chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

করোনায় থেমে নেই ডেঙ্গুর হানা, বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা 

জ্বর হলে ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ

রকিব কামাল: দেশে করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমলেও দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গেল আগস্ট মাসে চট্টগ্রামে এডিস মশার কামড়ে একশোর বেশি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নগরের সরকারি-বেরসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অর্ধশত রোগী। এ ছাড়া মারা গেছেন দু’জন রোগী।

মৃত্যু কমলেও শনাক্তের হার নিয়ে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ডেঙ্গুর মৌসুম হওয়ায় বাড়তি নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত জুলাই মাসে চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ওই মাসের শেষের দিকে মারা যান দু’জন। তাদের মধ্যে নাফিজা জাহান (২৭) নগরের মেরিন সিটি কলেজ হাসপাতাল ও সিমা দে (২৫) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মারা যান। ডেঙ্গুর বংশ বিস্তার রোধে মাসব্যাপী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগস্ট মাসে জেলা ও উপজেলায় ৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। অপরদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৮ জন রোগী। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। জেনারেল হাসপাতালে আছেন ৭ জন রোগী।

এ ছাড়া বিশেষায়িত বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১২ জন রোগী। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি নগরের বেরসরকারি সার্জিস্কোপ, এভারকেয়ারসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে ডেঙ্গুর চিকিৎসা। উপজেলার মধ্যে হাটহাজারীতে জুলাইয়ে দুজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

জানতে চাইলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. নুরুল হায়দার চট্টলার খবরকে বলেন, বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। আগস্টে মৃত্যু না হলেও জেলা ও উপজেলাগুলোয় রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সর্বশেষ পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে অনেকে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। নতুন করে অনেকে ভর্তি হচ্ছেন।

এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার করা হয়েছে। জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির চট্টলার খবরকে বলেন, জুলাইয়ে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুও হয়েছিল।

তিনি বলেন, আগস্টে শনাক্তের সংখ্যা কম নয়। বিষয়টি মাথায় রেখে হাসপাতালে আলাদা কর্নার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কখনও পরিস্থিতি অবনতি হলে যেনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

তবে অনেকে বাসায় চিকিৎসা নেওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ ডা. এন্তেজার ফেরদৌস।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, এই রোগে আক্রান্তের পর গায়ে জ্বর, মাথা ব্যথাসহ বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। অনেকে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, অনেকে অনলাইনের সহায়তায় যাবতীয় চিকিৎসার খোঁজখবর পাচ্ছেন। হাসপাতালে আসছেন কেবল ঝুঁকি রয়েছে এমন রোগীরা। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমে হাসপাতালে রোগী ভর্তির বিষয়টা আসছে, আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাচ্ছে না।

জ্বর হলেই টেস্ট

জ্বর হলেই করোনা টেস্টের পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্টের ওপর গুরত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ’র (বিআইটিআইডি) মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ঢাকার পর চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ হারে ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। এর পরের বছর রোগী কমলেও, চলতি বছর এটি আবারও ঊর্ধ্বগতির দিকে। বর্তমানে এই হাসপাতালে দুজন রোগী ভর্তি আছে। গত তিন সপ্তাহে ৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এই সময়ে কারো জ্বর হলে অবশ্যই করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুর টেস্ট করাতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা অদৃশ্য ভাইরাস। কিন্তু ডেঙ্গুকে চাইলে আমরা নির্মূল করতে পারি। ব্যক্তি উদ্যোগে বাসার আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যাতে করে পানি জমতে না পারে। দিনের বেলা মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।

আরকে/এমআই/চখ

এই বিভাগের আরও খবর