বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে ভোগান্তি গণপরিবহনে
রকিব কামাল : সুমাইয়া রহমান। পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। কর্মস্থল মুরাদপুরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেইটে। ওই রুটে চলাচলকারী তিন নম্বর একটি বাস আসতেই, অপেক্ষমাণ যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে সেখানে উঠে পড়েন। অনেক কষ্টে সুমাইয়ার বাসে জায়গা হলেও গাদাগাদি করে বসতে হয় তাকে। তিন নম্বর রুটের বাসগুলো পূর্বে নগরের মুরাদপুর পর্যন্ত ১৫ টাকায় যাত্রী সেবা দিয়ে আসতো।
করোনায় স্বাস্থ্য-ঝুঁকি এড়াতে গণপরিবহনগুলোতে ৬০ শতাংশ ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। একইসঙ্গে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানতে সুরক্ষা-সামগ্রী নিশ্চিতের নির্দেশনা দেয়। সে অনুযায়ী যাত্রীদের ১৫ টাকার বদলে ৩০ টাকার খরচায় মুরাদপুর আসছেন। পাশের সিট খালি রাখার কথা থাকলেও, সেই নির্দেশনাকে আমলে নিচ্ছে না পরিবহন শ্রমিকরা। অতিরিক্ত ভাড়ার সঙ্গে গাদাগাদি করে চলছে যাত্রী পরিবহন।
সুমাইয়া চট্টলার খবরকে বলেন, ভাড়া নির্ধারণের অজুহাতে ১৫ টাকা ভাড়া ৩০ টাকা কেটে নেওয় হচ্ছে। অথচ পাশাপাশি সিটে ইচ্ছেমতো যাত্রী নিচ্ছে। নিরুপায় হয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। এসব দেখেও না দেখার ভান করে করে আছেন অনেকে। কেবল এক নম্বর রুটের পরিবহনগুলো নয়। নগরে অধিকাংশ রুটের গণপরিবহনগুলোর চিত্র এমন।
মালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্যে জিম্মি সাধারণ মানুষ। আসন সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলছে পরিবহন। যে যেভাবে পারছে যাত্রীদের জিম্মি করে লুটে নিচ্ছে বাড়তি ভাড়া। বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ করলে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে।
সাধারণ যাত্রীদের অনেকের সাথে কথা হয় চট্টলার খবরের। অধিকাংশ যাত্রী গণপরবিহনের ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি দেখছেন তামাশা হিসেবে। প্রতিদিন অফিস শেষে দেওয়ানহাট মোড় থেকে টেম্পুযোগে বাসায় ফেরেন নির্মাণ শ্রমিক মোহাম্মদ কাউসার আজাদ।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় সেভাবে বাড়েনি। এমন দুর্দিনের মধ্যে আমাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আরেক যাত্রী ফরিদ রহমান তাসিফ ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, আমাদের মতো যাত্রীদের গণপরিবহন ছাড়া চলাচলের কোনো উপায় নেই। করোনার মধ্যে সরকার অফিস-আদালত শপিং মল খুলে দিলেও কেবল গণপরবিহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। সেখানে কি স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। এমন তামাশার আচরণের কারণে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
নগরের বহদ্দারহাট মোড় থেকে পতেঙ্গা রুটে চলাচল করা ১০ নম্বর রুটেরে পরিবহনগুলো ১৫ টাকার বদলে ৩০ টাকা, চকবাজার থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত টেম্পুতে ১৫ টাকার বদলে ৩০ টাকা, নিউ মার্কেট থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত টেম্পুতে ১০ টাকার বদলে ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মুরাদপুর হতে ওয়াসা, ওয়াসা হতে দেওয়ানহাট, দেওয়ান হাট হতে জিইসি, দেওয়ানহাট হতে নগরের কাজীর দেউড়ি, জামালখান পর্যন্ত পর্যন্ত স্বল্প দূরত্বে ৫ টাকার ভাড়া ক্ষেত্র-বিশেষে ১০ থেকে ২০ টাকা রাখা হচ্ছে।
এর মধ্যে সকালে অফিসগামী যাত্রী ও অফিস শেষ করে অপেক্ষা করা যাত্রীদের ভোগান্তির যেনো অন্ত থাকে না।
তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক চট্টলার খবরকে বলেন, পরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায় এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে সার্বক্ষণিক নজরধারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের পাঁচ থেকে ছয় জন ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে আসছেন। এদিকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী।
তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, বর্ধিত ভাড়ার বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা পূর্বের ন্যায় পরিবহনের চলাচলের দাবি জানিযে আসছি। কিন্তু সরকার শপিং মল ও অফিস আদালত খুলে দিলেও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা সরাচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মামলা দিয়ে দায় সারলে হবে না।
আরকে/এএমএস/চখ