chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সয়াবিন তেলের বাড়তি বরাদ্দের দাবি ভোক্তাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেশ কয়েকদিন ধরে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে অস্বাভাবিক দামে। আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বাড়তি খরচের গ্যাঁড়াকলে পড়ে পিষ্ট হচ্ছেন নিয়মিত। বাধ্য হয়ে খরচের লাগাত টানতে গিয়ে খোলাবাজারে টিসিবির ট্রাকের সামনে দ্বারস্থ হচ্ছেন নিম্ন ও খেটে খাওয়া মানুষ।

এদিকে টিসিবির খোলা বাজারে সয়াবিন তেলের বাড়তি বরাদ্দের দাবি এসেছে ভোক্তাদের কাছ থেকে। বিক্রির তালিকায় পেঁয়াজ যুক্ত হওয়ায় স্বস্তিও প্রকাশ করেছেন অনেকে।

ভোক্তারা বলছেন, নিত্যপয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সবচেয়ে বেশি। এক সময় জনপ্রতি ৫ লিটার সয়াবিন তেল দেওয়া হতো। কিন্তু এখন দুই লিটারের বেশি দেওয়া হচ্ছে না। তবে টিসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ সময়ে ভোক্তাদের সেবা নিশ্চিতে তেলের বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব নয়।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) নগরের জামালখান, টাইগারপাস ও দুই নম্বর গেইট এলাকায় টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে এসেছেন এমন কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। বৈরী আবহাওয়া মাথায় নিয়ে কাঙ্খিত পণ্য কিনতে মানুষকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

এদিন নগরের খুচরা বাজারে লিটার প্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫ লিটার সয়াবিন তেল ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এ দাম গিয়ে দাঁড়াবে ৭২৮ থেকে ৭৩০ টাকায়। আর খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির পেছনে খুচরা ব্যবসায়ীরা দুষছেন সরবরাহ সংকটকে।

নগরের আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা জেরিন হোসেন প্রায় সময় জামালখানে আসেন টিসিবির পণ্য কিনতে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে স্বল্প আয়ে পরিবার চালাতে হয় জেরিনকে। প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর তিনি চিনি ও সয়াবিন তেল কিনতে সক্ষম হন।

জেরিন চট্টলার খবরকে বলেন, আমাদের আয় কম। চাকরির ফাঁকে সময় করে এখানে আসি তেলসহ মসুর ডাল কিনতে। বাজারে সয়াবিন তেল ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এখানে ৫০ টাকা কম দিয়ে ১০০ টাকায় পাচ্ছি। কিন্তু এবার দুই লিটারের বেশি নিতে পারছি না। টিসিবির ট্রাক থেকে অনেকবার পাঁচ লিটার তেল কিনেছি। এখন সেই সুযোগ নেই।

নগরের টাইগার পাস এলাকায় গিয়েও দেখা গেছে, টিসিবির ট্রাক ঘিরে অপক্ষো করে আছেন ভোক্তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ এসেছেন সয়াবিন তেল কিনতে। ট্রাক থেকে পণ্য দেওয়ার সাথে যুক্ত কর্মচারীরাও জানালেন তেল না পেয়ে অনেক ক্রেতা ফেরত গিয়েছেন। বরাদ্দের বাইরে তাদের কিছু করার নেই বলে জানান।

বেরসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. নুরুল আবছার চট্টলার খবরকে বলেন, বর্তমানে বাজারে চাল, ডাল, চিনি থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম কয়েকবার বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তি। সামনে আরও বাড়বে। সাশ্রয়ের কথা বিবেচনা করে রোদ-বৃষ্টিতেও আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে হয়। তেলের পরিমাণ বাড়ানো গেলে সবারই সুবিধা হতো।

গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে খোলাবাজারে তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি করে আসছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। রোববার থেকে বিক্রির তালিকায় যুক্ত হয় পেঁয়াজ। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা, চিনি ও মসুর ডাল ৫৫ টাকা, সয়াবিন তেল লিটারে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে ৫ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সুযোগ থাকলেও ৯ সেপ্টেম্বর থেকে তা কমিয়ে দুই লিটার নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

নগরের প্রায় বেশ কয়েকটি স্থানে টিসিবি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে। প্রতি ট্রাকে ৩০০ লিটার তেল, চিনি ৫০০ কেজি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ ৪০০ কেজি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তবে সর্বোচ্চ ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে সয়াবিন তেলের বরাদ্দের বিষয়টি নাকচ করে দেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন আহমেদ।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, ৫ লিটার তেল দিলে আমরা কেবল একজনের কাছে পৌঁছাতে পারব। কিন্তু ২ লিটার করে দিলে অনেক মানুষের কাছে যেতে পারছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। আজকে এস আলম গ্রুপ থেকে তেল পাচ্ছি। আমরা টার্গেট করেছি স্থায়ীভাবে এটিকে দীর্ঘদিন চালু রাখতে। আমরা চেষ্টা করছি আরও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে।

এক প্রশ্নের উত্তরে জামাল উদ্দিন বলেন, সরবরাহ অনুযায়ী আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খোলাবাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলবে। এরপর এক সপ্তাহ বন্ধ রেখে আবারও পণ্য বিক্রি শুরু করবে টিসিবি।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর