chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ফুলের সাথে পচন ধরছে ভাগ্যেও!

ইফতেখার নিলয়: নেই ক্রেতা, সেই সাথে নেই পর্যাপ্ত ফুলেরও সরবরাহ। ক্রেতা সংকটে ফুলে পচন ধরে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে ফুলের সাথে পচে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের ভাগ্যও। তাদের আয়ে পড়েছে ভাটা। 

চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ ফুল ব্যবসায়ীরাই এখন ভালো নেই। বছর দেড়েক ধরে চলা মহামারি পরিস্থিতি তাদের ঠেলে দিয়েছে সীমাহীন বিপদে। আগে বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা ও বিভিন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও ফুলের চাহিদা থাকতো বেশ। ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের তৈরি হচ্ছে ঋণের বোঝাও।

চট্টগ্রামে বর্তমানে ৪০০ ফুল ব্যবসায়ী রয়েছে এবং এ খাতে জড়িতদের সংখ্যা সবমিলিয়ে প্রায় হাজার তিনেক। এদের সবার পরিবারেরই অবস্থা এখন পেটে-ভাতে। ১৯ আগস্ট থেকে ধারনক্ষমতার ৫০ শতাংশ উপস্থিতির শর্তে কমিউনিটি সেন্টারগুলো খুলে দেওয়া হলেও ভাগ্যের চাকার গতি বাড়েনি ফুল ব্যবসায়ীদের। যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও চকরিয়া থেকে ফুলের চালান আসাও কমে গেছে আগের তুলনায়।

নগরীর ডিসি হিলের পাশে অবস্থিত শাহ মজিদিয়া রশিদিয়া পুষ্প বিতানের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ মোজাম্মল হক চট্টলার খবরকে বলেন, ব্যবসা এখন ১৫-২০ শতাংশ। গতকাল আমার এক খালাতো ভাইয়ের বিয়ে হলো, তারা কোনো গায়ে হলুদ করে নাই। করলে তো আমিও কিছু রোজগার করতে পারতাম। করোনায় বিয়ে একেবারেই ছোটো পরিসরে হচ্ছে, ফুলের চাহিদা নেই বললেই চলে। অবস্থা তো সবার খারাপ, মানুষের টাকা থাকলে তারপর শৌখিনতাকে প্রাধান্য দিবে একজন।

মাধবীলতা ফুলের দোকানের পরিচালক মোহাম্মদ সাদ্দাম আমাদের বলেন, ২২ বছর আমাদের এই ব্যবসার বয়স। এতোটা কঠিন সময় আমরা পার করছি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কোনো অনুষ্ঠান না থাকলে ফুল তো বিক্রি হবেনা। আমাদের অবস্থাও খুবই করুণ। কাঁচা ফুলের চাহিদা এখন একেবারেই শূণ্যের কোটায়। কোনোপ্রকার উৎসব নাই, কিছু নাই, ব্যবসা হবে কীভাবে?

জানতে চাইলে ফেরদৌস ওয়েডিংয়ের মালিক ইকবাল বলেন, আমরা ইভেন্টের কাজ বেশি করি। করোনার কারণে কাজ অনেক কম। বিয়ে বা যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান যতদিন পর্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে বা বড় পরিসরে আয়োজন হবেনা, ততদিন পর্যন্ত ব্যবসা চাঙা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই।

চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম বলেন, আমি ব্যবসা করি ৩২ বছর। আমাদের মোট ফুল ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৪০০। বর্তমানে সব ব্যবসায়ীদের যে কি হাল- এটা বলে কাউকে বোঝানো অসম্ভব। আমাদের রোজগারই নাই ঠিকমত। ফুল আনতে পারিনা ক্রেতার অভাবে পচে যাওয়ার ভয়ে। আর বিক্রি না হলে ফুল আনবো কী জন্য ?

এছাড়াও, যেসকল ফুলের দোকানে বাড়তি ফুলের যোগান রয়েছে তাদের সময় পার করতে হয় চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়।

বেশিরভাগ দোকানে পচা ফুলের দৃশ্যও নজরে এসেছে। মজুদ থাকা ফুল কখন বিক্রি হবে এ অপেক্ষা আর দুশ্চিন্তায় কপালে চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েই চলেছে। কবে নাগাদ ব্যবসা ফিরবে স্বাভাবিক অবস্থানে সবারই তা অজানা।

পরিবারের দৈনন্দিন খরচ চালাতে হিমশিম খাওয়া ব্যবসায়ীদের বর্তমান প্রত্যাশা হলো মহামারি কেটে গিয়ে ব্যবসায়ের আগের সেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাওয়া।

ইনি/চখ/এনএনআর

এই বিভাগের আরও খবর