chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

রোহিঙ্গা নেতা হত্যার ঘটনায় উখিয়া থানায় মামলা,আসামি অজ্ঞাত

ডেস্ক নিউজ: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় উখিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে।

নিজ জনগোষ্ঠীর অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহকে দাফনের পর বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ।

এ বিষয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, “রোহিঙ্গা নেতা মুহিববুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ১২৬।

তিনি জানান, পুলিশ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে, এখন পর্যন্ত এই মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বা শিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বজাতির গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহর দাফন শেষে রাতে উখিয়া থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এমনকি অজ্ঞাত আসামিদের কোন সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়নি।

নিহত মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ জানিয়েছিলেন, গত বুধবার রাতে এশার নামাজের পর মুহিবুল্লাহর অফিসে কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে আলাপচারিতাকালে হঠাৎ ১০-১২ জন রোহিঙ্গা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মুহিব্বুল্লাহকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় হাবিবুল্লাহ একটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছেন।

উখিয়া থানা পুলিশ জানায়, গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-১ ইস্ট-এর ব্লক-ডি ৮-এ মুহিবুল্লাহর নিজ অফিসে পাঁচটি গুলি করে। এ সময় তিনটি গুলি তাঁর বুকে লাগে। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

খবর পেয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যেরা তাঁকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে উখিয়া থানা পুলিশ রাত ১টার দিকে তাঁর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসেন।

ময়নাতদন্তের পর মুহিবুল্লাহর মরদেহ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে বিকেলেই কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে জানাজার পর তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় সেখানে হাজার হাজার রোহিঙ্গার ঢল নামে।

নিহত মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলার জন্য তিনি জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছিলেন। রোহিঙ্গাদের অধিকার দিয়ে তিনি সব সময় বিদেশি বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা সংগঠন নিয়ে কাজ করা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটি রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মংডু টাউনসিপের সিকদার পাড়া প্রাম থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। আশ্রয় নেন কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে।

গত ২০১৯ সালে মাসের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহাসমাবেশ করে রোহিঙ্গারা।

এ সমাবেশে পাচঁ লাখ রোহিঙ্গা জড়ো হন। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে গঠিত এআরএসপিএইচ চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ এ সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন থেকে তিনি আলোচনায় উঠে আসেন।

২০১৯ সালে ১৭ জুলাই ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার বিশ্বের ১৭টি দেশের ২৭ জন প্রতিনিধি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুহিবুল্লাহ।

এই বিভাগের আরও খবর