chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

‘গায়েবি’ বা ‘অদৃশ্য’ মসজিদ নামে পরিচিত সীতাকুণ্ডের হাম্মাদিয়া মসজিদ

আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও ভাঙ্গা হবে না সুলতানী আমলে নির্মিত প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী

নিজস্ব প্রতিনিধি : হাম্মাদিয়ার মসজিদ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গোলাপি রঙের এক গম্বুজের মসজিদটি এলাকার লোকজনের কাছে ‘গায়েবি’ ও অদৃশ্য মসজিদ নামেই পরিচিত।

চট্টগ্রাম নগর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোট কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদ্দা গ্রামে এর অবস্থান।

সুলতানী আমলে নির্মিত প্রাচীন এ মসজিদটিকে ২০১২ সালে প্রকাশিত ইটারনাল চিটাগাং বইয়ে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, বাংলার শেষ হোসেন শাহী বংশের সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৫৩৩-১৫৩৮) সময় তৎকালীন চাটিগ্রাম বা চাটগাঁও বন্দর শহরের ১২-১৩ মাইল উত্তর-পশ্চিমে ৭নং কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদিয়া গ্রামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মিত হয়।

মসজিদ স্থাপনের পর গ্রামের নামকরণ হয় মসজিদিয়া, স্থানীয়ভাবে উচ্চারিত বিকৃত নাম মসজিদ্দা। এর অনতিদূরে (আধমাইল পূর্বে) চট্টগ্রামের পর্বতশ্রেণী ও রেলপথ, প্রায় একই দূরত্বে পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও বঙ্গোপসাগর। মসজিদের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।

মসজিদটি ১০.৩৭ একর বিশিষ্ট একটি দীঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত, পাশে গড়ে উঠেছে একটি কবরস্থান। দীঘিটি হাম্মাদিয়া দীঘি নামে সুপরিচিত। ‘মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বর্গাকার ইমারত (বাইরের দিকে এর প্রতি বাহু ৬.৩৪ মিটার) এবং এর বাইরের চার কোণায় আছে চারটি সংযুক্ত চোঙ্গাকৃতির গোলাকার বুরুজ।

রয়েছে মেহরাবের বাইরের দিকে একটি গোলাকৃতির বৃহৎমিনার ও এর উপরে স্থাপিত ক্ষুদ্রাকৃতির বুরুজ। চতুর্পাশের মিনারগুলোর ব্যাস সমান হলেও মেহরাবের বাইরের মিনারটির ব্যাস বেশি। মসজিদের দেয়াল পৌনে ৪ হাত পুরু এবং তা পলেস্তার (আগে নিশ্চয়ই তা ছিল না) ও চুনকাম করা।গায়েবি বা অদৃশ্য মসজিদ সীতাকুণ্ডের হাম্মাদিয়া

প্রায় পাঁচ শ বছরের পুরোনো এ মসজিদ ঘিরে বর্তমানে গড়ে উঠছে নতুন স্থাপনা। মূল মসজিদ ভবনের সঙ্গে বেমানান মনে হচ্ছিল। গম্বুজের গায়ের গোলাপি প্রলেপটিও নতুন করে লাগানো বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন সুলতানী আমলে নির্মিত প্রাচীনতম মূল মসজিদটির ভেতরে আগে ৬০ জন মুসল্লি নামাজ পড়ার সুযোগ পেলেও বর্তমানে পাশের অস্থায়ীভাবে সংস্কার করা মসজিদটিতে এক হাজার ২শ জনের নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সম্প্রতি মহল্লাবাসীর সহযোগিতায় তৈরি করা একটি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মসজিদটির পুননির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। তবে মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও মূল মসজিদটিতে হাত দেওয়া হবে না বা ভাঙা হবে না বলে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটি।

মসজিদ কমিটি প্রতিবেদককে জানায় তারা শুরু থেকেই পুরাতন এক গম্বুজের মসজিদটি টিক রেখেই নতুন মসজিদ নির্মাণ করার পরিকল্পনা করে।

১৯৮৬ সাল থেকে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী আবদুস শুকুর বলেন, ‘মুসল্লিদের জায়গা সংকুলানের কথা ভেবে কার্যকরী কমিটির সভায় মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা মূল মসজিদটিতে হাত দেব না। এটি ভাঙা হবে না।’

তিনি ব্যক্তিগতভাবেও এটি সংরক্ষণের পক্ষে মত প্রকাশ করে বলেন, ‘মসজিদটি অক্ষত রাখার ব্যাপারে এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে।

এদিকে কমিটির কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মিত ভবনে মহিলাসহ প্রায় তিন হাজার লোক একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের দক্ষিণ পাশে চারতলা ভবনে থাকবে হেফজখানা ও এতিমখানা।

ইতিমধ্যে মসজিদের পাশে একতলা ভবনের স্থাপনা গড়ে উঠেছে। মসজিদের পেছনে প্রায় ১০ একর জায়গায় রয়েছে হাম্মাদিয়া দিঘি। মসজিদের পাশে টিনের ছাউনির একতলা অস্থায়ী মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে।

হাম্মাদিয়া মসজিদের ভেতরের ইট-সুরকির কারুকাজ থাকলেও এর চারপাশের জানালাগুলো ঢাকা পড়েছে নতুন ভবনের দেয়ালের আস্তরণে। মেঝেতে মোজাইক করা হয়েছে এবং কমে গেছে মেঝের গভীরতা।

চখ/রাজীব প্রিন্স

এই বিভাগের আরও খবর