chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বিশ্বঅলি শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী

বিশ্বঅলি শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পেয়ারা হাবিব রাহমাতুল্লিল আলামীন, শাফিয়াল মুযনাবিন, হযরত আহমদ মোজতবা মোহাম্মদ মোস্তফা (দঃ) এর নবুয়ত সমাপ্তির পর বেলায়তী ধারার ধারাবাহিকতায় এই বিশ্বজগতে রাহমাতুল্লিল আলামীন এর শ্রেষ্ঠতম প্রতিনিধি বেলায়তের উত্তরসূরি গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) কেবলা কাবার বেলায়তের বাগানের উজ্জ্বল সূর্য, বিশ্ব ত্রাণকর্তৃত্ব সম্পন্ন মহান মর্যাদাবান দুই অলি আল্লাহ গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এবং বিল বেরাসত গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) এর পবিত্র রক্তধারার মিলনে ২৫ ডিসেম্বর ১৯২৮ ইং , ১০ পৌষ ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ , ১২ রজব ১৩৪৭ হিজরি মঙ্গলবার সুবেহ সাদেকের সময় বিশ্বঅলি শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবা এই ধরার বুকে তশরিফ আনলেন, যেদিন হযরত ঈসা রুহুল্লাহ্ (আঃ) এর আগমন।

পিতা মাইজভাণ্ডারী দর্শনের স্বরূপ উন্মোচক, সুলতানুল আউলিয়া অছি-এ-গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এবং মাতা গাউসুল আজম বিল বেরাসত হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) এর দ্বিতীয় কন্যা শাহজাদী সৈয়দা সাজেদা খাতুন । জন্মের সপ্তম দিবসে নবজাতকের নাম রাখা ও আকিকা সম্পন্ন হয় । শিশুর নাম রাখা হয় সৈয়দ বদিউর রহমান । উক্ত অনুষ্ঠানের পর পিতা হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (কঃ) কে হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী (কঃ) রূহানী নির্দেশে জানান শিশুর নাম জিয়াউল হক ‘ রাখার জন্য । পিতা পুনরায় দু’টা গরু জবেহ করে নাম রাখেন সৈয়দ জিয়াউল হক।

জিয়াউল ‘ শব্দের অর্থ আলো , ‘ হক ‘ শব্দের অর্থ আল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহর আলো । একুশ দিনে শিশু ‘ জিয়াউল ‘ মৃতত্কায় শ্বাস – প্রশ্বাস বন্ধ কোন সাড়া শব্দ নেই । তাঁর মাতা ছেলের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েন । এমন সময় শিশুর বড় নানী সৈয়দা রাবেয়া খাতুন ( মীর খাতুনের মা ) নিরুপায় হয়ে হযরত বাবা ভাণ্ডারী ( কঃ ) ‘ র নিকট গেলেন এবং শিশু জিয়াউল হকের জন্য আকুতি মিনতি করতে লাগলেন । বাবা ভাণ্ডারী কেবলা কাবা তাঁর পবিত্র হস্ত মোবারক হতে দুই তিন ফোঁটা পানি শিশুর মুখে দিতেই শিশু চোখ মেলে তাকালেন , যেমনটি হযরত মওলা আলী ( রাঃ ) এর জন্মের পর ঘটেছিল । হযরত মওলা আলী ( রাঃ ) ধরাতে তশরিফ আনলেন পবিত্র কাবা শরীফে । ওনার আম্মাজান ছজিদারত অবস্থায় হযরত আলী ( রাঃ ) ধরাতে তশরিফ এনেছেন। অন্যান্য মা – বোনেরা সস্তান প্রসবকালে সাধারণত অপরিচ্ছন্ন , অপরিষ্কার ও নাপাক হয়ে যান । কিন্তু হযরত আলী ( রাঃ ) এর মায়ের ক্ষেত্রে অপবিত্রতা দূরের কথা , এমনকি কোন রক্তাদিও নেই ।

হযরত আলী ( রাঃ ) জন্মগ্রহন করেছেন এবং কাবা শরীফে ছজিদারত হয়ে রয়েছেন এই নবজাত শিশু । চোখ খুলছেন না । রাসূলে পাক ( দঃ ) পবিত্র কাবা শরীফে তশরিফ আনলেন এবং শিশু হযরত আলী ( রাঃ ) কে কোলে তুলে নিলেন । রাসুলে পাক ( দঃ ) এর পবিত্র চেহারা এ আনোয়ারের দিকে তাকিয়েই হযরত আলী ( রাঃ ) চোখ খুললেন । হযরত আলী ( রাঃ ) যেমন রাসূলে পাক ( দঃ ) পবিত্র চেহারা – এ – আনোয়ারের দিকে তাকিয়ে চোখ খুললেন , তেমনি ভাবে বিশ্বঅলি শাহানশাহ হক ভাণ্ডারী কেবলা কাবা সর্বপ্রথম চোখ খুলে বাবা ভাণ্ডারী কেবলা কাবার পবিত্র চেহারা – এ – আনোয়ার দরশন করেন , যাঁকে হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবা ‘ জামালে মোস্তফা ( অর্থাৎ নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা ( দঃ ) এর সদৃশ অবয়ব ) সম্বোধন করতেন । সেই ‘ জামালে মোস্তফা হযরত বাবা ভাণ্ডারী কেবলা কাবার চেহারা – এ আনোয়ার দরশন করলেন শিশু জিয়াউল ‘ । দিন যায় , মাস যায় , যায় বছর । শৈশবে প্রথম পাঠ পিতা অছি – এ – গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী ( কঃ ) এর মুখে মুখে পাঠ করলেন “ রাব্বি জিদুনী এলমা ” অর্থাৎ হে প্রভু আমাকে জ্ঞান দাও ‘ ।

গৃহ শিক্ষক মৌলভী মোজাম্মেল হক ছাহেবের নিকট শুরু হয় ধর্মীয় কালাম ও বর্ণ শিক্ষা । প্রথমে তিনি ভর্তি হন অধুনালুপ্ত মাইজভাণ্ডার আহমদিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায় । পিতা – মাতার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এখানে তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন । ১৯৪১ সালে তিনি তাঁর বড় ভগ্নিপতি ফটিকছড়ি করোনেশন হাইস্কুল এর সহকারী প্রধান শিক্ষক মৌলভী মোজাহেরুল হক ছাহেবের সাথে ফটিকছড়ি চলে যান । সেখানে সংলগ্ন প্রাইমারী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে হোস্টেলে থাকেন । হঠাৎ এক বছর পর ভগ্নিপতি ইন্তেকাল করায় বাড়ি ফিরে তিনি নানুপুর আবু ছোবহান উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন । উক্ত স্কুল হতে অষ্টম শ্রেণি পাস করেন ।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং ১৯৪৮ সালে সেখান থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৫১ সালে তিনি চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ হতে আই – এ পাস করেন । ১৯৫৩ সালে কানুনগো পাড়া কলেজে বি – এ টেষ্ট পরীক্ষার তৃতীয় দিনে খাতাটা জমা দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে নিজ বাড়ি মাইজভাণ্ডার শরীফ চলে আসেন এবং পদ্ধতিগত শিক্ষাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নানাজান হযরত বাবা ভাঙারী কেবলা কাবার আধ্যাত্মিক সু – নজরে অনন্ত সত্যকে জানার জন্য অগ্রসর হয়ে কঠোর রেয়াজত সাধনায় রত থাকেন । কখনো খাদ্য পানীয় ছাড়া , কখনো মাঘের কনকনে শীতে , আবার কখনো প্রখর সূর্যের তীব্র আলোর দিকে তাকিয়ে আল্লাহর সন্ধানে।

এমতাবস্থায় পিতা – মাতা সকলেই সন্তানের জন্য কাতর হয়ে পড়লেন । তখন হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী ( কঃ ) তাঁর অন্যতম খলিফা খাদেম নুরুচ্ছাফা ( রহঃ ) কে রূহানী নির্দেশে জানান “ আপনি আমার মিয়াকে ( অছি-এ গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী ) বলুন তিনি পেরেশান কেন ? আমি প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করছি ( অর্থাৎ জিয়াউল হককে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বাতি জ্বালাচ্ছি ) , আপনি তাহাকে জানিয়ে দিন জয়া হক আমি সাধনার চূড়ান্ত পর্যায়ে ২৩ জানুয়ারী ১৯৬৬ সাল , ৯ মাঘ ১৩৭৩ বঙ্গা হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবার রূহানী নির্দেশ পিতা অছি-এ-গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বিশাল সমাবেশের আয়োজন করলেন । উল্লেখ্য যে , ২ রা মাঘ ১৩৭৩ বঙ্গা , ১৬ ই জানুয়ারী ১৯৬৬ সাল হযরত গাউসুল আজন মাইজভাণ্ডারী তাঁর পিতাকে রূহানীতে নির্দেশ প্রদান করেন যে সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ( কঃ ) এর আমানত তাঁকে অর্পণ করার জন্য । হয়রত অছি-এ-গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী কেবলা কাবা গাউসিয়া আহমদিয়া মনজিলের খেদমতগার মাওলানা মাহফুজুল করিম ছাহেবকে নির্দেশ দিলেন শাহানশাহ্ বাবাজানকে নিয়ে আসার জন্য।

পিতা অছি এ-গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবা আহমদিয়া মনজিলে হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবার পবিত্র হুজরা শরীফে উপস্থিত হয়ে হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবার গদি শরীফে তশরিফ রাখলেন এবং রওজামুখী হয়ে বসলেন । শাহানশাহ বাবাজান তাঁর পিতা সুলতানুল আউলিয়া অছি-এ-গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবার আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হলেন। গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী ( 1 ) র পশ্চিত্র রওজা শরীফের তিঘরে রক্ষিত ‘ খয়েরী রঙ এবং হলুন রঙ এর দুটি চাদর আনা হলো । ‘ হলুদ ‘ রঙের চাদরটি অছি – এ – গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী ( কঃ ) পরিধান করলেন এবং ‘ খয়েরী ’ রঙের চাদরটি শাহানশাহ হক ভাণ্ডারী কেবলা কাবাকে পরিধান করতে দিয়ে বললেন গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবার পবিত্র আমানত যাহা আমার হেফাজতে ছিল গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবার নির্দেশক্রমে আপনাকে অর্পন করলাম । শাহানশাহ হক ভাণ্ডারী কেবলা কাবা উত্তর করলেন ‘ আলহামদুলিল্লাহ্ ‘ । এই আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে হয়তের পবিত্র রূহানী আমানত অর্পণ করা হয় । পূর্বে উল্লেখিত মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশ্ব ত্রানকর্তৃত্ব সম্পন্ন দুই মহান মাহবুব অলির পবিত্র রক্তিয় ধারার সম্মিলনে এবং নজর – এ – করমে লালিত পালিত হয়ে শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবা বিশ্বঅলির মসনদে অধিষ্ঠিত হলেন। পবিত্র কোরানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় “ মারাজাল বাহরাইন ” অর্থাৎ দুই সাগরের মিলনস্থল ।

বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ( কঃ ) কালাম করেছেন “ হে বিশ্ববাসী আমার দিকে তাকাও , আমাকে বুঝতে হলে কোরআন দেখ । ” জাতি ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আধ্যাত্মিক পবিত্রতার তাগিদ দিয়ে বলেছেন , “ নিজের ভেতরে দৃষ্টি দাও , বহির্জগতের চেয়েও অপরূপ সুন্দর দৃশ্যাবলি দেখতে পাবে। ” জগত জীবনের অশেষ কল্যাণ সাধন করে ১৩ অক্টোবর ১৯৮৮ সাল , ২৬ আশ্বিন ১৩৯৫ বঙ্গাব্দ , পহেলা রবিউল আউয়াল বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ( কঃ ) কেবলা কাবা স্রষ্টা – সৃষ্টির চিরাচরিত নিয়মানুযারী মহান আল্লাহ মহামিলনে জগতের আড়াল হন। তাঁরই ধারাবাহিকতা বহন করে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফস্থ গাউসিয়া হক মনজিলের সাজ্জাদানশীন বিশ্বঅলির স্থলাভিষিক্ত উত্তরসূরি রাহবারে আলম হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী মাঃজিঃআঃ ( মওলা হুজুর কেবলা কাবা , যার সম্পর্কে বিশ্বঅলি নিজেই কালাম ফরমান- “ আমার হাসান মিয়া মস্ত বড় অলি , জগতের কল্যানের জন্য এসেছেন , সাধ্যমত সমীহ – সম্মান করবেন।”

বিশ্বঅলির এই পবিত্র কালামের বাস্তবতায় মানব মুক্তির নিদর্শন রাহবারে আলম রহমতে আলম মওলা হুজুর মাইজভাণ্ডারী কেবলা কাবার পাক কদমে প্রতিনিয়ত দলে দলে মানুষ দয়া প্রত্যাশায় প্রাণের আকুতিতে বিশ্বঅলির মহান দরবারে ছুটে আসছেন । এছাড়াও রাহবারে আলম মওলা হুজুর মাইজভাণ্ডারীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় শাহানশাহ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্ট মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি এবং সকল শাখা কমিটি সমূহের মধ্য দিয়ে দুঃস্থ মানবতার কল্যাণে সারা দেশজুড়ে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছেন। ‘পাপির মুখে কি গাহিব জিয়া বাবার শান , বাবা সৃষ্টিকুলের মুক্তি তরে খোদা তালার দান। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পরম নেয়ামত বিশ্ব অলির কৃপা বারি সকলের উপর বর্ষিত হোক। আমিন।

লেখক- মোহাম্মদ শাহেদ আলী চৌধুরী

এমআই/চখ

এই বিভাগের আরও খবর