chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

শুক্রবারের আমল সমূহ

ডেস্ক : শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসব ও ইবাদতের দিন। তাই নিচে বর্ণনা করা হল শুক্রবারের বিশেষ বিশেষ আমল ।

এই শুক্রবারের আমল গুলো অর্থাৎ জুম্মার রাত ও দিনের সকল আমল রেফারেন্সসহ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যে ইবাদত করতে হবে তা আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এক নজরে শুক্রবারের আমল সমূহ…..

বৃহস্পতি বার রাত থেকেই বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা,

  • ফজরের নামাজে সুরা সাজদা ও সুরা ইনসান তেলাওয়াত করা
  • গোসল করা
  • উত্তম পোশাক পরা
  • সুগন্ধি ব্যবহার করা
  • আগেভাগে মসজিদে যাওয়া
  • ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা
  • মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নত আদায় করা।
  • খুতবা চলাকালে কোনো কথা না বলা
  • মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা
  • দুই খুতবার মাঝে দোয়া করা
  • সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা

শুক্রবার কেন আমলের জন্য উত্তম?

শুক্রবারকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ বলা হয়। জুমার দিনের মৃত্যুর ফজিলত ও রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও গোটা জগতকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুম্মার দিন।

এই দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃজিত হন। এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। এবং এ দিনেই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম।

এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪)

কেয়ামত এ দিনেই সংঘটিত হবে। আল্লাহ তায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেছিলেন।

কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইসলামে জুম্মার গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহপাক কোরআন পাকে ইরশাদ করেন,

‘হে মুমিনগণ জুম্মার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশেও দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর’। সূরা জুমা, আয়াত নং-৯। নিচে শুক্রবারের আমল সম্পর্কে রেফারেন্সসহ বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হল:

জুম্মার আজান হলে দ্রুত মসজিদে যাওয়া,

জুমার দিনে আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুমু’আর নামায আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা ঈমানী দায়িত্ব।

এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, সকল দোয়া কবুল হয়। এই দিনের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

যথাসম্ভব দ্রুত মসজিদে যাওয়া। এই দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে দ্রুত মসজিদে যাওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো।

এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো।’ (সুরা জুম্মা, আয়াত : ৯)

আগে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত:

রাসূল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন।

যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে। এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তি যে একটি গাভী কোরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি, হাদিস : ৯২৯)

ফজিলত পূর্ণ আমল:
গোসল করা। উত্তম পোশাক পরিধান করা। সুগন্ধি ব্যবহার করা।

শুক্রবারের নামাজ:
আজানের পরপর নামাজের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা উত্তম। এবং মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনাও ওয়াজিব।

সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা:
কাহাফ কোরআনের ১৮ নম্বর সূরা। অর্থ- গুহা। মোট আয়াত ১১০।মক্কায় অবতীর্ণ। জুম্মার দিনে সূরা কাহ্ফ তিলাওয়াত করা ফজিলত পূর্ণ আমল।

রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে। (আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২)

সূরা আল্ কাহ্ফ (Surah Al Kahf) Bangla শুধু তেলাওয়াত ও ইউটিউবে অর্থসহ মিশারি রশিদ আল-আফাসির সূরা আল্ কাহ্ফ তেলাওয়াত ও শুনতে পারেন।

সূরা আল কাহাফ তেলাওয়াত শুনুন এখানে…

দরুদ শরিফ পাঠ করা:
বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা এবং বেশি বেশি জিকির করা মোস্তাহাব। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম।

এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে।

এই দিনে সমস্ত সৃষ্টিকে বেহুশ করা হবে। অতএব তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে।
(আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)

শুক্রবার রাতের আমল:
জুম্মার রাত (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) ও জুম্মার দিনে নবী করিম (সা.) এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। এমনিতেই যে কোনো সময়ে একবার দরুদ শরিফ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা পাঠকারীকে দশটা রহমত দান করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য দশবার রহমতের দোয়া করেন। জুম্মার নামাজের পূর্বে দুই খুতবার মাঝখানে হাত না উঠিয়ে মনে মনে দোয়া করা।

আসরের পরের আমল:
সূর্য ডোবার কিছুক্ষণ আগ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত গুরুত্বের সাথে জিকির, তাসবীহ ও দোয়ায় লিপ্ত থাকা।

কারণ এটি শুক্রবার দোয়া কবুলের সময়। এ দিন প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিন দিবসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত।

(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)। এ দিনে বেশি বেশি দোওয়া পড়ার কথা রাসূল সা. নিজেই বলেছেন।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে,
তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন।

(আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮) এছাড়াও জুমার দিনের ফজিলতের হাদিস সমূহ বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ গুলো দ্বারা স্বীকৃত।

সবমিলে পবিত্র জুমার ফজিলত অপরিসীম। উপরে বর্ণিত জুম্মার দিনে করণীয় আমল সমূহ যথাযথভাবে পালন করলে কামিয়াবি আসবে ইনশাআল্লাহ।

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল পাক (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসর নামাজের পর না উঠে ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ শরিফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে। এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে।

(সুবনহান আল্লাহ) দোয়াটি হলো: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লিম তাসলীমা’ ।

এছাড়াও শুক্রবারে অন্য আমল করা যাবে কি?

উপরে বর্ণিত শুক্রবারের আমল গুলো ছাড়াও অন্য আমল করতে পারেন। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে জুমার দিন অফিস আদালত ছুটি থাকে।

তাই ইচ্ছা করলেই এ দিনে বেশি বেশি আমল করা যায়। এতে করে বেশি বেশি আমলের মাধ্য আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা ও নৈকট্য লাভ করা যায়।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র জুমার দিনে বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন।

চখ/এএমএস

এই বিভাগের আরও খবর