chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

হাটহাজারী মাদ্রাসায় চলছে শূরা কমিটির বৈঠক

নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চাপা উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শাহ্ আহমদ শফী ও জুনাঈদ বাবুনগরী পরবর্তী কারা ধরবেন হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং হেফাজতের হাল তা নিয়ে চলছে চাপা উত্তেজনা। এরই মাঝে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও শাইখুল হাদিস নির্ধারণে বৈঠকে বসেছে শূরা কমিটি। আজ বুধবার সকাল ১১ টায় শুরু হওয়া শূরা সদস্যদের বৈঠক শেষে জানা যাবে কারা নির্বাচিত হয়েছেন উক্ত দুই পদে। 

শূরা সদস্যদের মধ্যে নুরুল ইসলাম জিহাদী, মুফতি আব্দুল মালেক, মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মাহমুদুল হাসান ও মাওলানা ওমর ফারুকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রচার সম্পাদক আ.ন.ম আহমদুল্লাহ। শূরার এ বৈঠকেই আল্লামা আহমদ শফীর উত্তরসূরি নির্ধারণ হবে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাইতো শূরার বৈঠককে কেন্দ্র করে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা সদস্য ও ফতেপুর নাছেরুল উলুম মাদ্রাসা মহাপরিচালক মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, আজকের বৈঠকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক, সহকারী মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিসসহ (শিক্ষা পরিচালক) নির্বাচিত হবে। দীর্ঘদিন ধরে মহাপরিচালক হিসাবে হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

জানা যায়, গত বছর ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। সেই থেকে মহাপরিচালক পদে আর কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসা তিনজন সিনিয়র শিক্ষকের একটি প্যানেল মাওলানা আব্দুস ছালাম চাটগাঁমী, আল্লামা শেখ আহমদ, মাওলানা ইয়াহিয়া মুহতামিমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

বর্তমানে মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মাদ্রাসার পাঁচ সিনিয়র শিক্ষক। তারা হলেন- মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির তিন সদস্য মাওলানা আব্দুস ছালাম চাটগাঁমী, আল্লামা শেখ আহমদ এবং মাওলানা ইয়াহিয়া। এর বাইরে আলোচনায় রয়েছেন মুফতি জসিম উদ্দিন এবং মাওলানা শোয়েব। আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর মাদ্রাসায় ১৩ জন শূরা সদস্যের মধ্যে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মাওলানা নোমান ফয়জী ইতিপূর্বে মারা গেছেন। বর্তমানে শূরা সদস্য রয়েছে ১১ জন।

তারা হলেন – ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা পরিচালক আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ মাদ্রাসা নায়েবে মুহতামিম মুফতি নুরুল আমিন, ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা নোমান ফয়জী, ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী ও হাটহাজারীর ফতেপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী।

উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩৪ বছর হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ছিলেন আহমদ শফী। দীর্ঘদিন শুধু মাদ্রাসাটি নয়, পুরো কওমি অঙনে তার একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। পাশাপাশি মাদ্রাসাটির নায়েবে মোহতামিম ছিলেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। আল্লামা শফীর পরবর্তী মহাপরিচালক পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন বাবুনগরী। এরই মধ্যে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির আমির ছিলেন আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হেফাজতে দেশের ধর্মীয়সহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে। ২০১৩ সালে এসে ইসলাম ও রাসুল (সা.)-কে কটূক্তিকারীদের ফাঁসি চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। ওই বছর ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে ৫ মে সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে।

ওই সময় রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। শাহবাগে থাকা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সঙ্গেও তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরদিন ৬ মে হেফাজতের তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আহমদ শফীর সঙ্গে সমঝোতা করে সহিংস আন্দোলন থামায় সরকার।

এ ঘটনার পর থেকে শাহ আহমদ শফী এবং বাবুনগরীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব মাদ্রাসার বিভিন্ন ইস্যুতেও প্রভাব ফেলে। বাবুনগরীপন্থিদের দাবি, আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানি বাবুনগরীর বিষয়ে তার বাবাকে ভুল বোঝায়। বাবাকে দিয়ে কৌশলে ২০২০ সালের ১৭ জুন এক বৈঠকের মাধ্যমে বাবুনগরীকে মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় শেখ আহমদকে। এরপর থেকে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হতে থাকে। একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে ছাত্রবিক্ষোভ শুরু হয়।

আন্দোলনের সময় মাদ্রাসায় ব্যাপক ভাঙচুর চলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একদিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর শফী নিজে মহাপরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নেন এবং ছেলে আনাস মাদানিকেও সহকারী পরিচালক (শিক্ষা) থেকে বাদ দেন। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহমদ শফীর মৃত্যু হয়। শফীর মৃত্যুর পর থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার দৃশ্যপট আবার পাল্টাতে শুরু করে। তার দাফনের দিন হাটহাজারী মাদ্রাসায় শূরা বৈঠক বসে। বৈঠকে আবার জুনায়েদ বাবুনগরীকে শিক্ষা পরিচালক ও প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।গত ১৯ আগষ্ট বাবুনগরীর মৃত্যু হলে আবারও বদলাতে থাকে হেফাজত ও হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রেক্ষাপট।

এসএএস/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর