chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

উপনির্বাচন ঘিরে টিনু-রউফ আতঙ্ক চকবাজারে!

চসিক উপনির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) চকবাজার কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ৭ অক্টোবর । এতে সরগরম হয়ে ওঠেছে চকবাজার এলাকা। কারণ এক পদের বিপরীতে মনোনয়ন জমা পড়েছে ২৫ জনের। যেখানে বিএনপি থেকে একজন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামীলীগ থেকে রয়েছেন ২৪ জন।এদের মধ্যে আবার মনোনয়ন নিয়েছেন চকবাজারের আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত টিনু ও রউফ। এতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভোটারদের মাঝে।

জানা গেছে, ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টুর মৃত্যুতে শূন্য পদে উপনির্বাচনে ২৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ২৪ জন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। তাদের বিপরীতে বিএনপি সমর্থিত হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন একজন। আওয়ামী লীগ থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার দৌড়ে যারা আছেন- তাদের মধ্যে সাবেক কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ-সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যেমন আছেন তেমনি কিশোর অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ও সন্ত্রাসে অভিযুক্তরাও আছেন।

চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। চট্টগ্রাম পৌরসভার কমিশনার থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পর্যন্ত তিনি সাতবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন। জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ওই ওয়ার্ডে সাবেক বামপন্থী রাজনীতি থেকে পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া মিন্টু কোনোদিন ভোটে হারেননি।

গত ১৮ মার্চ তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চকবাজার ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের ২৪ জনের কাউন্সিলর হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে চট্টগ্রাম জুড়ে আলোচনা ও হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন এটাকে ক্ষমতাকেন্দ্রিক নির্বুদ্ধিতার ফল মনে করেন। তিনি বলেন, দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সবাই ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এজন্য বাছবিচার ছাড়াই যার ইচ্ছা সে-ই মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছে। আজ (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর সভা রয়েছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সামগ্রিক বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের কাছে প্রতিবেদন পাঠাব।

গতকাল (সোমবার) ছিল চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষদিন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, মোট ২৫ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন- মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, মোহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী, মোহাম্মদ সেলিম রহমান, মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী, মজিবুর রহমান, শাহেদুল আজম, মেহেরুন্নিছা খানম, নুর মোস্তফা টিনু, কাজী মুহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, আলী আকবর হোসেন, মোহাম্মদ নুরুল হুদা, আব্দুর রউফ, সামশেদ নেওয়াজ, মোহাম্মদ দেলোয়ার হাছান, মমতাজ খান, শওকত ওসমান, মোহাম্মদ রুবেল ছিদ্দিকী, আজিজুর রহমান, মো. আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ জাবেদ, কাজল প্রিয়া বড়ুয়া, কায়সার আহমদ, এ কে এম সালাহউদ্দিন কাউসার এবং ইয়াছিন আহমেদ।

এর মধ্যে এ কে এম সালাহউদ্দিন কাউসার ছাড়া বাকি ২৪ জনই আওয়ামী ঘরানার। এ কে এম সালাহউদ্দিন কায়সার বিএনপি সমর্থিত হিসেবে গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সালাহউদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির বিগত কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে পাঁচটি মামলা আছে। আটমাস আগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও এবার তিনি রাজনৈতিক পরিচয় এড়িয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।

এছাড়া আরও চারজন- মোহাম্মদ জাবেদ, আজিজুর রহমান, সামশেদ নেওয়াজ ও আলী আকবর হোসেন তাদের মনোনয়ন পত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে স্থানীয়ভাবে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। মনোনয়ন পত্র দাখিল করা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মমতাজ খান চসিকের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কাজী মুহাম্মদ ইমরান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত কাজী ইনামুল হক দানুর ছেলে। বীর মুক্তিযোদ্ধা দানু সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছায়াসঙ্গী ছিলেন। ইমরান চট্টগ্রাম মহানগরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তবে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত দু’জন মনোনয়ন পত্র দাখিলের কারণে চকবাজার ওয়ার্ডের এই উপনির্বাচন আরও বেশি আলোচনায় এসেছে, যে আলোচনায় ভয় আর আতঙ্কও আছে। তারা হলেন- আবদুর রউফ ও নুর মোস্তফা টিনু। নুর মোস্তফা টিনুর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখা ও হত্যচেষ্টাসহ থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। তিনি এখন কারাগারে আছেন।

নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করলেও সংগঠনটির কোনো পদ নেই টিনুর। একসময় সাবেক এক মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে চলতেন।পরে সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী হওয়ার পর তার বলয়ে ভেড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় বারবার সংঘাতে নাম এসেছে টিনুর। ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় অস্ত্রসহ। পরে জামিন পেলেও কয়েকমাস আগে আবার জেলে যান।

অন্যদিকে আবদুর রউফ চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী রউফের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং লালনসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান আবদুর রউফ। দুইবছর আগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল।

চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আজ মঙ্গলবার মনোনয়ন পত্র বাছাই হচ্ছে। ১৯ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৭ অক্টোবর ভোটগ্রহণ হবে যেখানে ভোটার সংখ্যা ৩১ হাজার ৭৯৪ জন।

এসএএস/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর