chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অধিক তাপমাত্রার আর্দ্রতায় ভ্যাপসা গরম

নিজস্ব প্রতিবেদক: তাপপ্রবাহ বয়ে না গেলেও ভাদ্র মাসের শেষ সময়ে এসে বেশ তপ্ত দিন পার করছে নগরবাসী। হঠাৎ করে আকাশ কালো করে স্বস্তির বৃষ্টি এলেও, ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি অনুভূত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক তাপমাত্রার আর্দ্রতায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে বলে জানালেন আবহাওয়া অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই নগরে ছিল রোদের খরা উত্তাপ। দুপুরে নগরের কয়েকটি এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এই তাপমাত্রা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুপুর বাড়তে রোদের আমেজ ফিরে আসে। এদিন বিকেল চারটা পর্যন্ত চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রের্কড করা হয় ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কখনও এই তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে দাঁড়ায়।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারি আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল চট্টলার খবরকে বলেন, হঠাৎ করেই তাপমাত্রা বেড়েছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভাগীয় শহর ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও সিলেটে ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

অধিক তাপমাত্রার আর্দ্রতায় ভ্যাপসা গরম
প্রচন্ড গরমে নগরবাসীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তবে এ তাপদাহ দুরন্ত শিশুদের জন্য নিয়ে এসেছে আনন্দের খোরাকও। ডোবার শীতল জলে তারা মেতে উঠেছে জলকেলিতে। ছবিটি নগরীর আগ্রাবাদ ডেবা থেকে তোলা। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তা্পমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ২৪ দশমিক ৪ ডিগি সেলসিয়াস। এর মধ্যে খুলনায় সর্বোচ্চ ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। অথচ গত ২৪ ঘণ্টায় নগরের কোথাও বৃষ্টিপাত রের্কড হয়নি।

হঠাৎ গরম অনুভূত হওযার পেছনে জ্যেষ্ঠ এই আবহাওয়ারবিদ জানালেন, স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি তাপমাত্রা থাকায় গরম পড়েছে। এ সময়ে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কথা থাকলেও এখন ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। অনেক সময় তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। বিস্ত্রীর্ণ এলাকায় তাপপ্রবাহ বিরাজ না করলেও বৃষ্টিপাত কমে গেছে। সাগরে লঘুচাপটি নিম্নচাপে রুপ নেওয়ায় আকাশে মেঘ জমে আছে। বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা মেঘে আটকে থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। চট্টগ্রামে ঘণ্টায় বাতাসে ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার গতিবেগ রয়েছে। এই তাপমাত্রা্ ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটারে গেলে দমকা হাওয়ার বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমে আসতো। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরের দিকে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানান উজ্জ্বল কান্তি পাল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীল নিম্নচাপটি আরও উত্তরপশ্চিম দিক অগ্রসর হয়ে বর্তমানে উড়িষ্যা-ঝড়খণ্ড ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর ও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল ও গাঙ্গেয় বঙ্গ এবং বাংলাদেশর মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্বতৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

বিভাগীয় শহরের মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরণের বৃষ্টি/ বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরণর ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিনে তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেতে পারে।

নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

বাংলা বর্ষ পঞ্জিকা অনুযায়ী জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলে গ্রীষ্মকাল। এসময় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ভাদ্র মাসের শেষের দিকে কাঁশফুল, পদ্ম, শালুক প্রভূতি ফুল ফোটে। বায়ুর তাপমাতা কমে আসে। রাতে সবুজ ঘাসে হালকা জলের কণা দেখা যায়। কিন্তু এসময় স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক তাপমাত্রা পরিবেশের জন্য অসহনীয় সংকেত বলে জানোলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি মো. আলী হায়দার।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, নিঃসন্দেহে এটি উদ্বেগের বিষয়। এর কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমেই আমাদের পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। আমরা কোথায় থাকছি, এর আশেপাশের জলাশয়, ভূমি, হাওর, নদী-নালা কোন অবস্থায় রয়েছে। আমরা দেখছি উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অবাধে বনভূমি, পশু ও পাহাড় কেটে নগরায়ন, শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রেই এসব পরিকল্পনা করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নদী-নালা, খাল ও জলাশয়ে গিয়ে পড়ছে। এসব ধোঁয়া পরিবেশে আবদ্ধ হয়ে পড়ায় বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে এসেছে। যার কারণে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা অনুভূত হচ্ছে। এক্ষেত্রে বৃক্ষরোপনসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন এই শিক্ষক।

আরকে/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর