chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

শেষ হচ্ছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, স্বস্তিতে জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ শেষ হচ্ছে সাগরে মৎস আহরণের উপর দেওয়া সরকারি নিষেধাজ্ঞা। মা ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে দেশের নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। আগামী কাল থেকে সাগর ও নদী থেকে ইলিশ আহরণে  যেতে পারবে জেলেরা। এ উপলক্ষে মাছ ধরার ট্রলারে জাল প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে তারা।

এ বছর ইলিশের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারন, মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও মজুদ সংরক্ষণ এবং সহনশীল মাছ আহরণ নিশ্চিত করতে সরকার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পেরেছে বলে মনে করেন তারা। এছাড়াও এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে পরিবেশ দূষণ অনেকটা কম হয়েছে যার ফলে ইলিশের প্রজনন ও সংরক্ষণ ভালো হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

শেষ হচ্ছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, স্বস্তিতে জেলেরা

মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০১৯-২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে ইলিশের উৎপাদন পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১১ বছরের ব্যবধানে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ। চলতি মৌসুমে তা ছয় লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এক দশক আগেও দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত।

দেশের জলসীমার প্রায় সাত হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ইলিশের অভয়াশ্রম। ক্রমবর্ধমান ইলিশ উৎপাদনের এই প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশকে ইলিশ উৎপাদনের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একই সঙ্গে ইলিশ উৎপাদনেও বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে। গত ৮ জুন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে মিঠাপানির মাছে বাংলাদেশের তৃতীয় স্থান ধরে রাখার তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিশ্বে মাছ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির দিক থেকেও বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

শেষ হচ্ছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, স্বস্তিতে জেলেরা

এ ব্যাপারে জেলা মৎস কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ইলিশের সুষ্ঠু প্রজনন নিশ্চিত করতে আমরা সব সময় তৎপর। সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলতে জনগণকে সব সময় উদ্বুদ্ধ করেছি। জেলেরা যাতে অর্থে কষ্টে না পড়ে সেজন্য তাদের জন্য প্রণোদনা ব্যবস্থা। যারা নিষেধাজ্ঞা সময়েও সাগরে মাছ ধরেছে তাদের দমন করতে আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেছি। সর্বোপরি সবার আন্তরিকতার ফলে সবকিছু সম্ভব হয়েছে।

দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞার পর মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলে শুভংকর চন্দ্র দাশ। তিনি বলেন, একদিকে করোনাভাইরাস অন্যদিকে মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা ফলে সংসার চালাতে টানাপোড়নের অন্ত ছিল না। অবশেষে মাছ ধরার উঠে গেছে। এখন সমুদ্র গিয়ে মাছ ধরতে পারলে আমাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে, স্বস্তি ফিরবে জেলে পল্লীর পরিবারগুলোতেও।

উল্লেখ্য, সরকারি হিসেবে আগে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাগরে ইলিশ আহরণের মৌসুম ধরা হলেও এখন প্রজনন মৌসুম বাদ দিয়ে পরবর্তী তিনমাসও ইলিশ আহরণের মৌসুম হিসেবে গণনা করা হয়। মা ইলিশের ডিম ছাড়ার কারণে আশ্বিনী পূর্ণিমায় (অক্টোবর) মা ইলিশের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে সরকার দেশের সমুদ্র উপকূল নদী ও নদীর মোহনায় ইলিশ আহরণে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। শুরুতে এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১১ দিন থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা বাড়িয়ে সর্বশেষ ২২ দিন করা হয়। এতে ইলিশের আকার, ওজন এবং আহরণের পরিমাণও বাড়তে থাকে। সাগর থেকে প্রতিবছর গড়ে সাত লাখ টন মাছ আহরণ করা হয়ে থাকে। যার বাজার মূল্য ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আবার মোট আহরিত সামুদ্রিক মাছের ৩০ শতাংশ যোগান দেয় রূপালী ইলিশ। দেশের মোট বাজেটের ১০ থেকে ১২ শতাংশ রাজস্ব যোগান দেয় সামুদ্রিক মৎস্য খাত। প্রায় অর্ধলক্ষ যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বোট বা ট্রলার সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় রয়েছে কমবেশি দশ হাজার বোট ও ফিশিং ট্রলার। উপকূলের বিভিন্ন উপজেলার অন্ততঃ পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ মৎস্য আহরণের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

এই বিভাগের আরও খবর