chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ই-অরেঞ্জ: মালিক সোনিয়াসহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের এক হাজার একশ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় অনলাইন মার্কেটপ্লেস ই-অরেঞ্জের মালিকসহ পাঁচজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বুধবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এ আদেশ দেন।

যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমান উল্ল্যাহ এবং বিথী আক্তার ও কাউসার আহমেদ। এর মধ্যে বুধবার রাতে আমান উল্ল্যাহকে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ। এর আগে মঙ্গলবার সোনিয়া ও তার স্বামীকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ই-অরেঞ্জে বিপুল অঙ্কের কালোটাকা বিনিয়োগের তথ্য পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। কালোটাকার অনুসন্ধান করতে গিয়ে ইতোমধ্যে পুলিশের গুলশান জোনে কর্মরত এক ইন্সপেক্টরের বিপুল ধন-সম্পদের খোঁজ মিলেছে। ওই পুলিশ ইন্সপেক্টর ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিনের আপন ভাই। এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা রিপোর্ট সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

আদালত সূত্র জানায়, গুলশান থানায় করা প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় আসামিদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেন। মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর ছিদ্দিকের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে সোনিয়া ও তার স্বামী আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

প্রতারণার শিকার হওয়া গ্রাহক তাহেরুল ইসলাম মঙ্গলবার ই-অরেঞ্জের মালিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় প্রতারিত আরও ৩৭ গ্রাহক সাক্ষী হিসাবে আছেন। মামলায় তাহেরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ২১ এপ্রিল পণ্য কেনার জন্য ই-অরেঞ্জকে অগ্রিম টাকা দেন। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। টাকাও ফেরত দেয়নি তারা। প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় গুলশানের ১৩৬/১৩৭ নম্বর রোডের ৫/এ ভবনে গেলেও পণ্য ডেলিভারি পাওয়া যায়নি।

এছাড়া বিভিন্ন আউটলেটের গিফট ভাউচার বিক্রি করা হলেও টাকা আটকে যায়। ফলে আউটলেটগুলো পণ্য ডেলিভারি বন্ধ করে দেয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, করোনাকালে গ্রাহকরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না। বরং প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের এক হাজার একশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

সূত্র বলছে, গ্রাহকদের অভিযোগ অনুযায়ী ই-অরেঞ্জের দেনার পরিমাণ এক হাজার একশ কোটি টাকা বলা হলেও প্রকৃত দায়-দেনার পরিমাণ আরও বেশি। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ই-অরেঞ্জকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তাদের সম্পদ, দায় ও চলতি মূলধনের পরিমাণ কত তা জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া সরবরাহকারীর কাছে বকেয়া থাকলে তার পরিমাণ কত তাও জানাতে হবে।

যা আছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে : ই-অরেঞ্জের প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ইতোমধ্যে একটি চাঞ্চল্যকর গোয়েন্দা প্রতিবেদন জমা পড়েছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে। সেখানে বলা হয়েছে- ই-অরেঞ্জের মূল পরিকল্পনাকারী পুলিশের এক কর্মকর্তা। যিনি বর্তমানে গুলশান জোনের একটি থানায় ইন্সপেক্টর তদন্ত হিসাবে কর্মরত আছেন।

এ পুলিশ কর্মকর্তাই মূলত আড়ালে থেকে বোনের নামে ই-অরেঞ্জ নামের কোম্পানিটি খোলেন। তবে অজ্ঞাত কারণে জুলাই থেকে নাজনিন নাহার বিথী নামের এক নারীকে মালিক বানিয়ে কোম্পানিতে বসানো হয়। এছাড়া সোনিয়া মাহজাবিনের স্বামী মাসরুক রহমান ওরফে সুমন ই-অরেঞ্জের উপদেষ্টার পদে আছেন। গোপনে ই-অরেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হলেও তার পেশা ভিন্ন। তিনি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত।

ওই প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ইন্সপেক্টরের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্যও উল্লেখ করা হয়। সেখানে রাজধানীতে ৪টি ফ্ল্যাট, একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানির ডিলারশিপ, কৃষি জমি, অভিজাত ক্লাবের সদস্য পদসহ শত কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে অভিজাত আবাসিক এলাকা নিকেতনে। এর একটিতে বসবাস করছেন সাগর নামে তার এক খালু।

এছাড়া বিটিআই ল্যান্ডমার্ক টাওয়ারের পঞ্চম ফ্লোরে বাণিজ্যিক স্পেস, ইউনিলিভার ইন্টারন্যাশনালের ডিলারশিপ, টিএন্ডজি নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। টিএন্ডজির দুটি শাখার একটি উত্তরা গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ এবং অপরটি গুলশানে ডিসিসি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। এছাড়া পূর্বাচলে ৩ নম্বর সেক্টরে একটি প্লট, কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন একটি আবাসিক এলাকায় ই এবং আই ব্লকে দুটি প্লট, খাগড়াছড়িতে রিসোর্ট নির্মাণের জন্য জায়গা, গ্রামের বাড়িতে ৫শ বিঘা কৃষিজমি। পাশাপাশি বিদেশেও তার মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ রয়েছে। গুলশানের আমেরিকান ক্লাব এবং জামান ক্লাবের সদস্য তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর