চট্টগ্রামে বেড়েছে মশার উপদ্রব, ডেঙ্গু আতঙ্ক
নিজস্ব প্রতিবেদক :করোনা মহামারির মধ্যে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়েছে এডিশ মশার উৎপাত। করোনায় বিপর্যস্ত জনজীবনে চট্টগ্রামে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টি আর রাজধানীর ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রামেও হঠাৎ করে বেড়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। এডিস মশাবাহিত এই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক দিন ধরেই বাড়ছে। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে; তার সঙ্গে এর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় রক্তের প্লাটিলেটের চাহিদাও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নগরীর বেশকিছু এলাকায় মশার উপদ্রব হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা ডেঙ্গু আক্রান্তের ভয়ে সময় পার করছেন বলে জানা যায়। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুইজন নারী।
সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই নগরীর মেরিন সিটি মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ বছরের এক তরুণী।
এর আগে গত ৫ জুলাই চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৫ বছর বয়সি লালখান বাজার এলাকার গৃহিণী। চলতি বছর প্রথম তিনি মারা যান ডেঙ্গুতে। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে দুইজন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। এছাড়া নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার আরও সাতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ ও নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার।
গত জুন পর্যন্ত ৬ মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী ছিল মাত্র একজন। এক মাসে দুইজন মৃত্যু ও সাতজন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, নগরীর লালখান বাজার, দেওয়াহাট এলাকায় নতুন করে অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। দুই এলাকায় এডিশ মশার লার্ভা ও পিউপির অস্তিত্বও মিলেছে।
এছাড়া ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলা থেকেও দুইজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নগরীর দুইটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। কারণ, এখন বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব বাড়ছে। পুরোনো লার্ভা থেকে মশার জন্ম হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রামে মশার উপদ্রব বাড়লেও মশক নিধনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই সিটি করপোরেশনের। এমন পরিস্থিতিতে নগরের ১৫টি স্পটে এডিস মশার লার্ভা শনাক্তের বার্তা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গবেষক দল।
এদিকে বর্ষার শুরুতে চট্টগ্রাম নগরীতে মশার উপদ্রব বেড়ে গেলেও তা দমন করতে নগরীতে কালো তেল ছিটিয়ে এডিস মশার লার্ভা দমন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনার জন্ম নিয়েছে। যদিও চসিকের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, উড়ন্ত মশা নয়, বরং মশার প্রজননক্ষেত্র বা লার্ভা মারার ওপর গুরুত্ব দিয়েই আপাতত চলবে ডেঙ্গু রোধের এই কার্যক্রম। কিন্তু ফগার মেশিনের সংকট ও পরিণত মশা মারার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ দুটি কারণেই এখন উড়ন্ত মশা মারায় সেভাবে আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন না সংস্থাটির কর্তারা। তাই আপাতত কালো তেল আর লার্ভিসাইড ছিটিয়ে প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসের অভিযানে নেমেছে তারা। ডেঙ্গু মৌসুমের মাঝখানে এভাবে তড়িঘড়ি করে শুধু লার্ভা মেরে এডিস মশার বংশ বিস্তার কতটুকু রোধ করা যাবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। অথচ চার মাস আগে গত মার্চে মশার ওষুধের কার্যকারিতা যাচাইয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা দলকে দায়িত্ব দিয়েছিল চসিক। তবে বাজেট জটিলতায় সে কাজ শুরু হয় অনেক দেরিতে, গত ৫ জুলাই।
এ ব্যাপারে চসিকের গঠিন কমিটির আহ্বায়ক চসিকের প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, গবেষক দলের প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত আমরা মশার প্রজননক্ষেত্রে লার্ভিসাইড আর কালো তেল ছিটিয়ে নিয়মিত কার্যক্রম চলবে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবে। সেটি পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে আমরা বড় মশা নিধন কাজও শুরু করব।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার’দের একটি করে দল গঠন করা হয়েছে। তাদের পরিচয়পত্র আর নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওয়ার্ডের আকার অনুযায়ী ৩০ থেকে ৪০ জন করে দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবক রাখা হচ্ছে। তাদের কাজ হচ্ছে কোভিড নিয়ে সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোধে মাইকিং ও সচেতনতা নিয়ে কাজ চালানো। চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে বর্তমানে মাত্র ৫০টি ফগার মেশিন চালু, আর নষ্ট আছে ৪০টির মতো।
এসএএস/