chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সিআরবিতে ‘পাখির বাসা’ বিস্তারে গাছে গাছে মাটির পাত্র স্থাপন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিআরবি এলাকা জুড়ে পাখির নিরাপদ প্রজনন ও অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে ‘চাটগাঁবাসীর হৃদয়জুড়ে একটি আশা, সিআরবিতে থাকবে শুধু পাখির বাসা’ শীর্ষক কর্মসূচিতে গাছে গাছে শতাধিক মাটির পাত্র স্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

আজ বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় সিআরবি চত্বরে নাগরিক উদ্যোগ আয়োজিত পাখির বাসা স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সুজন।

পরে সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, একসময় প্রাচ্যের নগরী খ্যাত চট্টগ্রাম ছিল গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ। সবুজে সবুজে ভরপুর ছিলো আমাদের চারপাশ। যেখানে আমাদের সন্তানেরা একটু খেলার সুযোগ পেতো। বয়োবৃদ্ধরা নিতে পারতো প্রাণভরা নিঃশ্বাস।

‘যান্ত্রিক জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা নগরবাসী একটু স্বস্তি পেতো গাছের ছায়ায় নিজেকে হেলান দিয়ে। কালের বিবর্তনে এবং বাণিজ্যিকরণের করাল গ্রাসে সেই সবুজ প্রকৃতি কি এখন আর আছে? গাছেগাছে কিচিরমিচির করা আগেকার পাখিগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে।’

সুজন বলেন, শুধুমাত্র সিআরবি চত্বরে আসলে সেই সবুজ প্রকৃতির ঘ্রাণ পাওয়া যায়। পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে সন্ধ্যা বেলার সিআরবি। কিন্তু হাসপাতালের দোকানদারী আর নষ্ট লোকের পকেট ভারির নামে সেই সবুজ প্রকৃতি ধ্বংসের জন্য উম্মাদ হয়ে উঠেছে একশ্রেণীর অর্থলিপ্সু গোষ্ঠী।

‘তাই এদের হাত থেকে সিআরবির সবুজ প্রকৃতি বাঁচাতে এবং পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে পাখির বাসা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বলেন, আমাদের এ প্রতিবাদকে অনেকে সরকার বিরোধী আন্দোলন হিসেবে রূপদান করতে চায়। কিন্তু আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে কতিপয় কুচক্রীমহল সরকারবিরোধী আন্দোলন হিসেবে জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে চাইছে, কিন্তু তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।

‘আমাদের এ শান্তিপূর্ণ অবস্থান হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সুদৃষ্টির জন্য। আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়তই সবুজ জায়গা সংরক্ষণ, নদনদী উদ্ধারসহ পরিবেশ রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য আমাদের এ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী।’

সুজন বলেন, আমরা এখনও বলছি চট্টগ্রামের জনগণের স্বাস্থ্যরক্ষায় অবশ্যই হাসপাতালের প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা হতে হবে আপামর জনসাধারণের জন্য। কিন্তু যে হাসপাতাল শতকরা ৫ ভাগ মানুষেরও স্বার্থ রক্ষা করবে না সে হাসপাতালের জন্যই বা কতিপয় ব্যক্তিবিশেষের এতো তোড়জোড় তা আমাদের কারোরই বোধগম্য নয়।

‘আমরা বারংবার আবেদন নিবেদন করেছি বন্দর পতেঙ্গা এলাকা যেটা শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত, যেখানে লাখো লাখো মানুষের বসবাস সেখানে একটি সরকারি মাতৃসদন কাম হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক। কিন্তু জনগণের সে দাবি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত।’

তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি চট্টগ্রামে একটি খেলার মাঠ নেই, খালি জায়গা নেই, একটি মাত্র সবুজ উদ্যান সিআরবি। সেই সিআরবিকে যদি আমরা ইট পাথরের জঞ্জাল দিয়ে ঢেকে দিই তাহলে আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

‘আমাদের সন্তানদের আমরা মোবাইলের ৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। এর কুফল যে কি হতে পারে সেই ভাবনা কারো নেই।’

ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রতি পূণরায় অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে রেলওয়ের অনেক পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে। আপনারা সেখানে আপনাদের হাসপাতাল নির্মাণ করুন কিন্তু চট্টগ্রামের জনগণের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ করে হাসপাতাল নির্মাণ করার চেষ্টা করলে তা কখনোই শুভ ফল বয়ে আনবে না।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে সিআরবির গাছে গাছে মাটির পাত্র স্থাপন করেন খোরশেদ আলম সুজন। তখন উপস্থিত একজন সমাজকর্মী দুইটি পাখি অবমুক্ত করার জন্য সুজনের হাতে উপহার দেন।

এভাবে পুরো সিআরবি জুড়ে পাখির বাসা স্থাপন এবং পাখিদের জন্য প্রতিদিন কিছু খাদ্য বিলিয়ে দেওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান তিনি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ যেভাবে সিআরবিকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।

নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছের সভাপতিত্বে এবং সমন্বয়ক মোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমান মিয়া, রুহুল আমিন তপন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, নিজাম উদ্দিন, কবি ও সাংবাদিক শুকলাল দাশ, কবি আবু মুসা চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী, মাওলানা করিমউদ্দিন নূরী, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাহবুবুল হক সুমন, মহানগর সৈনিক লীগের আহবায়ক শফিউল আজম বাহার, শাহীন সরোয়ার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নুরুল কবির, সাজ্জাদ হোসেন, আবুল হাসান সৈকত, জাহেদ আহমদ চৌধুরী, শাহেদুল আলম অপু, অনির্বান দাশ বাবু, সমীর মহাজন লিটন, মো. শাহজাহান, ফেরদৌস মাহমুদ আলমগীর, মনজুর হোসেন, আব্দুর রহিম জিল্লু, রাজীব হাসান রাজন, রকিবুল আলম সাজ্জী, আশিকুন্নবী চৌধুরী, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি এম ইমরান আহমেদ ইমু, সহ-সভাপতি জয়নাল উদ্দিন জাহেদ, সোলেমান সুমন, আরাফাতুল মান্নান ঝিনুক, মো. ওয়াসিম, মো. জাহাঙ্গীর, মাহফুজ চৌধুরী, শহীদউল্ল্যাহ লিটন, সালাউদ্দিন জিকু প্রমুখ।

আরএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর