chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মিরসরাইয়ে যুবক হত্যা: পৌর কমিশনার রাজুর বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের মিরসরাই পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৪ নং ওয়ার্ড কমিশনার শাখের ইসলাম রাজুকে প্রধান আসামি করে মিরসরাই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

শাখের ইসলাম রাজুর গৃহপরিচারিকার সৎপুত্র আজীম হোসেন শাহদাতকে (২০) তার পরিচালনাধীন হোপ-মা ও শিশু হাসপাতালে নির্মম নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ এনে রবিবার (২৬ জুন) মধ্যরাতে মামলাটি দায়ের করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের পিতা মো. আব্দুল বাতেন।

মামলায় কমিশনার রাজু ছাড়াও তার আরো তিন সহযোগী ফরীদ, তারেক ও জাহীদকে আসামি করা হয়। তাছাড়া একই মামলায় অজ্ঞাত আসামি রাখা হয়েছে আরো একাধিক।

নির্মম নির্যাতনে নিহত আজিমের পিতা নিরীহ আব্দুল বাতেন তার অভিযোগে বলেন, শুক্রবার (২৫ জুন) বিকাল ৪টায় আমার ছেলেকে কোন অপরাধে কমিশনার রাজু ধরে নিয়ে এসেছে আমি জানি না।

রাত ৮টায় খবর পেয়ে আমি হোপ হাসপাতালের ৬ষ্ট তলায় কমিশনারের টর্সার সেলে গিয়ে দেখি আমার ছেলেকে কমিশনার রাজুসহ আরো তিন জন এলোপাতাড়ি মারধর করছে।

মারধরের কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকেও মারধর করে ও হুমকি দেয়। আমাকে বলে এখানে কোন কথা বলা যাবে না, একদম চুপ থাকতে হবে। চোখে তাকিয়ে থাকতে হবে কিছু বলা যাবে না।

চোখের সামনে চারটা লোক হাতের লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করে যাচ্ছে ছেলেটাকে। নিজেকে সামলাতে না পারলেও কিছুই করার ছিল না শুধু তাকিয়ে থাকতে হয়েছে।

কমিশনারের লাঠির আঘাতে ছেলের সামনের দুটি দাঁত পড়ে গিয়ে মুখ থেকে রক্ত ঝরছিলো। সামনের টেবিলে একটি বোতলে পানি খেতে চেয়েছিল ছেলেটি, একটু পানি খেতে না পেরে চুপ হয়ে যায় ছেলেটি।

কমিশনারের খাটের পাশেই অচেতন হয়ে পড়ে থাকে আজিম। তার নিথর দেহ টেনে সরাতেই রক্ত লাগে কাউন্সিলর রাজুর তোষকে। নিথর দেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয় আজিমের পিতা আব্দুল বাতেনকে।

এ ছাড়া হুশিয়ার করে দেওয়া হয় যেন কারো কাছে মুখ না খুলে, মুখ খুললেই ছেলের মতো একই পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।

ভয়ে আতঙ্কে আব্দুল বাতেন নিজ সন্তানের নিথর দেহ নিয়ে রওনা হয় বাড়ির পথে। যাত্রা পথে ফেনী সরকারী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আজিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে হাসপাতাল থেকে থানায় খবর দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। সংবাদ পৌঁছে যায় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে।

এ ঘটনায় নিহত আজিমের চাচা বাদি হয়ে প্রথমে দাগন ভূঞা থানায় একটি মামলা করেন। দাগন ভূইয়ার বিভিন্ন আঞ্চলিক পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ হলে টনক নড়ে মিরসরাই প্রশাসনসহ সর্বমহলে।

পরে মিরসরাই থানা পুলিশ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সংবাদকর্মীরা ভিড় জমান রাজু কমিশনারের পরিচালনাধীন হোপ মা ও শিশু হাসপাতালের ৬ষ্ট তলার সেই টর্সার সেলে। টর্সার সেলের দরজায় লিখা আছে শাখের ইসলাম রাজু ম্যানেজিং ডিরেক্টর।

স্থানীয়দের সাক্ষী রেখে ও পুলিশের উপস্থিতিতে তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে টর্সার সেলে তেমন কোন আলামত পাওয়া যায়নি।

পুলিশ ধারণা করছে দীর্ঘ সময় পাওয়ায় সমস্ত আলামত সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে শাখের ইসলাম রাজু। ঘটনার দিন হাসপাতালে কর্মরত ৫ জনের মোবাইল নাম্বারে হাসপাতালের নাম্বার থেকে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। হাসপাতালের নৈশপ্রহরীকেও পাওয়া যায়নি।

সরজমিনে খোঁজ নিতে গেলে অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, প্রায় সময় গভীর রাতে হাসপাতালের উপর তলা (৬ষ্ট) থেকে মানুষের আত্মচিৎকারের শব্দ পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে দেখা যায় নির্যাতনের নির্মমতা।

তবে মুখ খোলার সাহস হয় না কারো। ঘটনার দিন রাতেও মানুষের আত্মচিৎকারের শব্দ ভেসে আসে হাসপাতালের সেই চিলেকোঠা থেকে।

মিরসরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্যানেল মেয়র শাখের ইসলাম রাজুকে প্রধান আসামি ও তার সাথে হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া আরো তিনজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের পিতা।

আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলমান আছে, হত্যাকান্ডের কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে তবে তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

টর্সার সেল সম্পর্কে তিনি বলেন, এরকম শুনা যাচ্ছে তবে তেমন কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তারপরও ব্যাপক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলে ওটার ব্যাপারেও ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে পৌরসভা নির্বাচনকালীন তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী নিজাম উদ্দিনের বড় ভাই ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীনের দুই পা ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে কমিশনার রাজুর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায়ও মামলা রয়েছে।

এ বিষয়ে কমিশনার প্রার্থী নাজিম উদ্দিন বলেন, কমিশনার রাজু রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যাবহার করে এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে।

তার বিপক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় আমার বড় ভাইয়ের দুই পা ভেঙ্গে দিয়েছে। সেই ঘটনায় মামলা করা হলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

তাছাড়া মানুষদের জিম্মি করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না।

আরএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর