৎদারদের উপর নজরাদারি বাড়ানো উচিত। তারাই সকল বাজারে পণ্যের সরবরাহ করে থাকে। বরং দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা বিপাকে পড়েছি দোকানে মালামাল তুলতে আর তুললেও ক্রেতার সংকটে পর্যাপ্ত বিক্রিও সম্ভব হচ্ছেনা।’

অভিযোগ উঠেছে খুচরা ব্যবসায়ীদের উপর ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক হেনস্তা হওয়ার। বড় ব্যবসায়ীদের নজরের আওতায় আনার চেয়েও তাদের বেশি আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যবসায়ী।

বাজার তদারকির ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক বলেন, ‘আজকেই আমাদের এ সংক্রান্ত মিটিং হয়েছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে আমাদের ৪-৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট পুরোদমে মাঠে থাকবে, যাতে করে রমজানে স্বস্তি ফিরে আসে। আজকেই এ সংক্রান্ত মিটিং হয়েছে।’

ক্রেতাদের মাঝে জন্ম নিয়েছে হতাশা। নিয়মিত দাম বৃদ্ধিতে তারা এখন ক্ষুদ্ধ। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষেরা সম্মুখীন হচ্ছেন খাদ্য সংকটে, বাজারের দামের সাথে তাল মিলিয়ে পর্যাপ্ত টাকা আয় না করতে পারার কারণে।

এ ব্যাপারে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন চট্টলার খবরকে বলেন, ‘চালের দাম বৃদ্ধি ত আর নতুন কিছু নয়। আমরা এ ব্যাপারে সরকারকে অবহিত করলেও কোনোপ্রকার সাড়া তো পাচ্ছিনা। সরকার তো ব্যবসায়ীদের কাছে বন্দী। আমাদের খাদ্যমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই চালের মিল মালিক সমিতির সভাপতি। আর যারা মিল মালিক তারাই আবার আমদানিকারক। শুল্ক কমানো হলেও চালের দাম কমছেনা। এক্ষেত্রে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারকে অনেকবার অবহিত করেছি।’

শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ-ই নিম্ন আয়ের। আয়ের ও ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য করে দিনাতিপাত করতে হিমশিম খেতে হতে হচ্ছে তাদের। তাই বাজারে জিনিসপত্রের এমন ঊর্ধ্বগতির দ্রুত অবসান চাইছেন তারা। একই মন্তব্য ব্যবসায়ীদেরও। যেহেতু তাদের আয় নির্ভর করে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার উপর। দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও বিক্রি কমে গেছে আগের তুলনায়। তাই তারাও দ্রুত সমাধান চাচ্ছেন উদ্ভূত এই পরিস্থিতির।

এএমএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর