এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টাইগারপাস রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরীতে নির্মানাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টাইগারপাসকে বাদ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদ।
আজ রবিবার (২২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে করে এই দাবী জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া।
লিখিতে বক্তব্যে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিপ্লবের তীর্থস্থান চট্টগ্রামে রয়েছে অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য। চট্টগ্রামে হাজার হাজার কোটি টাকার বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব ও পরিধি আরও বহুগুন বেড়ে যাবে। তবে সমন্বয়হীনতা ও প্রকল্প পরিকল্পনায় গলদের কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে। একইসাথে বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়। প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা এড়ানোর জন্য সার্বিক তদারকি যেমন বাড়ানো দরকার তেমনি ইতিহাস ঐতিহ্য এবং পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টিও সমভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের অন্যতম একটি হচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। যার নির্মানকাজ দ্রুত গতিতে চলেছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে এটি আর একটি মাইলফলক হিসেবে সংযোজিত হবে। তবে আমরা হাজির হয়েছি পরিবেশ এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার একান্ত তাগিদ থেকে। আমরাও বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, আমাদের চট্টগ্রামে একটি টাইগারপাস আছে। এটি আমরা পয়দা করিনি, প্রকৃতির দান। এই টাইগারপাসের প্রকৃতি প্রদত্ত অপরূপ নান্দনিক সৌন্দরয ইট-পাথরের কংক্রিটের নিচে ঢাকা পড়ে যাক তা আমরা চাই না। আমরা চাই টাইগারপাসের মোড় থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত অংশটুকু প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হোক। অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী এই টাইগারপাসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন রক্ষা পায় সেই আকুতি জানাই।
মাহমুদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে বলতে চাই, এলিভেভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্তটি টাইগারপাসের পরিবর্তে দেওয়ানহাট ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে নামানো হোক। তাহলে আমাদের ঐতিহ্য টাইগারপাস যেমন রক্ষা পাবে তেমনি ১০০০ কোটি টাকার মত প্রকল্প ব্যয়ও সাশ্রয় হবে। তাই অবিলম্বে প্রকল্পে পরিকল্পনা সংশোধন করে যেন দেওয়ানহাটে নামানোর মত ব্যবস্থা করা হয় সে দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে আমরা বলছি, দেওয়ানহাট মোড় থেকে নৌবাহিনী সিনেমা হলের পাশ দিয়ে যে পুরনো রাস্তাটি আছে (দেওয়ানহাট ব্রীজ হওয়ার পর যেটি বন্ধ হয়ে যায়) তা আবার চালু করে সেখানে রেললাইনের উপর ওভারপাস তৈরি করে দেওয়া হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নেমে যানবাহন এই ওভারপাস হয়ে টাইগারপাস অতিক্রম করবে। বিদ্যমান রেলওয়ে ব্রীজটির যেহেতু মেয়াদ শেষ তা ভেঙ্গে সেখানেও নতুন করে আরো একটি ওভারপাস তৈরি করা হলে সেটি দিয়ে আগ্রাবাদমুখী যানবাহন চলাচল করবে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ফ্লাইওভারটি যদি টাইগারপাসের ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তা হবে খুবই বিপজ্জনক। ধনিয়ালাপাড়া থেকে মনসুরাবাদের দিকে যে ফ্লাইওভারটি গেছে তার উপর দিয়ে আনতে হবে লালখানবাজারমুখী ফ্লাইওভারটি। এতে এটি আনতে হবে ৮০ ফুট উচ্চতায়। যার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হবে। আর এত উচ্চতায় ভারী যানবাহন কিভাবে উঠবে? যদি বন্দরের ভারী যানবাহন চলাচল করতে না পারে তাহলে সেই ফ্লাইওভার কেন?
সংবাদ সম্মেলন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক জসিম চৌধুরী সবুজ ও সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় শ্রমিক লীগ চট্টগ্রামের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, হাবিবুর রহমান, আমীর উদ্দিন, হাসান মারুফ, প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম শোভন, একে জাহেদ, গৌতম রায়, বিশ্বজিৎ চৌধুরী প্রমুখ।
এসএএস/নচ