জিম্বাবুয়েকে টানা পাঁচবার হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা
খেলা ডেস্ক: মঙ্গলবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের দেয়া ২৯৯ রানের টার্গেট টপকে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ।
এ জয়ের মাধ্যমে ৩-০তে সিরিজ জিতলো তামিমবাহিনী। হোয়াইটওয়াশ হল জিম্বাবুয়ে। এ নিয়ে পঞ্চমবার টাইগারদের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো জিম্বাবুয়ে।
এর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বরে ঢাকায় তিন মাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করে বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৫-০ ব্যবধানে পরাজিত করেছিল বাংলাদেশ দল।
২০১৮ সালে ৩-০ ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৯ সালেও জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দেয় বাংলাদেশ।
এর আগে মঙ্গলবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টসে জিতে শুরুতে ফিল্ডিং বেছে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
বাংলাদেশ দলে দুটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে পেসার শরিফুল ইসলামকে, আর ইনজুরির কারণে বাদ পড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের পরিবর্তে দলে এসেছেন নুরুল হাসান সোহান ও মোস্তাফিজুর রহমান।
দিনের প্রথম ইনিংসে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে সব উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান সংগ্রহ করেছে জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের শুরুর দিকে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান।
উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলেন রেগিস চাকাভা ও তাদিওয়ানাশে মারুমানি। প্রথম ৮ ওভারে কোনো সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারে আক্রমণে এসেই দলকে উল্লাসের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন সাকিব।
সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেটি মাহমুদ উল্লাহর জন্য মাইলফলকের ম্যাচ। ২০০তম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নেমেছেন তিনি। বোলিংও করতে আসেন অষ্টম ওভারে। তার পরের ওভারেই আঘাত হানেন সাকিব। আউট হওয়ার আগে খেলা ১৯ বলে ৮ রান করতে পেরেছেন জিম্বাবুয়ের বাঁহাতি ওপেনার মারুমানি।
এরপর টেইলর ও চাকাভা ৪২ রানের জুটি গড়ে ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে টেইলর ২৮ রানের ইনিংস খেলে মাহমুদউল্লাহর শিকার হন। তবে চারে নামা মায়ার্সকে নিয়ে ফের রানের চাকা সচল রাখেন চাকাভা। তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটি।
দুজনের জুটিতে আসে ৭১ রান। মায়ার্সকে বোল্ড করে এই জুটিও ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ। পরের ওভারে ওয়েসলি মাধেভেরেকে (৩) সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন ইনজুরির কারণে প্রথম দুই ম্যাচ মিস করা মোস্তাফিজুর রহমান।
১৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা জিম্বাবুয়ের ভরসা হয়ে ক্রিজে ছিলেন চাকাভা। ছুটিছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির পথেও। কিন্তু তাসকিনের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে। তবে এরপর থেকেই শুরু বার্ল ও রাজার লড়াই।
দুজনেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ফিফটি। ৪৮ বলে ক্যারিয়ারের ১৭তম ওয়ানডে ফিফটির দেখা পান ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা রাজা। অন্যদিকে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৩৮ বলে ফিফটি তুলে নেন বার্ল। দুজনের জুটিতে আসে ১১২ রান, মাত্র ৮০ বলে।
একসময় ৭ ওভারে ৭৯ রান খরচ করে উইকেটশূন্য থাকা সাইফউদ্দিন ইনিংসের ৪৯তম ওভারে পর পর দুই বলে বার্ল (৫৯) ও ডোনাল্ড তিরিপানোকে বিদায় করেন।
হ্যাটট্রিকের দেখা না পেলেও ওই ওভারের শেষ বলে টেন্ডাই চাতারাকে বোল্ড করে ফেরান ডানহাতি পেসার। এরপর ব্লেসিং মুজারাবানিকে (০) বোল্ড করে স্বাগতিকদের ইনিংস গুটিয়ে দেন মোস্তাফিজ।
বল হাতে ৩টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজ। ২ উইকেট গেছে মাহমুদউল্লাহর ঝুলিতে। ১টি করে উইকেট গেছে তাসকিন ও সাকিবের দখলে। নির্ধারিত ওভারে ২৯৮ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে।
২৯৯ রানের বড় টার্গেটের জবাব দিতে নেমে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে, ৫ উইকেট ও ১২ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ।
শুরু থেকেই আগ্রাসী ভঙ্গিতে ব্যাট চালাতে থাকেন তামিম ইকবাল। উদ্বোধনী জুটিতে লিটন দাসের সঙ্গে গড়েন ৮৮ রানের জুটি। এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গেও গড়েন ৫৯ রানের পার্টনারশিপ।
এই দু’জন বিদায় নিলেও সাবলীলভঙ্গিতে ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন তামিম। ঝোড়ো গতিতে খেলে ৮৭ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। এরমধ্যে হাঁকান ৭টি চার ও ৩টি বিশাল ছক্কা।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তামিমের ১৪তম সেঞ্চুরি। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪র্থ। তবে ১১২ রান করে আউট হন তামিম। টিরিপানোর পরের বলেই আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও।
২ বলে ২ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন নুরুল হাসান সোহান ও মোহাম্মদ মিঠুন। দু’জনে গড়েন ৬৪ রানের জুটি। মিঠুন বিদায় নেন ৩০ রান করে।
তবে দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর দলে জায়গা পাওয়া নুরুল হাসান সোহান অটল ছিলেন। দলকে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। তার সঙ্গী ছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। সোহান অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে। আর আফিফের সংগ্রহ ২৬ রান।
আরএস/এমআই