chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

দুয়ারে কড়া নাড়ছে দূর্গাপূজা, চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকৃতিতে বর্ষার প্রশান্তি শেষে যখন সাদা তুলোর মেঘদল আকাশে ভেসে বেড়ায়, রাতে ঝড়ে মৃদু শিশির, শরতের আগমনে অরুণ রাঙা দৃপ্ত চরণে সূচনা হয় দেবীর। মর্ত্যালোকে দেবীর আমন্ত্রণে পূজাপণ্ডপে শাঁখ-কাঁসার শব্দে, উলুধ্বনি আর চণ্ডীপাঠের মধ্যে দিয়ে আরাধনা শুরু হয়।

সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে দেবী দূর্গা হচ্ছে শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক। প্রতিবছর অসুরের বিনাশ করতে মা দেবী দূর্গা এই ধরাধমে আবির্ভূত হন। সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার ও গ্লানি দূর করার জন্য এই পূজার আয়োজনের কমতি থাকে না। বছর ঘুরে দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করেছে শারদীয় দূর্গাপূজার ঢামাডোল।

দেবী দূর্গাকে বরণ করে নিতে দিন-রাত প্রতিমা তৈরিতে কাজ করছেন মৃৎশিল্পীরা। মাটির কাজ শেষে শিল্পীদের রঙতুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠছে দেবীর রুপ। অন্যদিকে মন্দিরে আলোকসজ্জা ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটছে শিল্পীদের। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। ঘরে ঘরে গৃহিনীরা আনন্দ উৎসব ও পূজার নানান আনুষ্ঠিকতায় ব্যস্ত।

আগামী ১০ অক্টোবর শুরু হবে পূজা। নগরের সদরঘাট মৃৎশিল্পী তপন চন্দ্র পাল পূজাপণ্ডপে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমা তৈরিতে এখানে ফরিদপুর থেকে আনা হয়েছে ছয়জন কারিগরকে। নগর ছাড়াও বোয়ালখালী, রাউজান, আনোয়ারা, পটিয়া, ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে প্রতিমার বায়না আসছে এখানে। এরই মধ্যে বেশ কিছু স্থানে চলে গেছে তৈরি করা প্রতিমার সেট। পূজামণ্ডপে ভেতরে শোভা পাচ্ছে ছোট-বড় শতাধিক প্রতিমা। বাঁশ, কাঠ আর কাদা মাটির পর রঙ তুলির আঁচড়ের প্রতীমাগুলো দেখতে ভিড় করছেন সনাতন ধর্মের লোকজন।

এই পূজাপণ্ডপে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে পরিচালনা করে আসছেন তপল পাল। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, কর্ণফুলী নদী থেকে প্রতিমার মাটি আনা হচ্ছে। একটি প্রতিমা সেট তৈরিতে এক সপ্তাহ সময় লাগছে। আগে একটি প্রতিমা তৈরিতে খরচ হতো ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সেটি বিক্র হতো ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এখন ৩০ থেকে ৩২ হাজার টা দরে প্রতিমার সেট বিক্রি হচ্ছে। ঘর ভাড়া, কারিগরদের পারিশ্রামিক মিলিয়ে প্রতি সেটে প্রতিমায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার বেশি লাভ হয় না।

দুয়ারে কড়া নাড়ছে দূর্গাপূজা, চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা
ঠাকুর দেখতে গিয়ে প্রতিমা, মণ্ডপসজ্জা সবের দিকে নজর দিলেও পেছনের রঙ-তুলিতে সাজানো চালচিত্র চোখ এড়িয়ে যায়। নগরের গোসাইলডাঙ্গা সার্বজনীন শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে শিল্পীর তুলির টানে মণ্ডপে ভিন্ন আদলে তৈরি করা হচ্ছে চালচিত্র। পুজো পা দিল এবার ১২৭ বছরে। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

তপল পাল আরও বলেন, লকডাউনের পর থেকেই বাঁশ, কাঠ, রঙ সব কিছুর দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে মৃৎশিল্পীদের কাজ বন্ধ ছিল। গত বছরেও তেমন কাজ ছিল না। খরচ বেশি, কিন্তু দাম কম। কয়েকদিনে ২৫ সেট প্রতিমা তৈরির ফরমাশ নিয়েছি। যারা বায়না করে আসছেন তারা অনুরোধ করে বলছে পূজা আসছে, প্রতিমা তৈরি করতে হবে। আগামী পাঁচ বছরে প্রতীমার সেট বিক্রিতে লোকসান গুনতে হবেও বলেও জানান তিনি।

নগরের শত বছরের পুরানো আগ্রাবাদ গোসাইলডাঙ্গা সার্বজনীন শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির। অন্যান্য বছরে এই মন্দিরের তিন মাস ধরে পূজার আনুষ্ঠিকতা চলে। নগরের সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ এখানে তৈরী হয়। তবে করোনা মহামারীর কারণে গেল দু বছরে ভাটা পড়েছে আয়োজনে। এবার নিয়ে ১২৭ বারের মতো দূগাপূর্জা আয়োজন করবে মন্দরটি। মন্দিরের ভেতরে প্রতিমার তৈরির পাশাপাশি চলছে পূজাপণ্ডপের আলোকসজ্জার কাজ।

এবার ককসিটের বিপরীতে প্রিন্টিংয়ে চালচিত্র ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। ওই মন্দিরে কথা হয় স্টেজের শিল্পী জয় দাশের সঙ্গে। তিনি একই সঙ্গে মন্দিরের একতা গোষ্ঠী পূজা উদযাপন পরিষদের সহসাংস্কৃতিকের দায়িত্ব পালন করছেন। জানতে চাইলে বলেন, প্রতি বছর মতো গোসাইলডাঙ্গায় বৃহৎ আকারে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এক মাস ধরে কাজ করার পরও চাপ কমছে না।

নগরের পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল চট্টলার খবরকে বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ইতিমধ্যে পূজাপণ্ডের নিরাপত্তা বিচেনায় এনে পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এবার নগরে ২৭৭ টি পূজাপণ্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। গত বছরের চেয়ে ছয়টি পূজাপণ্ডপ বেড়েছে। ১৫ অক্টোবর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বির্সজনের মধ্যে দিয়ে পূজার আনুষ্ঠিকতা শেষ হবে।

আরকে/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর