chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সড়ক দখল করে স্টিলমিল বাজার, দৈনিক চাঁদা ৩০ হাজার টাকা

রকিব কামাল: লাল ফিতায় ঘিরে রাখা হয়েছে সড়কের অর্ধেক অংশ, অন্য পাশের অবশিষ্ট অংশ জুড়ে চলছে কাঁচাবাজারের বিকিকিনি। একই সড়ক দু্ই জায়গায় দখল হওয়ায় আটকে পড়ে আছে ভারী পণ্যবাহী গাড়ি থেকে গণপরিবহন। সৃষ্ট যানজট নিয়ে যেনো ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। দেখেও যেনো না দেখার ভান করছেন দোকানিরা।

সড়ক-ফুটপাত দখল করে স্টিলমিল বাজার, দৈনিক চাঁদা তুলে ৩০ হাজার টাকা
নগরের স্টিল মিল এলাকায় এভাবেই ফুটপাত-সড়ক দখল করে প্রতিদিন বসছে দোকানপাট। ফলে ওই রুটে চলাচলকারী পথচারী ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আলোকচিত্রী এম ফয়সাল এলাহী

কাঁচাবাজার ছেড়ে একটু এগোলেই চোখে পড়বে সারি সারি পিকআপ রাস্তা দখল করে বানিয়ে নিয়েছে নিজেদের স্ট্যান্ড। ফলে ওই সড়কে চলাচল করা পরিবহন ও যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় যানজট।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরের উত্তর পতেঙ্গার খালপাড় স্টিলমিল সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পতেঙ্গা থানা থেকে শুরু হয়ে ইস্টার্ন কেবলস লিমিটেডের কার্যালয় পর্যন্ত সড়কটিতে অবৈধ দখলকারীদের আধিপত্য। সড়কের অর্ধেক অংশ গিলে খাচ্ছে কাঁচাবাজার ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। রাস্তা দখল করেই শেষ নয়, মানুষের হাঁটাচলা করার ফুটপাত পর্যন্ত দখল করে রেখেছেন মাংস ও মাছ বিক্রেতারা। সেখানে আড্ডা জমেছে পিকআপ চালক ও শ্রমিকদের।

সড়ক-ফুটপাত দখল করে স্টিলমিল বাজার, দৈনিক চাঁদা তুলে ৩০ হাজার টাকা
নগরের স্টিল মিল এলাকায় এভাবেই ফুটপাত-সড়ক দখল করে প্রতিদিন বসছে দোকানপাট। ফলে ওই রুটে চলাচলকারী পথচারী ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আলোকচিত্রী এম ফয়সাল এলাহী

পতেঙ্গা থানার পাশে স্টিলমিল কাঁচাবাজারটি উচ্ছেদ করা হয়েছিল কয়েক মাস আগে। এরপর খালপাড় এলাকায় রাস্তা দখল করে ব্যবসা শুরু করে অর্ধশত মাছ ব্যবসায়ী। স্থায়ীভাবে রাস্তা দখলের পর ফুটপাতে মালামাল রাখায় বন্ধ হয়ে গেছে পথচারী চলাচল। ওই সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করে আসছে পণ্য বোঝাই ভারী যানবহান। এক প্রকার বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দিয়ে হাঁটেত হচ্ছে পথচারীদের। অনেক সময় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা চালকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে পথচারীদের।

ওই সড়কে নিয়মিত চলাচল করা রেজাউল মুনসি নামে এক যাত্রী চট্টলার খবরকে বলেন, সকালে চাপ কম থাকলেও বিকেলে বাসায় ফেরা যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এতে আমাদের দীর্ঘক্ষণ ধরে বাসে বসে থাকতে হয়। এসব দেখার যেনো কেউ নেই।

সড়ক-ফুটপাত দখল করে স্টিলমিল বাজার, দৈনিক চাঁদা তুলে ৩০ হাজার টাকা
নগরের স্টিল মিল এলাকায় এভাবেই ফুটপাত-সড়ক দখল করে প্রতিদিন বসছে দোকানপাট। ফলে ওই রুটে চলাচলকারী পথচারী ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আলোকচিত্রী এম ফয়সাল এলাহী

অপরদিকে ফ্লাইওভারের জন্য বরাদ্দ লাল ফিতা দেওয়া অংশে গাড়ির পার্কিংয়ের অনুমতি না থাকলেও, সেখানেও যততত্র পিকআপ পার্কিং করতে দেখা গেছে।

পিকআপ চালক মোহাম্মদ রহমান চট্টলার খবরকে বলেন, শহরের বিভিন্ন জায়গায়তো পিকআপের অস্থায়ী স্ট্যান্ড রয়েছে। আমরা রাখলে কেবল দোষ? এসবে যানজট হয় না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে বাজার নিয়ন্ত্রণে একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের আদলে বাজার দেখভাল থেকে শুরু করে পুলিশকে ম্যানেজ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, ব্যবসায়ীদেরকে দৈনিক ২০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। সেখানে দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। সে হিসেবে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা যায় সিন্ডিকেটের পকেটে। মাসে ৯ লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে ওই সিন্ডিকেটের।

বাজার মনিটরিং করার লক্ষে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তাকর্মী। সেখানে স্থানীয় কাউন্সিলর আবদুল বারেকেরও ন্যায্যমূল্য পণ্য বিক্রির একটি দোকান রয়েছে। ভোর সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু হওয়া বাজার চলে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাছ ব্যবসায়ী চট্টলার খবরকে বলেন, থানার পাশে বাজার উচ্ছেদের পর অনেক শ্রমিক ও মালিক বেকার হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের অনুমতির পর এখানে ব্যবসা শুরু করেছি। এখান থেকে তুলে দিলে আমরা যাব কোথায়? চাঁদার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সড়ক-ফুটপাত দখল করে স্টিলমিল বাজার, দৈনিক চাঁদা তুলে ৩০ হাজার টাকা
নগরের স্টিল মিল এলাকায় এভাবেই ফুটপাত-সড়ক দখল করে প্রতিদিন বসছে দোকানপাট। ফলে ওই রুটে চলাচলকারী পথচারী ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আলোকচিত্রী এম ফয়সাল এলাহী

তবে রাস্তা দখল করে কোনো বাজারের অনুমতি পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, বাজারটি থানার পাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে আশপাশের এলাকার মানুষকে কষ্ট পেতে হয়। পরে কাউন্সিলরসহ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি গুরত্ব দিয়ে সমাধান করে। কিন্তু রাস্তা দখল করে কোনো বাজারের অনুমতি পুলিশ দিতে পারে না। আপনি যেহেতু বলেছেন বিষয়টি আমি দেখব।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল বারেক চট্টলার খবরকে বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে তারা ব্যবসা করে আসছে। বাজার উচ্ছেদের পর পরিবারগুলো আর্থিকভাবে কষ্টে পড়ে যায়। আমার কাছে এসে কান্নাকাটি শুরু করে। আমি মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা বলে তাদের ওইখানে অস্থায়ীভাবে বসতে দেই। আমি চাইলে এখনই তাদের তুলে দিতে পারি। কিন্তু আপনারা কি চান এতগুলো মানুষ বেকার হয়ে পড়ুক। মানবিক কারণে আমরা পারছি না। এদের সহযোগিতা করা উচিত সবার।

তবে সড়ক-ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী বাজারের বিষয়ে কাউন্সিলর বারেক বলেন, ওইখানে বেশি দোকান নেই। চাইলেই এখনই তাদের তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। থানার পাশে স্থায়ীভাবে বাজারের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে সেখানে চলে যাবে।

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০০ টাকা চাঁদার বিষয়টি সত্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, বাজার তদারকির জন্য প্রহরী রাখা হয়েছে। এদের বেতন দিতে হয়। এর পাশাপাশি অন্যান্য খরচ রয়েছে। চাঁদার বিষয়টি সত্য নয়।

আরকে/এমআই/চখ

এই বিভাগের আরও খবর