chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

কে আমার জন্য চালের রুটি-মাংস নিয়ে আসবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোববার (১৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা। নাস্তা সেরে বাসা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বদিউল আলম (৫৯)। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের মুখে তার পানের দোকান রয়েছে। হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনে ভীত হয়ে পড়ে তিনি। বজ্রপাত মনে করে স্ত্রীকে দ্রুত বাসার ফ্যান, ফ্রিজ ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বলেন।

বিকট শব্দটি আসছিল বদিউলের তিন থেকে চার ঘর আগের বাসা থেকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনি দেখতে পান বাসার সামনে মানুষের হইচই। এলাকার কয়েকজন মানুষ আগুনে দগ্ধ হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে ছুটাছুটি করছে। তখনও তিনি ঘটনার ভয়াবহতা বুঝে উঠতে পারেননি। আগুনে মাথার পেছনের দিক ঝলসে যাওয়া এক যুবককে তার সামনে আনা হয়। তখনো তিনি তার ছেলে মো. ফারুককে (২৩) চিনতে পারেননি।

ভাইকে চেনার পর পাশ থেকে চিৎকার করে কান্না শুরু করে ফারুকের বোন। মেয়ের কান্নায় হকচকিয়ে যান বদিউল। কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে যান। একটু আগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঝলসে যায় ফারুকের শরীর। বিস্ফোরণের বিকট শব্দকে বজ্রপাত ভেবে নিয়েছিল বদিউল।

দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের গেইটে বিস্ফোরণের ভয়াবহ কথাগুলো বলতে গিয়ে বার বার খেয় হারিয়ে ফেলছিলেন বদিউল আলম। ছেলের কথা বলতেই তার চোখে টলটল জল। আত্মীয় স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, ছেলেকে হারানোর শোকে তিনি কান্না থামাতে পারছিলেন না। কখনও চুপ হয়ে কথা বলছেন নিজের সঙ্গে।

কান্না করতে করতে তিনি বলেন, আমার ছেলে অনেক পরহেজগার ছিল। কোনো দিন এক ওয়াক্ত নামাজ বাদ দেয়নি। অনেক সাদাসিদে ছিল। মসজিদে হুজুরের সঙ্গে নামাজ পড়ে বের হতো। আমার এখানে আসলে পরোটা, বাকরখানি নিয়ে আসতো। আমি বলছিলাম তোর মামিকে বলিস আমার জন্য চালের রুটি আর গরুর মাংস রান্না করে দিতে। আমি একটু খাইতাম। আমার ছেলেটাই চলে গেছে। পুরো শরীর জ্বলে গেছে। কে আমার জন্য চালের রুটি আর মাংস নিয়ে আসবেতাঁর কান্না দেখে হাসপাতালে আসা অন্য রোগীর স্বজনরা এসে ভিড় করতে শুরু করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফারুকের মা প্রতিবন্ধী হওয়ায় বদিউল আলম দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ফারুক প্রথম ঘরের সন্তান। থাকেন নগরের চন্দনপুরা এলাকায়। একটি অ্যালুমিনিয়াম প্রতিষ্ঠানে কয়েকদিন আগে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। ফারুক প্রায় সময় বায়েজিদের কাশেম কলোনীতে পিতা বদিউল আলমের কাছে বেড়াতে আসতেন। কোরবানির পর অনেক দিন সেখানে যাওয়া হয়নি ফারুকের। বদিউল ফোন করে ফারুকের খোঁজ নেন। সে ফোনে জানায় অ্যালুমেনিয়ামের চাকরি হওয়ায় বেড়াতে যেতে পারছে না। গত বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) ফারুক পরোটা, বাকরখানিসহ বদিউলের পছন্দের খাবার নিয়ে বায়েজিদে বেড়াতে যায়।

বেড়ানো শেষে চন্দনপুরা আসার পথে একটি ভবনের নিচ তলায় গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা যায় সে। ওই ঘটনায় ফোরকান উল্লাহ (৫৫) ও মো. কালাম নামে আরও দুই রাজমিস্ত্রী (৩০) হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ফোরকানের ৬০ শতাংশ ও কালামের শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগের সহকারি রেজেস্ট্রার ডা. আলী জামান চট্টলার খবরকে বলেন, দুইজনের শ্বাসনালী  পুড়ে গেছে। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখছি।

উল্লেখ্য, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রাজমিস্ত্রী মো. কালাম ও ফোরকান উল্লাহ এক সঙ্গে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। সকালে নাস্তা সেরে তারা ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ গ্যাস বিস্ফোরণে তারা দগ্ধ হন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর