chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বাঁশখালীতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরো দুই শ্রমিকের মৃত্যুর খবর জানা হয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিমুল আহমেদ নামে এক শ্রমিক মারা যান।

তাছাড়া এর আগের দিন নগরীর বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজেউল ইসলাম (২৫) নামে আরও এক শ্রমিকের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

নিহত শ্রমিকের নাম শিমুল আহমেদ সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে এবং রাজেউল ইসলাম (২৫) দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের নথন জামদানি গ্রাম দিনমজুর আব্দুল মান্নান মণ্ডলের ছেলে।

চমেক হাসপাতালে মারা যাওয়া শ্রমিকের তথ্যটি নিশ্চিত করেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভূঁইয়া। অন্যদিকে পার্কভিউ হাসপাতালে শ্রমিক মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেন ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন।

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় শিমুল আহমেদ নামে এক শ্রমিক মারা গেছে। তার কোমরের নিচে গুলি লেগেছিল। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বাঁশখালীতে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শ্রমিক রাজেউল ইসলামকে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করান তার সহকর্মীরা।

এরপরদিন তার অপারেশন করা হলেও ১৯ এপ্রিল সোমবার মধ্যরাতে চিকিৎসাধিন অবস্থায় রাজেউল মারা যান। পরে তার পরিবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমার কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস নেন। মঙ্গলবার রাতে রাজেউলের লাশ তার গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে বলে পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারি।

এরআগে গত শনিবার সোয়া ১১টার দিকে দাবি আদায়ে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলে ৪ জন এবং চমেক হাসপাতালে নেয়ার পর আরো একজনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন- আহমদ রেজা (১৮), রনি হোসেন (২২), শুভ (২৪), মো. রাহাত (২৪) ও মো. রায়হান (২৫)।

ওইদিন ১৭ জন গুলিবিদ্ধসহ আরো বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন। ক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের তিন সদস্যও আহত হয়। পরে এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তাছাড়া একই দিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছছে বাঁশখালী থানায়। পুলিশ ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কতৃর্পক্ষ পৃথক মামলা দুটি দায়ের করেছেন।

উল্লেখ্য : বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে ও চীনা প্রতিষ্ঠান সেপকো ও এইচটিজির মধ্যে চুক্তি হয়।

২০১৭ সাল থেকে গণ্ডমারা এলাকায় প্রায় ছয় শ একর জমিতে আড়াই শ কোটি ডলার ব্যয়ে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

চুক্তি হওয়ার পর থেকেই গ্রামবাসীদের একটি পক্ষ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করেন পরিবেশ দূষিত হওয়ার কথা বলে। আরেকপক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষ নেয়।

এর জেরে ২০১৬ সালের এপ্রিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। তখন নিহত হন চার গ্রামবাসী। আহত হয় পুলিশসহ অন্তত ১৯ জন। এ ঘটনার পাঁচ বছর পর ফের হতাহতের ঘটনা ঘটলো বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায়।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর