chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বাংলাবাজার ঘাট চলাচল বন্ধ, নেপথ্যে আধিপত্য

ভোগান্তি যাত্রীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর বাংলাবাজার ঘাটের আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে সাম্পান মালিক সমিতি ও খাস কালেকশন দায়িত্বে থাকা পক্ষটি মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। দুই পক্ষের বিরোধীতায় এই ঘাটে চলাচল করা যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দাবির সুরাহা না হলে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে বন্ধ রয়েছে বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রী পরাপার। কবে থেকে চালু হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা দিচ্ছেনা নেতারা।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সরকারি মূল্য নির্ধারণ করে এক বছরের জন্য ঘাট ইজারা দেয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে বাংলাঘাট ইজারা নেন আবুল মনছুর আলী বাপ্পী। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বাপ্পীর ইজারার সময়কাল শেষ হয়। এরপর স্থায়ী ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করেন চসিক। এরই মধ্যে স্থায়ী ইজারার জন্য চার বার দরপত্র নেয় করপোরেশন।

তবে ঘাট ইজারা নেওয়ায় সরকারি মূল্যের চাহিদা মোতাবেক না হওয়ায় কোনো পক্ষ ইজারা নিতে পারেনি। রাজস্ব হার কমাতে ১৪ এপ্রিল থেকে খাস কালেকশনে যায় চসিক। যার কারণে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে খাস কালেকশনের দায়িত্বে রয়েছেন আগের ইজারা নেওয়া বাপ্পী। টোলের দায়িত্ব বাপ্পীর পাওয়ায় মূলত বিপত্তি বাধে সাম্পান সংগঠনের নেতৃবৃন্দের।

ঘাট দখলে নিতে না পেরে উল্টো পাঁচ থেকে ছয় বার চলাচল বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। সংগঠনের নেতারা টোল আদায় করা পক্ষটিকে সন্ত্রাসী, ষড়যন্ত্রকারী ও বিরোধীপক্ষ বলে দাবি করে আসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাবাজার ঘাট সাম্পান মালিক সমিতির সভাপতি লোকমান দেওয়ান চট্টলার খবরকে বলেন, স্থায়ী ইজারার জন্য আমরা মেয়রকে চিঠি দিয়েছি। মেয়র সাহেব আমাদের চিঠি গ্রহণ করলেও সেটি রাজস্ব শাখায় পরে আছে। ১৫ দিনের সুরাহার কথা থাকলেও, কোনো সমাধান আসেনি। আমরা জানতে পেরেছি আমাদের বিরোধী পক্ষ স্থায়ী ইজারা দিতে বাধা দিচ্ছে। তারা সন্ত্রাসী ভাড়া করে বাড়তি টোল আদায় করছে। আমরা স্থায়ী ইজারা চাই। এ সমস্যার সুরাহা না হলে আন্দোলন চলবে।

দরপত্রের পরও ইজারার নিতে পারার বিষয়ে এই নেতা বলেন, সিটি করপোরেশন নিজেদের মনগড়া মূল্য নির্ধারণ করলে তো ইজারার নেওয়া সম্ভব নয়। এটি যুগপযোগী না। অতিরিক্ত খরচ ধার্য করা হয়েছে। আমরা নৌ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে অহেতুক বাড়তি মূল্যের বিষয়টি তুলে ধরেছি। এটি পাশ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

তবে এ যুক্তি মানতে নারাজ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, কাঙি্ক্ষত মূল্য না পাওয়ায় সেখানে ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। করপোরেশনের মনগড়া মূল্য নির্ধারেণের সুযোগ নেই। সরকারের নীতিমালার অনুসরণ করে ১০ শতাংশ ভ্যাট অনুসারে মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এখন খাস খালেকশন হচ্ছে। জনবলের অভাবে তারাই চসিকে অর্থ জমা দিচ্ছেন।

এদিকে নদীতে হঠাৎ সাম্পান চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মো. রিফাত নামে এক যাত্রী এসেছিলেন নদী পার হতে। ঘাটে সাম্পান দেখতে না পেয়ে তিনি আশেপাশের বেশ কয়েকজনকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করেন। সেখানে এক ব্যক্তি রিফাতকে জানান, মাঝিদের মাহফিল থাকায় সাম্পান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে রিফাতকে ছুটতে হয় সদরঘাটের দিকে।

রিফাতের পর ওই ঘাটে আসেন নারীসহ বেশ কয়েকজন কর্মজীবী মানুষ। যারা নদী পারাপারের জন্য দৈনিক এই ঘাট ব্যবহার করেন।
স্থায়ী ইজারার কথা বলে ধর্মঘটের কথা বলা হলেও বাংলাবাজার ঘাটে পদে পদে সিটি করপোরেশনের ইজারার দেওয়ার নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা।

চসিকের নিয়ম অনুয়ায়ী ৪ টাকার টোল নেওয়ার কথা থাকলেও যাত্রীদের দিতে হচ্ছে ৫ টাকা। নদীতে লাইফ বোট চালানোর বদলে চলছে সাম্পান।
সাম্পানে ৮ জন ধারণক্ষমতার জায়গায় নিচ্ছেন ১০ থেকে ১২ জন। ফলে দুর্যোকালীন সময়ে উল্টে বা ডুবে গিয়ে ঘটছে হতাহতের ঘটনা।

সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর নারীসহ এক ব্যাংক কর্মকর্তা সাম্পান ডুবে মারা যান। এমনকি সাম্পানে বহন করা যাত্রীদের কাছ থেকে ৮ টাকার বদলে চাওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। যাত্রীর সঙ্গে বহন করা প্রতি মণ বা ইহার কম মালামালে ১ টাকার বদলে ৫ থেকে ১০ টাকাও চাওয়া হয়। এমনকি লকডাউনের উসিলায় ২০ থেকে ৩০ টাকাও নিয়েছেন অনেক মাঝি। এ নিয়ে প্রায় সময় যাত্রীদের সঙ্গে সাম্পান চালকদের বাকবিতণ্ডা লেগেই থাকে। অনিয়মের জেরে জরিমানা করা হয়েছে বেশ কয়েকবার।

বাড়তি মাশুলের বিষয়টি স্বীকার করলেও বাংলাবাজার ঘাট সাম্পান মালিক সমিতির সভাপতি লোকমান দেওয়ান নদীতে লাইফ বোটের বিরোধীতা করেছেন। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে আমাদের অনেক সময় বাড়তি ভাড়া নিতে হয়েছে। কর্ণফুলীতে সাম্পানের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। চাইলেই এখানে লাইফ বোট চালানো সম্ভব না। সাম্পানে ডুবে কয়জন মারা গেছে আর সড়কে কয়জন মারা যাচ্ছে সেটার খোঁজ নেন।

বর্তমানে করপোরেশনের খাস কালেশনের দায়িত্ব পালন করা আবুল মনসুর আলী চট্টলার খবরকে বলেন, গত বছরের এপ্রিল নৌ থানায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে লকডাউনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা ১ টাকা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম। নৌ কর্মকর্তাদের অনুমতির প্রেক্ষিতে আমরা টোল আদায় করছি। নিম্ন আয়ের অনেক যাত্রী টোল না দিয়েও চলাচল করে থাকে। আমরা সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী খাস কালেকশন করে জমা দিয়ে আসছি।

তিনি আরও বলেন, আজ কোনো আলোচনা ছাড়াই নেতারা ধর্মঘট করে যাত্রীদের ভোগান্তি ফেলেছে। এরা স্থায়ী ইজারা নিতে না পেরে উল্টো সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলেছে।

আরকে/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর