chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

এলপিজি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

প্রতি সিলিন্ডারে দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির মুখে বিপর্যস্ত মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ। কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও বেড়েছে এলপিজি গ্যাসের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। হঠাৎ দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষকে বেকাদায় পড়তে হয়েছে।

দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধিসহ কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলপিজির গ্যাসের দাম বাড়তি। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) নগরের বেশ কিছু এলাকায় ভোক্তা পর্যায়ে বাড়তি দামে এলপিজি বিক্রি হয়েছে।

আগস্টের শেষ দিকে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি মূসকসহ ৯৯৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৩ টাকা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ক্রমে বেড়ে চলেছে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম। গত এক সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে তিন বারের বেশি এলপিজির দাম বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এলপিজি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
দাম বেড়ে যাওয়ায় হতাশ ক্রেতা। খুচরা দোকান থেকে এলপিজি গ্যাস ক্রয় করছেন এক ক্রেতা। ছবিটি নগরীর স্ট্র্যান্ড রোড, বাংলা বাজার এলাকা থেকে তোলা। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

গৃহস্থালিতে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা সর্বাধিক। গতকাল বুধবার (৬ অক্টোবর) রাতে রান্না করার সময় সিলিন্ডারের গ্যাস ফুরিয়ে যায়। সকালে জমানো টাকা নিয়ে ছেলেসহ গৃহিনী রোকসানা জাহান এসেছিলেন এলপিজি সিলিন্ডার নিতে। পনের দিন আগে বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের এলপিজি সিলিন্ডার কিনেছিলেন ১ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে। সেই সিলিন্ডারের মূল্য দোকানদার রোকসানার কাছ থেকে চাচ্ছেন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২২০ টাকা পর্যন্ত।

রোকসানা জাহানের সঙ্গে কথা হয় স্ট্র্যান্ড রোড বাংলাবাজার এলাকায়। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, প্রতি মাসে এলপিজি গ্যাস ভর্তির জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ রাখি। রাতে রান্নার সময় হঠাৎ করে দেখি গ্যাস শেষ। কিন্তু দোকানদার সিলিন্ডার প্রতি ১৫০ টাকা বেশি চাইছেন। কোনো কিছুর দাম কমতির দিকে নেই। দিন দিন দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি।

কেবল বসুন্ধরা ব্র্যান্ডই নয় ফ্রেশ, ওমেরা, বিনহাবিব, লাফস, ইউরোসহ অধিকাংশ ব্র্যান্ডের সিলিন্ডারের দাম বাড়তির দিকে। এর মধ্যে বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের চাহিদা ও গুণগত মানের কারণে সিলিন্ডার প্রতি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন ক্রেতারা। গত সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে এলপিজি গ্যাসের দাম ছিল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা। গত মাসেও এই দামে এলপিজি গ্যাস মিলেছে বাজারে।

বাংলাবাজারের পাইকারি দোকান আল মদিনা এন্টারপ্রাইজ থেকে দৈনিক নগরে ২৫০ থেকে ৩০০ বোতল এলপিজি গ্যাস খুচরা পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. ফারুক চট্টলার খবরকে বলেন, চলতি মাস থেকে পাইকারিতে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। গত বছরেও পাইকারিতে এলপিজি গ্যাস ৯০০ থেকে ৯২০ টাকার বেশি ছিল না। কোম্পানিগুলো থেকে আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে এখানে দাম বাড়ছে। এ ছাড়া বিশ্ব বাজারে গ্যাস প্রস্তুতির কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে।

তবে বাড়তি দামে বিক্রি হলেও লাভ কম বলে জানালেন অলি আহম্মদ স্টোরের কর্মচারী মো. নুর হোসেন। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, খুচরা পর্যায়ে একটি সিলিন্ডার বিক্রি করে ২০ থেকে ৩০ টাকার বেশি লাভ হয় না। এরপর দাম নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বাদানুবাদ করতে হয়। ১ হাজার ২০০ টাকার সিলিন্ডার ১ হাজার ৮০ টাকার বেশি দিতে চান না।

বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে এলপিজি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পায়তারা করছে বলে জানান কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নাজের আহমেদ। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে আমরা এলপিজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলে আসছি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি‘র) নির্ধারিত দাম না মেনেই অনৈতিকভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিশ্ববাজার থেকে কী দামে কেনা হচ্ছে, কী দামে ব্যবসায়ীরা বাজারে বিক্রি করছেন এই বিষয়গুলো তদারকির আওতায় আনত হবে। অন্যতায় ক্রেতাদের লোকসান গুনতে হবে।

ভোক্তাদের অভিযোগ পেলে বাজারে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপসহকারি পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে প্রায় সময় আমরা অভিযান চালিয়ে আসছি। ভোক্তাদের সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অভিযানে যাব। বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর