chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

করোনাকালে বেশি ক্ষতির শিকার নারী শ্রমিক

আজ মহান মে দিবস

ডেস্ক নিউজ : আজ মহান মে দিবস। করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নারী শ্রমিকরা। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। অনেকের মজুরি ও কাজ দুইই কমে গেছে। ফলে অনাহার-অর্ধাহারে অনিরাপত্তায় কাটছে তাদের জীবন। 

অনেকে আবার করোনাকালীন সময়ে লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু কোনো কারণে অধিকারবঞ্চিত হলে প্রতিকারের সুযোগ পাচ্ছেন না। পুরুষ শ্রমিকদের কাজে রাখলেও নারীদের বাদ দিচ্ছেন। মজুরির ক্ষেত্রেও পুরুষ শ্রমিককে ৪০০ টাকা দিলেও নারী শ্রমিককে দেন ৩০০ টাকা বা কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়েও কম। পরিবারের কথা ভেবে বৈষম্য মেনে নিয়েই কাজ করছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অর্থাত্ আনুষ্ঠানিক খাতে নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য অনেকটা কম হলেও অনানুষ্ঠানিক খাতে বেতন বা মজুরি বৈষম্য এখনো অনেক বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বস্তরে আয় বৈষম্য নিরসন করা এখনো বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা, কারখানা মালিকদের উদ্যোগে শ্রমিকদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া, কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, করোনাকালের সুযোগ নিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই না করা, শ্রমিকদের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা, ত্রিপক্ষীয় কমিটির কার্যক্রম জোরদার করা, শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। এ শিল্পের কারণেই দেশ আজ বিশ্ববাজারে পেয়েছে পরিচিতি। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগ আসে পোশাক খাত থেকে। এ খাতে কাজ করেন ৪৫ লাখের বেশি শ্রমিক। এর মধ্যে ৮০ ভাগই নারী শ্রমিক। পোশাক শিল্পের কল্যাণে দেশের অনেক নারীই আজ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। অন্যদিকে বিপরীত চিত্রও আছে। এই শিল্পে কাজ করতে এসে অসংখ্য নারী শ্রমিক অধিকারবঞ্চিত হচ্ছেন। পাচ্ছেন না শ্রমের উপযুক্ত মূল্য। এই করোনা মহামারির সময়ে চাকরি হারিয়ে পথে বসছেন অনেকে।

মহান মে দিবস

বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস মহান ‘মে দিবস’ আজ শনবিার (১ মে)। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবেই মে দিবস পরিচিত।

১৮৮৬ সালের এ দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেদিন থেকে মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা আর শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটার স্বপ্ন দেখারও দিন এটি।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষ, মুজিববর্ষে গড়ব দেশ’। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারি স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে এ বছর মে দিবসের সব আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করা হয়েছে। তবে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা শ্রমজীবী মানুষসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকজন শ্রমিককে জীবন দিতে হয় সেদিন শিকাগোর হে মার্কেটে। এরপর থেকে দিনটি ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দিবসটি বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।

মহান মে দিবস শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের চরম আত্মত্যাগে ন্যায্য অধিকার আদায়ের এক অবিস্মরণীয় দিন। বৈশ্বিক এ মহামারির মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মালিকরা প্রয়োজনে কারখানা খোলা রাখবেন। তবে তারা অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করবেন; এটাই প্রত্যাশা সবার।

এসএএস/

এই বিভাগের আরও খবর