chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সিআরবি ইস্যুতে আ. লীগে ভিন্ন মত, অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা

রকিব কামাল: দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতায় একাট্টা হয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ। পরিবেশের বিপর্য রোধে ছড়া, কবিতা, গান, চিত্র প্রদর্শনী ছাড়াও আলোচনা সভায় স্থান পেয়েছে বিষয়টি।

অন্যদিকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পরিবেশবাদী সংগঠনের বিরাধিতা সত্ত্বেও অনড় অবস্থানে সরকার। সময় গড়িয়ে আন্দোলনের সময় বাড়লেও সিআরবি ইস্যুতে স্বয়ং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীরাই পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জ্যেষ্ঠ নেতাদের এমন আচরণে অস্বস্তি বিরাজ করছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে।

সিআরবি নিয়ে কথা বলা অনেকের ভোল পাল্টে গেছে। চট্টলার খবরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অসুস্থ, সময়ের ব্যস্ততার অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন কেউ কেউ।

আন্দোলন সূচনার প্রথম দিকে গত ১৩ জুলাই চট্টগ্রামের সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সিআরবি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে তিনি শহরের প্রাণকেন্দ্র দৃষ্টিনন্দন সবুজ জায়গায় কোনো অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন।

রোববার (২৯ আগস্ট) এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিআরবি ইস্যুটি এড়িয়ে যান নওফেল। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের নতুন এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেনসি ইউনিট) ওয়ার্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, সরকারের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারেন না। সরকারের অবস্থানের বাইরে তার কোনো অবস্থান নেই। এ বক্তব্যের পর অনেকের মাঝেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টলার খবরকে বলেন, অনেক দিন হলো বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে কথা হচ্ছে। অনেকেই রাজনৈতিকভাবে সুবিধা আদায় করতে স্ট্যান্ডবাজি করেছেন। কিন্তু ফায়দা লুটতে না পেরে এখন সরে পড়ছেন। সাধারণ একজন কর্মী হিসেবে মনে করি, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের স্ববিরোধী আচরণ তৃণমূলের ওপর প্রভাব ফেলে। একই সঙ্গে সরকারের ভাবমূতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যার কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সিআরবি নিয়ে কোনো অবস্থান ব্যক্ত করছে না।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন। আন্দোলনের বিষয়ে দলীয় অবস্থানে জানতে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।

অপরদিকে নাগরিক সমাজের সভাপতি ও প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনার বিষয় বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে গত রোববার (২৯ আগস্ট) সিআরবিতে নাগরিক সমাবেশের অবস্থান কর্মসূচিতে নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনের বক্তব্য নতুন করে আলোচনায় আসে।

সমাবেশে তিনি বলেন, মীরজাফররা আজ সক্রিয়।তারা চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবিকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। বীর চট্টলার নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে লাঠি হাতে নিয়েছিলেন, তার মধ্যে অনেকগুলো লাঠি আমার কাছে রেখে গেছেন। সেই লাঠিগুলো মা বোনদের হাতে তুলে দেব। চট্টগ্রাম বন্দর, রেল এমনকি সিটি করপোরশনের অব্যবহৃত অনেক জায়গা আছে। সে সমস্ত জায়গায় বড় বড় হাসপাতাল হতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত ও নিবন্ধিত সিআরবিতে নয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে হাসিনা মহিউদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে প্রধামন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে হাসপাতাল বিরোধিতাকারীদের সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমদ।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, আমরা চাই না পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম চলুক। সিআরবি ধ্বংস হয়ে যাবে বলে যারা প্রচারণা করছেন, তাদের যুক্তি শুনতে হলে গণমাধ্যমকে আমাদের যুক্তিগুলোও শুনতে হবে। চট্টগ্রামে ভালো কোনো হাসপাতাল না থাকায় জটিল রোগে আমাদের ঢাকামুখী হতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। দলের ভেতরে-বাইরে বলে কথা নেই, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল হবে। সবাই সব কিছু জানে না, বুঝেও না।

উল্লেখ্য, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সব আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত। রেলওয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ রেলের সঙ্গে চুক্তি করার পর এখন হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আরকে/এমআই/চখ

এই বিভাগের আরও খবর