chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

জনবল সংকটেও মিলছে ৮০ শতাংশ বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা 

চমেক হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুমাইয়া রহমান (ছদ্মনাম)। তিন বছর আগে সংসার শুরু করেন এক বেরসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সঙ্গে। দাম্পত্য জীবন আর শিক্ষকতা নিয়ে বেশ ভালোই চলছিল সুমাইয়ার। তবে এক সন্তানের আক্ষেপ প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফিরছিলেন এই শিক্ষককে। সন্তানের আশায় অভিভাবকদের উৎকণ্ঠায় তিক্ততা নেমে আসে সুমাইয়া ঘরে। মানসিক অবসাদ পেয়ে বসে তার দৈনন্দিন জীবনে।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ফার্টিলিটি ইউনিটের সামনে দেখা মেলে এই দম্পতিকে। দুরুদুর বুকে শত চিন্তার চাপ খেলা করছে তার চোখে-মুখে। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, তিন বছরের সংসার জীবনে এক সন্তানের জন্য কম কষ্ট করিনি। স্কুলে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সময় সন্তানের অভাব বোধ করি। স্বামী থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজনের কটু কথা শুনতে হয়েছে। এক সহকর্মীর পরামর্শের এখানে চিকিৎসার জন্য এসেছি।

সুমাইয়ার মতো এমন অনেক দম্পত্তি এসেছেন চমেকের ৮০ নম্বর ফার্টিলিটি ওয়ার্ডে সেবার আশায়। লোকবল সংকটের সঙ্গে অবকোঠামোগত সরঞ্জামের অভাবের মধ্যেও এই ওয়ার্ডের চিকিৎসা সেবা দ্যুতি ছড়িয়েছে সেবা প্রার্থীদের মাঝে। ঢাকার পর এই হাসপাতালের ফার্টিলিটি ওয়ার্ডে ৮০ শতাংশ বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার সেবা মিলছে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভোগান্তি ছাড়া সেবা মেলায় খুশি রোগী ও স্বজনরা।

ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ফার্টিলিটি ওয়ার্ড চালু করে চমেক কর্তৃপক্ষ। আজ পর্যন্ত ২৮৯ জন নতুন রোগী, ১৯৮ জন পুরনো রোগী ছাড়াও ২২০ জন রোগী ট্রান্সভ্যাজইনাল (টিভিএস) পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছেন। বর্তমানে আউটডোরে রোগী দেখা, ইনডোরে রোগীর চিকিৎসা ছাড়াও রয়েছে কাউন্সিলিং এর সুযোগ। এ চিকিৎসায় হরমোণের সঙ্গে ডিম্বাশয় টেস্ট করাতে রোগীদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এখানে ট্রান্সভ্যাজইনাল (টিভিএস) বিনামূল্যে পরীক্ষা করাচ্ছেন চমেক।

এছাড়া বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার জন্য টেস্টেটিউব বেবি হচ্ছে সর্বজনস্বীকৃত একটি পদ্ধতি। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আইভিএফ করতে হয়। যাদের বীর্য কম আইটিউব ব্লক থাকে কিংবা বিভিন্ন পক্রিয়ার অনুসরণ করে কাজ করেনা তাদের আইভিএফে যেতে হয়। কিন্তু চমেক হাসপাতালে এটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইনফার্টিলিটি বিভাগের প্রধান ও রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ডোক্রাইনালজি অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিষয়ে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী ডা. তাসলিমা বেগম বলেন, একটি ওয়ার্ড চালুর জন্য সরকারিভাবে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু রোগীর চাহিদা ও সামাজিক প্রচারণাকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা স্থানীয়ভাবে এটির কাজ শুরু করি। এর আগে গাইনি ওয়ার্ডের জেনারেল গাইনি চিকিৎসকরা বন্ধ্যাত্ব রোগীদের দেখতেন। কিন্তু সেখানে ইনফার্টিলাইজার বিশেষজ্ঞ ছিল না।

তিনি আরও বলেন, এখানে ব্যবহার করা ট্রান্সভ্যাজইনাল (টিভিএস) যন্ত্রটি একজন অনুদান দিয়েছেন। আশার বিষয় গত সেপ্টেম্বরে এই বিভাগে একজন সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপকের পদ তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী, মেডিকেল সরঞ্জাম এবং বিশেষজ্ঞ আসলে পূর্নাঙ্গভাবে এটি চালু করা সম্ভব হবে।

বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় টেস্টটিউবে আগ্রহী দম্পত্তিদের প্রথম পছন্দ ভারত। প্রতি বছর বিশেষ করে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সেখানে পাড়ি জমান। অথচ ঢাকায় টেস্টটিউবে আগ্রহী রোগীদের সেবার সুযোগ রয়েছে।

এই ওয়ার্ডে সেবার বিশেষত্ব তুলে ধরে ডা. তাসলিমা বেগম আরও বলেন, সত্যিই আমাদের সেবা দিতে পেরে ভালো লাগছে। দিন দিন রোগী বাড়ছে। একেক রোগীর প্রসঙ্গ, সমস্যা আলাদা। সামাজিক পেক্ষাপটে সন্তান প্রসব করতে না পারার পেছনে নারীদের দায়ি করেন। কিন্তু এখানে আসা প্রতিটি রোগীর সাথে স্বামীকেও আসতে হয়। অনেক পরিবারের ডিসিশন ম্যাকার শ্বশুর-শ্বাশুড়িওকে ডাকা হয়। রোগীকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে ড্রায়াগামে পুরো বিষয়টি তুলে ধরে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটা প্রাইভেট কোনো হসপিটালে পাবেন না।

আরকে/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর