chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

নির্বাচন ঘিরে সরগরম ছাপাখানার ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক: খটখট শব্দে বেরিয়ে আসছে একেকটি পোস্টার। সেই পোস্টার চোখ মেলে পরখ করে নিচ্ছেন এক মুদ্রণ শ্রমিক। হাতে আর মুখে মুদ্রণের কালির দাগ। আরেক শ্রমিককে দেখা গেল ফেস্টুন তৈরির কাগজ সাজানোর কাজ করছেন। এর পাশে সারি সারি ছাপাখানাগুলো থেকেও মুদ্রণ মেশিনের আওয়াজ ভেসে আসছে। দিস্তা দিস্তা কাগজ বিভিন্ন সাইজে, আঙিকে মুদ্রণের মেশিন থেকে বের হয়ে আসছে। এতে শোভা পাচ্ছে হরেক রকমের প্রিন্টার্সের তৈরী সরঞ্জাম।

কাজের ফাঁকে কথা হয় নুরজাহান প্রিন্টার্সের মুদ্রণকর্মী মো. আবু কাউসারের সঙ্গে। এই ছাপাখানায় কাউসার ছাড়াও আরও ছয় জন শ্রমিক দিনে ও রাতে কাজ করেন। গত দুদিন ধরে ছাপাখানাতে দুই জন কাউন্সিলর প্রার্থীর ৩০ হাজারে বেশি পোস্টার ছাপা হয়েছে। ফেস্টুন ছাপানো হয়েছে বিশ হাজারের কাছাকাছি। কাজের চাপ বেশি হওয়ায় রাতেও কাউসারদের কাজ করতে হচ্ছে।

কাউসার চট্টলার খবরকে বলেন, গত দুদিন ধরে কাজ পাচ্ছি। আজও পোস্টারের অর্ডার এসেছে। আগামী ১৫ দিন নির্বাচনী প্রচারণা সামগ্রী তৈরির কাজ করতে হবে। কেবল নুরজাহান প্রিন্টাসই নয়, নগরের আন্দরকিল্লার ছো্ট-বড় ছাপাখানায় ব্যস্ততার ধুম পড়েছে। মুদ্রণশ্রমিক, ছাপাখানার মালিক ও ক্রেতাদের আনোগোনায় ঝিমিয়ে পড়া ছাপাখা্নার ব্যবসা ফিরছে পুরেনো রুপে।

এর সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় রাত দিন পরিশ্রম করে কর্মঘণ্টা বৃদ্ধির ফলে একটু বাড়তি আয়ে খুশি শ্রমিকরা। প্রার্থীরা তাদের ছবি, প্রতীক সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙাতে দোকানে ভিড় করছেন। ছাপাখানার মালিক ও শ্রমিকরা জানালেন আগামী ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের নির্বাচন ঘিরে চাঙা ভাব বিরাজ করছে।

গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনের প্রতীক বরাদ্দের পরই কাজের চাপ কিছুটা বেড়েছে। এক ওয়ার্ডের নির্বাচন হলেও অধিক প্রার্থীর কারণে কাজের চাহিদাও বেশি। প্রার্থীরাও আসছেন পছন্দসই ডিজাইনে ব্যানার-ফেস্টুন ছাপাতে। এর আগেও ছাপাখানায় সদ্য অনুষ্ঠিত বোয়ালখালী পৌরসভা ও মহেশখালী পৌরসভা নির্বাচনের কাজ করেছেন।

আনন্দ প্রিন্টার্স অ্যান্ড কম্পিউটার দোকানের স্বত্তাধিকারী টিকলু চৌধুরী চট্টলার খবরকে বলেন, ইতিমধ্যে ৮ জন প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যানার তৈরির কাজ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে কেউ ২ হাজার, ৫ হাজারের মতো অর্ডার করেছেন। এর মধ্যে অনেক পরিচিত ও অপরিচিত প্রার্থী রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ ধরে নির্বাচনী কাজ পাব বলে মনে করছি। সে হিসেবে ছাপাখানায় মালিকরাও বাড়তি শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।

এদিকে ছাপাখানগুলোতে নির্বাচনী কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের আমেজ ফিরে এসেছে বলে জানালেন রাজধানী প্রিন্টার্সের মালিক মো. শরীফ। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, লকডাউনের সময় ছাপাখানা কার্যত বন্ধ ছিল। আগের বছরের চেয়ে বিক্রি অর্ধেক কমেছে। এখন ছোট-বড় সব ছাপাখানায় কাজের চাপ এবং শিডিউল বেড়েছে। অনেক সময় অধীক রাতে কাজ করে পরের দিন অর্ডার শেষ করতে হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অফিস ও আদালত খোলা থাকলে লকডাউনের ক্ষতি পুষিতে নেওয়ার আশা করছেন এই ব্যবসায়ী।

জানতে চাইলে আন্দরকিল্লা ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু হেলাল শাকিল বলেন, নির্বাচনী কাজের চাপ বাড়লেও পকৃত অর্থে ছাপাখানার ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে আরও সময় লাগবে। স্কুল-কলেজ খুললেও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো সেভাব হচ্ছে না। আগে যিনি ৫০০ বিয়ের কার্ড করতেন তিনি এখন ২০০ কিংবা ৩০০ এর বেশি করছে না। সার্বিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এক সময় একজন কাউন্সিলর ১ লাখ পোস্টার ছাপাতেন। তিনি এখন ২০ হাজারের বেশি ছাপান না। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ছাপাখানা ব্যবসা পুরোদমে আলোর মুখ দেখবে। একইসঙ্গে ছাপাখানা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রণোদনা চাইলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

আরকে/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর