chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

জ্বর-সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন রোগীরা

রকিব কামাল : নুসরাত জাহান। পেশায় একজন এনজিও কর্মী। বুধবার অফিস শেষে বাসায় ফেরার পর কিছুটা শারীরিক অসুস্থতা বোধ করেন।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে জ্বরের সাথে দেখা দেয় ক্ষুধামন্দা। শারীরিক অবনতির মুখে বাধ্য হয়ে নুসরাত ছুটেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

মুঠোফোনে নুসরাত চট্টলার খবরকে বলেন, রাতে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়। বাসার কাউকে বুঝতে না দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু রাতে পুরো শরীরে ব্যথা শুরু হয়। জ্বর আসে। সারারাত ঘুমাতে পারিনি। পরে হাসপাতালে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসি।

নুসরাতের কথায় মিল পেলাম ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাবিলের বক্তেব্যে। তিনি জানালেন নুসরাত ছাড়াও জ্বর-সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা। হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগীর করোনা উপসর্গ রয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক।

রোগী ভর্তির এমন চাপকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন তিনি। চট্টলার খবরকে ড. নাবিল বলেন, গত বছর জুলাইয়ে এত রোগীর চাপ ছিল না। গত কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিক রোগী বেড়েছে। অধিকাংশ রোগী জ্বর, সর্দি ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। যাদের করোনা উপসর্গ রয়েছে।

বর্তমানে হাসপাতালটিতে ১৮ জন করোনা রোগী ছাড়াও সাতজন করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন এক উপজেলাতে এক সপ্তাহের আগে লকডাউন ঘোষণা করে। এরপর সংক্রমণ কমেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় এই উপজেলায় ২০ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়ে।

স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিনামূল্যে করোনার পরীক্ষা চালুর পর মানুষের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। নগরের পাশাপাশি উপজেলাতেও পরীক্ষা বেড়ে যায়। ফলে    নগর ছাড়িয়ে উপজেলাতেও করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যু দুই-ই বাড়ে। উপজেলার মধ্যে হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বরসহ বিভিন্ন উপসর্গে নিয়ে আসা রোগীর চাপ বেড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। ঘরে ঘরে দেখা মিলছে জ্বর-সর্দির।

এর মধ্যে হাটহাজারীর পরিস্থিতি যেনও আরও নাজুক। চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলার মধ্যে এই উপজেলায় সর্বোচ্চ ৫৮ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ফার্মেসীতে প্যারাসিটেমল, নাপাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এক পাতা ওষুধের বদলে দেওয়া হচ্ছে তিন থেকে চারটি ওষুধ।

রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে বলে জানালেন হাটহাজারী উপজেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ এসএম ইমতিয়াজ হোসাইন। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, লকডাউনের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওষুধ সরবরাহের কিছুটা সমস্যা হতে পারে। এছাড়া জ্বর, সর্দি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ফার্মেসী থেকে অতিরিক্ত ওষুধ কিনে নিচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে বলে জানালেন ইমতিয়াজ।

অপরদিকে চলমান লকডাউন আরোও কঠোরভাবে অনুসরণে জোর দিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দীন। তিনি বলেন, দেড় বছর ধরে এসব নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত হাসপাতালে জ্বর সর্দি নিয়ে মানুষ ভিড় করছেন। পরীক্ষা বেড়ে যাওয়ায় শনাক্তের সংখ্যা বেশি বলে মত দেন তিনি। মনের জোরে আর কতদিন। নিজ নিজ অবস্থান থেতে সচেতন হতে হবে।

এএমএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর