chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে মশক যন্ত্রণা !

নিজস্ব প্রতিবেদক : মশার আক্রমণে বিপর্যয়ে চট্টগ্রামবাসী। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশেই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। কি শীত, কি গরম-সারা বছরই নগরবাসীকে মশার কামড় খেতে হয়। নগরীতে এখানে-ওখানে খানাখন্দ, খোলা ম্যানহোল, পয়োনালা, অর্ধনির্মিত দালান, আবর্জনায় ভরা। এসব জায়গায় মশা বংশ বিস্তার করে চলেছে।

এসব মশা থেকেই প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চলেছে। এসব রোগে মৃত্যুর হারও কম নয়। গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে সবার মুখেই এখন যন্ত্রণার নাম মশা। রাত নেই দিন নেই ২৪ ঘণ্টাই মশার উৎপাত। মশার যন্ত্রণায় অনেকেরই কাটছে নির্ঘুম রাত।

সিটি কর্পোরেশনের দাবি তারা নিয়মিত মশা নিধন ওষুধ ছেটাচ্ছে তবে নগরবাসী বলছে চসিকের এসব কাজ দৃশ্যমাণ নয়। ওষুধ ছেটালেও তা কাজের কাজ কিছুই হয় না। মশা মারতে নেই প্রযুক্তিনির্ভর কোনো কার্যক্রম।

নগর বিশ্লেষকরা বলছেন, মশা বৃদ্ধির মূল উৎস বদ্ধ জলাধার ও ড্রেন। আবার ডেঙ্গু মশার উৎস ভিন্ন। বাসাবাড়িতে নির্মাণাধীন উন্মুক্ত আধার ও পরিষ্কার পানি।

শীতের মৌসুমের শুরু থেকেই মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল নগরবাসী। গরমের শুরুতেও মশা থেকে রেহাই পাচ্ছে না চট্টগ্রামবাসী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাগরিক সেবা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের নজর নেই। মেয়র ও নগর ভবনের কর্মকর্তারা আন্তরিক হলে মশক পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছত না। ছয় মাস সঠিকভাবে মশার ওষুধ ছিটালে হয়তো নিয়ন্ত্রণে আনা যেত। কিন্তু কাজ না করে তারা অপেক্ষা করছেন প্রকৃতির।

কখন ঝড়-বৃষ্টি হবে আর মশার লার্ভা প্রবহমান পানিতে ধুয়ে যাবে। নগরীর মোমিন রোডের বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, রমজানে তীব্র দাবদাহে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। মশার জালায় সন্ধ্যার আগেই বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করা হয়। কিন্তু এর পরও মশার কামড় থেকে রক্ষা নেই।

মশা মারতে কয়েল, স্প্রে, বৈদ্যুতিক ব্যাট সবই কিনেছি। কিন্তু কিছুতেই মশার কামড় থেকে নিস্তার পাচ্ছি না।’

শুধু মোমিন রোড নয়, খুলশী, আগ্রাবাদ, থেকে শুরু করে জামালখান, চকবাজার, হালিশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নিউ মার্কেট, বায়েজিদ, পতেঙ্গা এলাকার পরিস্থিতি প্রায় একই। এসব মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর, চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

নগরীর চৌমহনী এলাকার বাসিন্দা জুহাইর মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, মশার কামড়ে অফিসে ও বাড়িতে অতিষ্ঠ। মশারি টানিয়ে ঘুমালেও শান্তি নেই। মশারির ফাঁক গলে ঢুকে পড়া মশা মারতে গিয়ে রাতের ঘুম নষ্ট হয়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী চট্টলার খবরকে বলেন, নগরীতে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
মশার কারণে যত রোগবালাই

চিকিৎসকরা জানিয়েছে মশার কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সী মানুষ।

ম্যালেরিয়া : বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। তাই বলে চট্টগ্রাম বা অন্যান্য শহরেও যে হয় না, তা নয়। তা ছাড়া প্রতিদিনই অনেক পর্যটক বেড়াতে বা কাজে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি এলাকায় যাচ্ছেন। তাই যে কেউ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।

অনেক জ্বর, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, প্লীহা ও যকৃতের আকৃতি বৃদ্ধি ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। কখনো কখনো ম্যালেরিয়া প্রাণনাশী হয়ে উঠতে পারে, মস্তিষ্ককে আক্রমণ করতে পারে, অস্বাভাবিক রক্তপাত, জন্ডিস ইত্যাদিও ঘটাতে পারে।

ডেঙ্গু : জুন-জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত এ দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। ডেঙ্গুবাহী মশা অ্যাডিস বদ্ধ পানিতে জন্মায় এবং দিনের বেলায় বেশি কামড়ায়। তাই শহরেই এর আক্রমণ বেশি।

জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও চোখব্যথা, গায়ে ফুসকুড়ি বা র্যাশ এই রোগের লক্ষণ। এতে রক্তে অণুচক্রিকা কমে যেতে পারে এবং অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। এমনিতে ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর আশঙ্কা তেমন নেই, তবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়ে গেলে ব্যাপারটা জটিল রূপ নিতে পারে।

চিকুনগুনিয়া : চিকুনগুনিয়া ভাইরাস। এটিও মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। এই রোগে জ্বরের পাশাপাশি হাড়ের জোড়া বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়। ব্যথা, জ্বর সেরে যাওয়ার পরও অনেক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এনকেফেলাইটিস : এটিও মশাবাহিত ভাইরাস। মস্তিষ্কে প্রদাহ ঘটায়। সাধারণ ফ্লুর মতো উপসর্গ। এশিয়া মহাদেশে এই সমস্যা জাপানিজ এনকেফেলাইটিস নামে পরিচিত। এর প্রভাবে জ্বর, গলাব্যথা থেকে শুরু করে খিঁচুনি, মাংসপেশির দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

জিকা : বেশ কয়েকটি দেশে জিকা ভাইরাসজনিত যে সমস্যার দেখা মিলেছে, সেটাও মশাবাহিত। বাংলাদেশে ততটা না দেখা গেলেও মনে রাখতে হবে যে ভাইরাসবাহী মশা বিমানে করে আসতে পারে। গর্ভবতী মা এতে সংক্রমিত হলে গর্ভস্থ শিশু আক্রান্ত হতে পারে।

এসএএস/এএমএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর