chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশের সহযোগীতায় পাগলি দেখল সন্তানের মুখ

 রাজীব সেন প্রিন্স: মানসিক ভারসাম্যহীন এক পাগল মহিলা চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট মোড়স্থ রাস্তার পাশের একটি মার্কেটের ভেতরে প্রসব বেদনা নিয়ে ছটপট করছিলেন। বাসা থেকে বের হতেই গুঙ্গানির শব্দে মার্কেটের ভিতরে দৃষ্টি যায় এক গণমাধ্যমকর্মীর। তার নাম সুমন গোস্বামী। বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন এনটিভি চট্টগ্রাম ব্যুরোতে কর্মরত।

পাগল মহিলাটির এ অবস্থা দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় তখন তার একমাত্র লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠে। তাকে সাহায্য করার জন্য অসংখ্য পথচারীকেও অনুরোধ জানান সুমন। ব্যর্থ হন। অবশেষে ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহযোগতা মেলে।

জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে ছুটে আসে নগরীর চান্দঁগাও থানা পুলিশের একজন এসআইসহ তার টিম। পরে পথচারীরা ওই নারীর পাশে রেখে যাওয়া হাজার খানেক টাকা তুলে নিয়ে পুলিশের হাতে দেন সুমন।

পুলিশের সহযোগীতায় পাগল ওই মহিলাকে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে সক্ষম হয় এ গণমাধ্যমকর্মী।

এ বিষয়ে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন এনটিভি চট্টগ্রাম ব্যুরোতে কর্মরত ক্যামেরা পারসন সুমন গোস্বামী বলেন, বহদারহাট স্বজন সুপার মার্কেটের ভিতরে এক কোনে বসে ভারসাম্যহীন মহিলাটি কান্না কাটি করছিল।

লোকজন দেখেও না দেখার মত ভান করে চলে যাচ্ছে। তখন আমি ঘরের কাঁচা বাজার করতে যাচ্ছিলাম। কেন জানি হঠাৎ চোখ পরলো মহিলাটির দিকে। খুব খারাপ লাগলো।

তখন দেখলাম মহিলাটির সামনে সবাই দশটাকা, বিশটাকা, একশটাকা ফেলে লোকজন তাদের দায়িত্ব সারছেন। তখন মনে মনে চিন্তা করলাম কিছু একটা করতে হবে। ফোন করলাম ৯৯৯ নম্বরে। সহযোগিতা চাইলাম। পরে পুলিশ আসলো। তাদের সহযোগিতায় একটি সিএনজি করে ওই পাগল মহিলার সাথে একজন দোকানদারকেও পাঠিয়ে ছিলাম।

আজ হাসপাতাল থেকে সুখবর এল। মানসিক ভারসাম্যহীন পাগল ওই মহিলাটির একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। খবর পেয়ে পাগল মানসিক ভারসাম্যহীন ওই পাগল নারী ও তার সন্তানকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান চান্দগাঁও থানা পুলিশের একটি টিম।

কিন্তু এর আগেই হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় চলে গেছেন ওই নারী। জানা যায়, পাগল ওই নারীর নাম মিনু আক্তার। সে গর্ভবতী হওয়ার পর দায়িত্ব না নিয়ে ওর স্বামী ওকে ফেলে রেখে চলে যায়।

ক্ষুধা নিবারণ ও জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে সে নগরীর পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করে। কিন্তু গত সোমবার রাতে বহদ্দারহাট এলাকায় ভিক্ষা করতে করতে হঠাৎ তার প্রসব বেদনা উঠে। আর তখন সে রাস্তার পাশে একটি মার্কেটে ঢুকে পড়ে। পরে গণমাধ্যমকর্মী সুমন গোস্বামীর চেষ্টা ও চান্দগাঁও থানা পুলিশের সহযোগীতায় সে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়।

এদিকে আজ বুধবার মিনু আক্তারে পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার খবর শুনে সেখানে ফের ছুটে যায় পুলিশ। হাসপাতালে তাকে না পেয়ে চান্দগাঁও থানার ওসি মাঈনুর রহমান টিম নিয়ে ছুটে যায় মিনুর শমশেরনগর বস্তি এলাকার বাসায়।

মা সন্তান দুজনকেই দেখলেন। সে সাথে সন্তানের যাবতীয় দায়িত্ব নিয়ে নিলেন ওসি মাঈনুর রহমান। বাচ্চাটার নামও রাখলেন তিনি। নাম রাখেন সাইফুল্লাহ।

এ বিষয়ে চান্দগাঁও থানার ওসি মাঈনুর রহমান জানালেন, খুব আনন্দ অনুভব করছি। খুবই ভাল লাগছে এটা ভেবে যে একটা প্রাণ পৃথিবীর আলোর মুখ দেখলো। বর্তমানে মা ও ছেলে দুজনই সুস্থ আছে। তাদের উভয়ের চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিয়েছি। তাছাড়া যেকোন সাধারণ মানুষের বিপদে চান্দগাঁও থানা পুলিশ পাশে থাকবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এই বিভাগের আরও খবর