chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

জিয়া ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কারিগর: হানিফ

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কারিগর ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যায় জড়িত আত্মস্বীকৃত খুনিরা বলেছে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। জিয়া তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও তার প্রমাণ রেখে গেছেন।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের কাউন্সিল হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ও ১৫ আগস্টের সব শহীদের স্মরণে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

হানিফ বলেন, ‘আমি ১০-১২ বছর আগে থেকে বলে আসছি, যারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে তারা ছিল ভাড়াটে খুনি। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ছিল একাত্তরের পরাজয়ের চরম প্রতিশোধ। ক্ষমতা দখলকারী জিয়া জাতিকে বিভক্ত করেছিলেন। তাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে এর পেছনের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। ধীরে ধীরে এসব কুশীলবদের মুখোশও উন্মোচিত হচ্ছে।’

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট। আমি বিগত কয়েক দিন সিলেটে ছিলাম। আমি অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জিয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। একজনও বলেননি তারা জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে দেখেছেন। পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে থাকা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে সেই ধারাবাহিকতায় বজায় রেখেছেন। ১৫ আগস্ট সমগ্র জাতি যখন বিনম্র শ্রদ্ধায় শোক দিবস পালন করে সেই সময় খালেদা জিয়া মিথ্যা জন্মদিনের কেক কেটে প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ক্ষোভ।’

হানিফ বলেন, ‘পাকিস্তানের এজেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমনিটি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেছিলেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমকে পুনর্বাসন করেছেন, নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন এবং একে একে রাজাকারদের মন্ত্রিসভায় জায়গা দিয়েছেন। স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। পৃথিবীর কোনো দেশেই যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয় না। এদেরকে আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ইতিহাসের সবসময় মহানায়কের সৃষ্টি হয় না। কালের পরিক্রমায় দু’য়েকজনকে দেখা যায়। যুগে যুগে একজন মহানায়কের সৃষ্টি হয়। মহানায়করাই ইতিহাস রচনা করেন। ঠিক এমনি একজন মহানায়ক ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

হানিফ বলেন, ‘তিনি শৈশবকাল থেকেই বাঙালিকে স্বাধিকার, মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং জাতিকে দেখিয়েছিলেন। হাজার বছর ধরে অগণিত মুক্তিকামী স্বাধিকারের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি শুধু স্বপ্ন দেখেননি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই তিনি উন্নয়নে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর, নির্মমতম হত্যাকাণ্ড। যার সঙ্গে ইতিহাসের কোনো হত্যাকাণ্ডের তুলনা চলে না।’

হানিফ বলেন, ‘যারা একাত্তরে আমাদের কাছে পরাজিত হয়েছিল, তাদের পরিকল্পনা ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যাতে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার হয়েছে। তাদের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্তদের রায় কার্যকর হয়েছে। এখনো অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক। দ্রুত পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে।’

আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা। এছাড়াও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান, সহ-সভাপতি বশির আহমদ ভূইয়া ও মোহাম্মদ হোসাইন প্রমুখ।

আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কমিশন করার দাবি জানান বক্তারা।

প্রকৌশলী রওনক হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি ও ডুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী এম হাবিবুর রহমান।

এই বিভাগের আরও খবর