chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

হাতের ইশারা দেখেও গাড়ি থামায়নি চালক

সড়কে প্রাণ গেলে কলেজ ছাত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক: এখনো ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। ইটের কনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে চারপাশটা। ওই পথ দিয়ে পথচারী, রিকশা, প্রাইভেট কার, শ্রমিক যেতেই এক ফলক চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। কয়েক সেকেন্ডে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। বলতেই বলতেই সেই ইটের কনার ওপর দিয়ে চলে যায় বিশাল আকৃতির লরি। ইটের কনা সরে যাওয়ায় সেখানে ভন ভন করছে মাছি।

সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে এ দৃশ্যের দেখা মিলল সদরঘাটের নগরের নেভাল টু হিসেবে পরিচিত সড়কের জেটির মুখে। সংকীর্ণ এই সড়কটিতে গেল রোববার লরির চাপায় অকালে প্রাণ হরায়  জমায় খাদিজা আক্তার উর্মি (১৯)। ঘটনাস্থলে উর্মির রক্তের দাগ দগদগ করছে পথচারীদের মাঝে।

হাতের ইশারা দিয়েছিল পথচারীরা

গতকালের ঘটনা বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম মো. সাইফুল্লাহ তুষার নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, বন্ধুরাসহ নেভাল এলাকার ঘুরে দেখার পর বের হয়ে যাচ্ছিল উর্মিরা। এসময় অপর প্রান্ত থেকে আসা একটি লরী জেটির মুখে আসে। সেটি চলে যাওয়ার সময় পেছনের চাকার ধাক্কায় উর্মি মাটিতে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তার মুখে পিস্ট করে গাড়িটি দ্রুত চলে যায়। পথচারীরা এগিয়ে এসে তাকে লোপসোয়ানা রেস্টুরেন্টে সামনে নিয়ে আসে। অনবরত রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুটা স্বাস্থ্যবান হওয়ায় সে উঠে দাঁড়াতে পারেনি।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাওয়ালা মো. মনির চট্টলার খবরকে বলেন, নেভাল টু সড়কের মুখে আসার পর গাড়িটি দেখে বেশ কয়েকজন মানুষ থামানোর জন্য হাতের ইশারায় দিয়েছিল। কিন্তু গাড়িটি ইশারা দেখেও গতি থামায়নি। মেয়েটিকে ধাক্কায় দিলে সে রাস্তায় পড়ে যায়।

তিনি আরও বলে, জেটির কারণে প্রতিদিন এখানে ভারী লরি চলাচল করে। কিন্তু কোনা পরিকল্পনা ছাড়াই সড়কের মুখটি তৈরি করা হয়েছে। এত সংকীর্ণ সড়কে বিশাল আকৃতির লরি চলাচল করলে দুর্ঘটনা কীভাবে কমবে।

একদিন গিয়েই সে মারা গেল

খাদিজা নগরের ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী এই শিক্ষার্থী বন্ধু মহলে ‘মিশুক’ হিসেবে পরিচিত। তার অকাল চলে যাওয়ায় বিষাদ ভর করেছে সহপাঠি ও বন্ধুদের মাঝে। কলেজের গেইটের মুখে সাঁটানো হয়েছে উর্মির শোকের ব্যানার।

এক শিক্ষার্থীকে ব্যানার দেখিয়ে উর্মির কথা জিজ্ঞেস করতেই চুপ হয়ে যান। তার সাথে কথা বলতেই এগিয়ে আসেও আর কয়েকজন শিক্ষার্থী। সবার চোখ-মুখে এক নিরবে খেলা করছে আর্তনাদ।

তারা জানান, উর্মি অত্যন্ত মেধাবী ও ভালো ছিল। সবার সাথে মিশতো। কারো সাথে কোনো দিন খারাপ আচরণ করেনি। ক্লাস শেষে বন্ধুরা আড্ডা আর ঘুরতে গেলেও, সে ছিল ব্যতিক্রম। সব ক্লাস শেষে বাসায় চলে যেতো। ক্লাস আর বাসা ছাড়া কোথাও যেতো না। গতকাল তার ঘুরতে ইচ্ছে করেছিল। আমরা প্রায় সেখানে ঘুরতে যাই, সে একদিন গিয়ে গাড়ির চাপায় মারা গেল। তার মৃত্যু মনে নিতে না পেরে সহপাঠিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে দেখা করেছে।

উর্মির নিথর দেহ ফিরল কুমিল্লায়

নগরের পূর্ব মাদারবাড়ির এফ. জি ভিলা নামে একটি ভবনের ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া থাকতো তারা। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। কুমিল্লার চৌদ্দগামে দাফনের জন্য তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ওই ভবনের এক প্রহরী চট্টলার খবরকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় দাফনের জন্য লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছে। বাসায় কেউ নেই, তালা মারা।

ঘাতক চালককে ধরতে অভিযানে পুলিশ

উর্মিকে চাপা দেওয়া লরিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে লরিতে ইস্পাত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ কোম্পানির মালামাল ছিল। ঘটনার পর পুলিশ গাড়িটি জব্দ করলেও ঘাতক চালক শাহেব উল্লাহ প্রকাশ সাহাব উদ্দীনকে (২৬) পলাতক। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামে। সে মো. মোস্তফার ছেলে।

তাকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানালেন সদরঘাট থানার উপপরিদের্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, গাড়ির মালিকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে চালককে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। আশা করছি অতিদ্রত সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

আরকে/নচ

আরও পড়ুন: কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ হারালেন কলেজ শিক্ষার্থী

এই বিভাগের আরও খবর