chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ধানের বাম্পার ফলনেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাতাসে খেলা করছে কাঁচা-পাকা ধান। খেতের কর্দমাক্ত পানির পাশে চুপটি মেরে বসে আছে সাদা বক। কারো পায়ের শব্দ পেলেই ছুটে বেড়ায় মাঠের এপাশ থেকে ওপাশে। তপ্ত গরমেও গুন-গুন শব্দে কৃষকরা কেটে চলেছেন পাকা ধান। সেই ধান মাড়াইয়ের জন্য খেতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেশিন।

নগরের উত্তর হালিশহরের চৌছালা বাজারের সবুজ ধান খেতগুলো এখন সোনালি রঙে রাঙিয়ে উঠেছে। প্রায় ৫০ একরের বেশ কিছু জমিতে গত জুলাই মাসে রোপা-আমন ধানের চাষ হয়েছে। চাহিদা মাথায় রেখে জমি অনুযায়ী ১০ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত চারা রোপণ করেছেন চাষিরা।

জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তরফ থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার এবং নিয়মিত তদারকির কারণে ফলন ভালো হয়েছে। ধান কাটতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে শ্রমিক আসছেন এখানে। পাকা ধান খেতের পাশে আইলে রোপণ করা হচ্ছে শিমসহ বিভিন্ন সবজির বীজ। কয়েকজন শ্রমিককে দেখা গেলো টমেটো চাষের জন্য সার প্রস্তুত করতে।

মাঠজুড়ে পাকা ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মনে আনন্দের বদলে ঝরছে হতাশা ও ক্ষোভ। বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বগতির পরও কাঙ্ক্ষিত মূল্য না মেলায় এবার লোকসান গুনতে হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। তবে কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা বলছেন, আউশ জাতীয় সব ধরনের ধানের দাম বেশ ভালো।

চৌছালা গ্রামের পাঁচঘর পাড়ার বাসিন্দা মাহমদুল হক আট খানি জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করেছেন। আনোয়ারা উপজেলা থেকে আটজন শ্রমিককে এনেছেন পাকা ধান কাটতে। একখানি জমির ধান কাটতে এই শ্রমিকদের দিতে হবে ৪ হাজার ৫০০ টাকা।

মাহমুদুল হক চট্টলার খবরকে বলেন, উঁচু জমি হওয়ায় বছরে একবারের বেশি ধান চাষ করা যায় না। বছরের অন্যান্য সময়ে অন্যান্য সবজি চাষ করতে হয়। গতকাল ধান কেনার জন্য কয়েকজন পার্টি এসে বলছে সরকার অতিরিক্ত চাল মজুদ করেছে। ধানের দাম পড়ে গেছে।

তিনি বলেন, গত বছর বস্তা প্রতি ধানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাভ হয়েছে। কেজিতে ২৩ টাকা করে পড়েছিল। কিন্তু এবার মিল মালিকরা বলছেন কেজিতে ১৬ থেকে ১৮ টাকার বেশি দিতে পারবে না। ধান রোপণ থেকে শুরু, কাটা ও মাড়াইয়ের পর কোনো লাভ থাকবে না। এভাবে চলতে থাকলে কৃষকরা ধান চাষ বন্ধ করে দিবে।

লোকসান এড়াতে আব্দুল মোনাফ নামে আরেক কৃষক আড়াই খানি জমিতে রোপা-আমন চাষ করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে সরকারিভাবে ধান কেনায় কিছুটা লাভের মুখ দেখেছি। আড়াই খানি জমিতে ২৫০০ কেজি ধান চাষ হয়েছে। কিন্তু মিল মালিকরা ২০ টাকার বেশি দিবে না। কেজিতে ২৫ থেকে ২৭ টাকা হলে আমাদের লাভ হতো।

বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
ফসলের মাঠজুড়ে সোনালী ধানের সমারোহ। ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। নতুন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কিষান-কিষাণীরা। ছবিটি আজ সকালে নগরীর উত্তর হালিশহর চৌচালা থেকে তোলা। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

মোনাফ বলেন, বাজারে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় আমাদের নাজিরশাইল ও মিনিকেট সিদ্ধ চাল কিনতে হচ্ছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দাম নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে তামাশা করা হয়। খেয়াল খুশি মতো দাম দেয়। এখন কোনো কৃষক ধান বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা করে না। ধানের খড় বিক্রি করে কিছুটা লাভ হচ্ছে।

খানি প্রতি ধানের খড় ৫ হাজার টাকা বিক্রি হয় বলে জানান এই কৃষক। গরুসহ বেশ কিছু প্রাণীর খাদ্য তালিকায় রয়েছে ধানের খড়ের কদর।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আখতারুজ্জামান চট্টলার খবরকে বলেন, সরকারিভাবে ধানের দাম বেশ ভালো। চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায় ৩৬ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। দাম না পেলে তো কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হতেন না। তবে শহরের ছোট একটি অংশের সঙ্গে উপজেলাগুলোর তথ্য এক করলে চলবে না। সেখানে কী পরিমাণ চাষ হচ্ছে, ভোক্তার চাহিদা সব কিছু মিলে ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর