চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনা রোগী, আইসিইউতে শয্যা সংকট
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও।
গতকাল একদিনে করোনায় প্রাণ গেছে ৬ জনের। যা সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড বলছে সংশ্লিষ্টরা।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে করোনা রোগী বাড়ায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে।
আইসিইউ ইউনিটে শয্যা সংকট চরমে পৌঁছেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সাত শতাধিক করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান চট্টলার খবরকে বলেন, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৬৯৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে ২২৬ জন এবং আইসিইউ ওয়ার্ডে রয়েছেন ১৩ জন।
বেসরকারি হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৩৮৬ জন এবং আইসিইউ ওয়ার্ডে রয়েছেন ৬৮ জন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের সাধারণ শয্যা রয়েছে ৯৫০। আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩০ টি। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৬৫০টি। ১০৫ টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে করোনা রোগীর জন্য ডেডিকেটেড রয়েছে ৫০টি। তারপরও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ৬৮ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগতি। মৃত্যুর হারও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছেন ৬ জন। এদিন ২ হাজার ৩৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭৩ জন।যা শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
এদিকে চট্টগ্রামে করোনায় রোগী বাড়ছে থাকাই লালদিঘির পাড়ে ৫০ শয্যা আইসোলেশন সেন্টার চালু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া বন্দর ইপিজেড পতেঙ্গা করোনা হাসপাতাল ফেল চালু করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (৭ এপ্রিল) থেকে রোগী ভর্তি ও আউটডোর রোগীসেবা কার্যক্রম চালু করা হয়।
এর আগে গত সোমবার (২৯ মার্চ) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল সারাদেশের জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ মোট ২৯টি জেলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
এদিকে চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেলায় দশায় অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। তারা বলেন চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভগ্নদশা দেখিয়ে দিয়েছে করোনা মহামারি। ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠলেও নেই গুণগতমানের সেবা।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর এলাকায় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৫৩টি। এরমধ্যে শুধু চট্টগ্রাম মহানগরেই ৯৩টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া হাটহাজারীতে ১০টি, মিরসরাইয়ে ৮টি, ফটিকছড়িতে ৭টি, লোহাগাড়ায় ৬টি, সীতাকুণ্ড ও সাতকানিয়ায় ৫টি, পটিয়ায় ৪টি, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বাঁশখালী ও চন্দনাইশে ৩টি, বোয়ালখালী, আনোয়ারা এবং সন্দ্বীপে ২টি করে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
এসব হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে মেলে নিম্নমানের চিকিৎসা সেবা।
এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত দুর্বলতাও রয়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতালে নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ও আইসিইউ। এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ভালোমানের যন্ত্রপাতি না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ রিঅ্যাজেন্ট ব্যবহারে পাওয়া যায় ত্রুটিযুক্ত রিপোর্ট।
ঢাকায় বিভিন্ন রোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকলেও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে নেই সরকারি কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল। ফলে রোগীদের বাধ্য হয়ে ছুটতে হয় ঢাকায়। বিশেষায়িত হাসপাতাল হলে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন হতো বলে মত সংশ্লিষ্টদের। যদিও বেসরকারি উদ্যোগে ডায়াবেটিস, কিডনি, চক্ষুরোগের হাসপাতাল রয়েছে চট্টগ্রামে।
এসএএস/এএমএস/চখ