প্রেমের ফাঁদে ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিম্মি, গ্রেফতার ৪
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে এক নারীর ছলনাময়ী প্রেমে জড়িয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি হয়েছেন নগরীর বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা। পরে সম্মানহানির ভয়ে বিকাশের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান তিনি।
গত ৫ মার্চ বিকেলে নগরীর বাকলিয়া থানা রাহাত্তারপুল এলাকায় কথিত প্রেমিকা ওই তরুণীর সাথে দেখা করতে গিয়ে অপহরণ পরবর্তী মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেলেও এতদিন ধরে ঘটনাটি চেপে রাখেন জিম্মিদশার শিকার এ ব্যাংক কর্মকর্তা।
তবে স্বজনদের অনুরোধে গতকাল (১১ মার্চ) বৃহস্পতিবার তিনি বিষয়টি বাকলিয়া থানা পুলিশের কাছে জানান।
ব্যাংক কর্মকর্তার বরাতে পুলিশ জানায়, ওই কর্মকর্তার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে ফোন নাম্বার পেয়ে এক তরুণীর সাথে যোগাযোগ হয়।
কয়েকদিন তার সাথে কথা বলার পর নগরীর বাকলিয়া থানা রাহাত্তারপুল এলাকায় তরুণীর বাসায় ব্যাংক কর্মকর্তাকে দাওয়াত দেন। দাওয়াত পেয়ে রাহাত্তারপুল এসে তরুণীকে ফোন দিলে একজন লোক এসে তাকে নিয়ে যাবে বলেন এবং ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপেক্ষা করতে বলেন।
তরুণীর কথামত ওই ব্যাংক কর্মকর্তা সেখানেই অপেক্ষা করছিলেন। কিছুক্ষণ পর রায়হান পরিচয় দিকে এক ব্যক্তি তরুণীর বাসায় নেওয়ার নাম করে চান্দাপুকুর এলাকা বিসমিল্লাহ টাওয়ার নামে একটি ভবনের পেছনে খালি জায়গায় নিয়ে জিম্মি করে রাখেন ব্যাংক কর্মকর্তাকে।
সেখানে আগে থেকেই আরো বেশ কয়েকজন যুবক অবস্থান করছিলেন। অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করেছেন মর্মে ভয় দেখিয়ে নানান উদ্ভট তথ্য সাজিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখায়। তবে বাঁচতে চাইলে মুক্তিপণ হিসেবে তারা তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
পরে লোকলজ্জ্বার ভয়ে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে কয়েকটি বিকাশ নাম্বারের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করে সেখান থেকে মুক্তি পান।
এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনার সত্যতা পান।
পরে বৃহস্পতিবার রাতভর নগরীর বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফুটেজে শনাক্ত ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. রায়হান (২৮), মো. শহীদ আলম ওরফে লেদু (৩০), গিয়াস উদ্দিন (২৯) ও জাহাঙ্গীর আলম (৩০)।
গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। তাদের টিমে নারীসহ অন্তত ১০ জনের নাম পেয়েছে পুলিশ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন বাকলিয়া থানার ওসি মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত সকলেই একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।
সর্বশেষ এক ব্যাংক কর্মকর্তার দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার চারজনকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। তাছাড়া সংঘবদ্ধ এ চক্রের বাকি সদস্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান ওসি মো. রুহুল আমিন।
আরএস/এমআই