chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায়-তথ্যমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায়। আর যখনই নির্বাচনে হেরে যায় তখন তাদের আচরণ ‘নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা’র মতো। বুধবার বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে করা অভিযোগও সেরকম ছিল।’

তথ্যমন্ত্রী বিএনপিকে এধরণের আজগুবি অভিযোগ উপস্থাপন না করে বাস্তবতাকে মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনাদের নেতাকর্মীরা কেন আপনাদের কাছ থেকে সরে গেছেন এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন ভোটের দিন মাঠে ছিলনা তা বিশ্লেষণ করুন। তাহলে আপনাদের দল উপকৃত হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসকল কথা বলেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল­া’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবার পর দেখলাম দুই মেয়র প্রার্থী ও কেন্দ্রিয় নেতাদের নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তারা কিছু আজগুবি অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। তারা বলেছেন ইভিএম মেশিনে নাকি রাত পর্যন্ত ভোট দেওয়া হয়। ইভিএম মেশিনে যদি এমন সুযোগ থাকতো তাহলে ভোট গ্রহণের হার ২৫ শতাংশ থাকতো না, ৬০ শতাংশের ওপরে যেত।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ইভিএম মেশিন নিজেই সব দলের জন্য পোলিং এজেন্টের কাজ করেন। কারো যদি আঙ্গুলের চাপ না মিলে কোনভাবেই ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। এমনকি সিইসিকেও আঙ্গুলের চাপ না মেলায় ভোট দিতে অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যখন দ্বিগুণ ভোট পেয়ে যখন জয়ী হয়েছে, তখন তো বিএনপিকে নানা ধরণের অভিযোগ উপস্থাপন করতে হবে। সেটাই তারা করেছে।’

ঢাকা দক্ষিণের চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করতে চারটা পর্যন্ত সময় কেন লাগলো, বিএনপির এমন অভিযোগের ব্যাপারে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তো বিএনপির মতো গোঁজামিল দিয়ে নির্বাচন শেষ হবার দু’ঘন্টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করিনি। সঠিক ফলাফল ঘোষণার জন্যেই নির্বাচন কমিশন সময় নিয়েছে। বিএনপির এসব অভিযোগ জনগণের কাছে নিজেদের হাস্যস্পদ হিসেবে উপস্থাপন করছে। দেশের ইতিহাসে ঢাকা দুই সিটির নির্বাচন অন্যতম একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে।’

বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায় জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন প্রথম টেলিভিশন আসে তখন অনেকে বলেছে টেলিভিশন দেখলে ঈমান চলে যাবে। আবার যখন দেশে প্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয় তখনও গ্রামে গঞ্জে অনেকে প্রচারণা করেছে এটি ব্যবহার করা যাবেনা। এখন কিন্ত পবিত্র হজ্বের অনুষ্ঠান এবং বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতও টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হয়। বিএনপির অবস্থাও হয়েছে সেরকম। ইভিএম মেশিনেও ভোট দেয়া যাবেনা বলে বিএনপি প্রচারণা চালিয়েছে।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন বাংলাদেশে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হলে তিনি বলেছিলেন, এই সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে বাংলাদেশ যুক্ত হলে দেশের সব গোপন তথ্য চলে যাবে। আর সেই সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে আমরা পরে সংযুক্ত হয়েছি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে। সুতরাং বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায় আর যখনই হেরে যায় তখন নাচতে না জানলে উঠান বাাঁকা’র মতো অভিযোগ উপস্থাপন করে। বুধবারে তাদের সংবাদ সম্মেলনও সেই ভয়ের বহিঃপ্রকাশ।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি প্রথম থেকে বলে আসছে ঢাকা সিটির নির্বাচন হচ্ছে তাদের আন্দোলনের অংশ। তাদের আন্দোলন সম্পর্কে মানুষ জানে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন বানচাল করার জন্য পাঁচ’শ ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ভোটার ও নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারসহ অনেককে হত্যা করেছে। সুতরাং তারা যখন ঘোষণা দেয় এই নির্বাচন আন্দোলনের অংশ তখন মানুষ সেই হাঙ্গামার আশঙ্কায় করে। সেই কারণেই অনেকে ভোট কেন্দ্রে যায়নি। বিএনপি প্রথম থেকে ইভিএমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা না চালালে এই উপস্থিতি আরো ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেশি হতো।’

‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার রাষ্ট্রীয় মতায় মূলত: দু’টি কারণে এসেছে’ উলে­খ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রথমত: দলের নেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সংকট মোকাবিলা করার দতা, সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার মতা। একইসাথে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও ধৈর্য্য সহকারে সেই প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করার েেত্র তাঁর অর্জিত অসাধারণ শক্তি। আরেকটি কারণ হচ্ছে আমাদের দলের ঐক্যবদ্ধতা।’

‘আজকে যে সরকার সেটা আওয়ামী লীগের সরকার, সরকারের আওয়ামী লীগ নয়, আমাদের মূল ঠিকানা দল’ স্মরণ করিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যারা নির্বাচিত এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবার মূল ঠিকানা হচ্ছে দল। সুতরাং দায়িত্ব পালন করার সময় দলকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলের প্রতিকে হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হবার পর দলীয় কর্মীরা অনেকের কাছ থেকে দুরে সরে যায়। অনেকে আবার নিজস্ব বলয় তৈরী করেন। এটা কোন ভাবেই সমীচীন নয়। নিজস্ব বলয় তৈরী করলে দেখা যাবে সংকটের সময় সেই বলয়ের লোকজন থাকবেনা। কারণ মৌচাকে যখন মধু থাকে তখন অনেক লোক ঘুর-ঘুর করে। যখন মধু থাকেনা তখন কাউকে আর পাওয়া যায়না।’

প্রতিনিধি সভায় অন্যান্যের মধ্যে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিন্নাতুন নেছা তালুকদার, প্রফেসর মনছুর রহমান এমপি, সাবেক এমপি আকতার জাহান, কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, আয়েন উদ্দিন এমপি, এডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা এমপি, এনামুল হক এমপি প্রমুখ। বিকেলে একই স্থানে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর