চমেক হাসপাতালে ১৫৬ চিকিৎসককে একযোগে বদলি
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতালে ১৫৬ জন চিকিৎসককে একসঙ্গে বদলি করা হয়েছে; এতে চট্টগ্রাম মেডিকেলের কোভিড ও নন–কোভিড চিকিৎসা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া এক প্রজ্ঞাপনে চমেকসহ সারা দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের বদলির নির্দেশনা জারি করা হয়।
বদলির নির্দেশনা–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত স্বাস্থ্য বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সংযুক্তিতে পদায়ন করা হলো।
উপসচিব জাকিয়া পারভিন এই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। বুধবারের মধ্যে তাঁদের পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
চমেক হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডির পাশাপাশি খাগড়াছড়ি, ফেনী এবং আশপাশের জেলার জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বদলি আদেশ দেওয়া হয়েছে।
কোভিডের পাশাপাশি চমেক হাসপাতালের নন–কোভিড বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা বদলির আদেশ পেয়েছেন। আদেশটি নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
এ বিষয়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিভাগীয় সমন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মূহুর্তে এ জনপদের প্রধান এবং একমাত্র নন কোভিড টারশিয়ারি হাসপাতাল, পাশাপাশি এ হাসপাতাল দু’শতাধিক কোভিড রোগীরও ভরসাস্থল। এ হাসপাতাল থেকে দেড় শতাধিক শিক্ষক-চিকিৎসকের তাৎক্ষণিক এ গণবদলি হাসপাতালটির চিকিৎসাব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি করবে নিশ্চিত। চিকিৎব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘এ আদেশে যাদের বদলি করা হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই স্ব- স্ব বিভাগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ। কোভিড চিকিৎসা দিতে প্যাথলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট, নিউরোসার্জন, জেনারেল সার্জন, দন্তরোগ, চক্ষুরোগ, নাক-কান ও গলা রোগ, শিশুরোগ ইত্যাদি সব বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা কী? উপজেলা বা সদর হাসপাতালে এসব বিশেষজ্ঞ শিক্ষক-চিকিৎসকের ভূমিকাই বা কী হবে। তাই এ আদেশের পূর্বে প্রয়োজন ছিল প্রায়োরিটি নির্ধারণ করা। হাসপাতালগুলোতে মূলত প্রয়োজন আইসিইউতে কাজ করেন এমন চিকিৎসক এবং কিছু মেডিকেল অফিসার। তা অনুধাবন না করে এ গণবদলিতে আমলাগণ দায় এড়ানোর পথ খুঁজেছেন মাত্র। এতে সমস্যার সমাধান তো হবেই না, সংকটই বাড়তে পারে শুধু।’
ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘করোনা ডেডিকেটেড চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে শ’খানেক করোনা রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি থাকেন। এ হাসপাতালটি তাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার বা সহকারী সার্জন নিয়ে গত পনেরো মাস সেবা দিয়েছে কোন অভিযোগ ছাড়াই। এ হাসপাতালে আরো ৬০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংযুক্তিতে প্রেরণের কারণ কী? একইভাবে বিআইটিআইডিতে নতুন করে আরো ১৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাজ কী হবে? কোভিড চিকিৎসাকল্পে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭-৮ জন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়নের সিদ্ধান্তটি একেবারে অন্ত:সারশূন্য ও হাস্যকর ঠেকেছে।’
এ গণবদলির কারণে চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটে পড়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বিভাগগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে তা পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, এ হাসপাতাল গড়ে দুই হাজার নন কোভিড রোগীর ভার বহন করে চলে প্রতিদিন, দেড়শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তাৎক্ষণিক বদলিতে এসব রোগীদের দূর্ভোগ এড়ানোর কোন পথ খোলা থাকবে না। হাসপাতাল নন কোভিড রোগীর মৃত্যুহার কিন্তু কোভিড রোগীর মৃত্যুহারের চেয়ে কম নয়।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর জানান, বদলির বিষয়টি জেনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে এসএমএস দিয়ে জানিয়েছি এতে চমেক হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। কারণ, কোভিডের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগ জড়িত। এ ছাড়া আমার হাসপাতালে নন–কোভিড দুই হাজারের বেশি রোগী থাকছে। কোভিড ও নন–কোভিড দুটিই ব্যাহত হবে।
এসএএস/নচ