chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

দুই মাসেও হয়নি চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি

নেতাকর্মীদের দীর্ঘ সময়ের চাপা ক্ষোভ ও হতাশা যেন কাটছেই না

রকিব কামাল: কেটে গেছে ২০ বছরেরও বেশি সময়। দীর্ঘ পথচলায় জোর দা্বি উঠে সংগঠনের ঐতিহ্য রক্ষার, তবে আড়ালেই থেকেই যায় নেতৃত্বের হাতেখড়ি। প্রথমবারের মতো আড়ম্বর পরিবেশে সম্মেলন ভাগ্যে জুটলেও, নেতৃত্বের স্বাদ পাননি কোনো পদ প্রত্যার্শী নেতাকর্মী। ফলে, নেতাকর্মীদের দীর্ঘ সময়ের চাপা ক্ষোভ ও হতাশা যেন কাটছেই না। সম্মেলনের পরের দিন নাম ঘোষণার কথা থাকলেও, দুই মাসেও চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।

সম্মেলনের পরও কমিটি না হওয়ার পেছনে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে দলটির কেন্দ্রীয় ও নগর পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা বলছেন যাচাই-বাছাই শেষে সেপ্টেম্বরে কমিটি দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ চট্টলার খবরকে বলেন, সংগঠনের স্বাথেই কমিটি দিতে কিছুটা সময় লাগছে। পদ-প্রত্যার্শী নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মতাদর্শ, দলের প্রতি অবস্থান, ত্যাগ, পরিশ্রম ছাড়াও জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নগর আওয়ামী লীগর নেতারা আমাদের কাজে সহায়তা করছেন। আশা করছি সেপ্টম্বরে কমিটি দিতে পারব। তবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ কিংবা আহ্বায়ক সে বিষয়ে তিনি কিছু নিশ্চিত করেননি।

জানা যায়, ২০০১ সালের সর্বশেষ ২১ সদস্যের মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি দীর্ঘ সময়েও এটিকে পূর্ণাঙ্গে রুপ দিতে পারেনি। এর সঙ্গে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিও থমকে যায়। দুই দফা পেছানোর পর করোনা মহামারীর মধ্যে গত ১৯ জুন নগরের ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ভার্চুয়ালে অংশ নেন। তখন সমঝোতায় ব্যর্থ হয়ে  কমিটি ঘোষণা ছাড়াই সম্মেলন শেষ করতে হয়।

সম্মেলন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঘোষিত কমিটিতে পছন্দসই পদ পেতে দৌঁড়- ঝাঁপ শুরু করেন নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নেতারাও পদ-প্রত্যার্শীদের ফেলেছেন কঠিন পরীক্ষায়। ১০১ সদেস্যর পূর্ণাঙ্গে কমিটিতে পদ পেতে ৬০০ এর বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৪৩ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৩২ জন ফরম জমা দিয়েছেন। শীর্ষ পদ হাতছাড়া না করতে অনেকে একই সঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদেও ফরম নিয়ে রেখেছেন।

নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন নতুন  কমিটিতে পদ প্রত্যাশী। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, কমিটি ঘোষণার বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ভালো বলতে পারবেন। আমরা আশা করব দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটি যাবতীয় যাচাই-বাছাই শেষে নগরের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে পরামর্শ করে কমিটি দিবেন। সেপ্টেম্বরে কমিটি দেওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলেও জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাধারণ সম্পাদক পদে আবেদন করা এক নেতা চট্টলার খবরকে বলেন, কমিটির বিভিন্ন পদে আবেদন করা প্রার্থীদের যাবতীয় তথ-উপাত্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে রয়েছে। সম্মেলনের আগেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রামে এসে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এরা দীর্ঘদিন মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করে আসছে। এরপরও কমিটি দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক পরিচয়ের অভাবে নেতাদের মাঝে বেদনা কাজ করবে এটাই তো স্বাভাবিক। নগরের শীর্ষ নেতারা আগ্রহী হলেই কমিটির আলোর মুখ দেখবে।

তবে এ যুক্তি মানতে নারাজ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব কেবিএম শাহজাহান। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, সম্মেলনের পর আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। আমাদের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের মতো দলকে সুসংগঠিত ও গতিশীলতার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পদ-প্রত্যার্শীদের তথ্য যাচাইয়ে সময় লাগছে। এছাড়া দলীয়ভাবে শোকের মাসে কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয় না। এক সপ্তাহের মধ্যেই নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির একটি অংশ  প্রয়াত সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। অন্য ধারাটি সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ. ম নাছিরের অনুসারী। মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর বলয়টি তাঁর পুত্র শিক্ষাউপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে অনুসরণ করে আসছে। কমিটিতে এ দুই বলয়ের পছন্দের প্রার্থীদের আধিপত্য থাকবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টারা। এর মধ্যে হেলাল উদ্দিন, সুজিত দাশ, আব্দুর রশিদ লোকমান, আজিজুর রহমান, দেবাশীষ নাথ দেবু, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল ছাড়াও রয়েছেন এক ঝাঁক নেতাকর্মী।

আরকে/এনএনআর/চখ

এই বিভাগের আরও খবর