chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

নগর পরিবহনে ভাড়া দ্বিগুণ, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: চকবাজার থেকে গণিবেকারি মোড় দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার। এখানে স্বাভাবিক সময়ে গণপরিবহনের ভাড়া ৫ টাকা। বুধবার সকাল থেকে এ ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ টাকায়। নগরীর প্রতিটি সড়কে দেখা গেছে এমন চিত্র। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণপরিবহনের যাত্রীরা।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে চাকরিজীবীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম গণপরিবহন। গ্রাম থেকে শহরে আসা হাজার হাজার ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী ও বিভিন্ন পেশার লোকজনও গণপরিবহনের ওপর নির্ভরশীল।

হঠাৎ করে সরকারিভাবে গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। একে তো ভাড়া বেশি তার উপর মিলছে না গাড়ি। যেনো মরার উপর খাঁড়ার ঘা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের দেয়া নির্দেশনা মানছে না গণপরিবহনের চালক-সহকারীরা। অর্ধেক সিট খালি রেখে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না কেউ। আগের মতো বেশি যাত্রী নিয়ে চলছে গণপরিবহন।

নগর পরিবহনে ভাড়া দ্বিগুণ, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা
বিআরটিসি বাসে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত। আসন খালি না রেখেই চলছে বাস। নগরীর টাইগারপাস মোড় থেকে তোলা। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

এদিকে ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করা হলেও যাত্রীদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে গণপরিবহনগুলোর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বুধবার সকাল থেকে যাত্রীদের সাথে চালক-সহকারীরের ঝগড়াও কম হচ্ছে না। তবে প্রশাসন বলছে, চট্টগ্রাম নগরীতে গণপরিবহনে নতুন নির্দেশনা মানাতে ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছে।

পরিবহন সংকটে যাত্রীদের ভোগান্তিও পৌঁছেছে চরমে। এক একটি বাস কোনো স্টপেজে আসলেই শুরু হয় শত মানুষের দৌঁড়ঝাঁপ। তবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশনা মানায় বেশিরভাগই বাসে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন না। বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে পথে পথে যাত্রীদের জটলায় আর দৌঁড়ঝাঁপে কতোটা নিশ্চিত হচ্ছে এই বিধি সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

বুধবার (৩১ মার্চ) সকাল থেকে এমন পরিবহন সংকটে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, জিইসি, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, ইপিজেড, নিউমার্কেটে চকবাজার, আন্দরকিল্লা, শাহ আমানত সেতু, অক্সিজেন, কর্ণেল হাট, অলংকার, কালুরঘাট, কাপ্তাই-রাস্তার মাথাসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোন স্টপেজে দু-একজন যাত্রী নামানোর জন্য কোন বাস দাঁড়ালেই পথে অপেক্ষমাণ মানুষরা বাসে উঠার চেষ্টা করেন। তীব্র ধাক্কাধাক্কি করে দু-একজন উঠতে পারেন ঠিকই, তবে দীর্ঘ অপেক্ষমাণ থাকতে দেখা গেছে বেশিরভাগ যাত্রীদের।

এমন পরিস্থিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যাত্রীরা। বোয়ালখালী থেকে শহরে আসা মাজেদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, শহরে আসার পর অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়ে গাড়ি পাওয়াটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আর ধাক্কধাক্কি করে কোনরকম উঠতে পারলেও দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করে বসছে গণপরিবহনগুলো। এভাবে চলতে থাকলে জীবিকা নির্বাহ করাটাই কঠিন হয়ে পড়বে।

হাটহাজারীতে থেকে শহরে আসার জন্য সকাল ৭ টা থেকে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন গণমাধ্যমকর্মী আশরাফুল আলম মামুন। প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে শহরে আসতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

এমন বাস সংকটে কেউ কেউ বেছে নিচ্ছেন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল সেবা। আবার অনেক যাত্রীকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা দিতে দেখা গেছে।

নগর পরিবহনে ভাড়া দ্বিগুণ, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও চালক-সহকারীরা তা মানছেন না। নগরীর দেওয়ানহাট এলাকা থেকে তোলা। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

এদিকে গণপরিবহনের মালিক পক্ষের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে গণপরিবহনের চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সরকারি নিয়ম মেনে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন। তবে বেশি যাত্রী নেওয়ার পরও কেন দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন এমন প্রশ্নে একাধিক চালক বলেন, সব চালকরাই নিচ্ছেন তাই তারাও নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিসি স্টাফ অফিসার ওমর ফারুক চট্টলার খবরকে বলেন, আজ থেকে সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী ও ৬০ শতাংশ ভাড়া নিয়ে চলাচল করছে। তবে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর ইতোমধ্যে নগরীতে ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছে।

এসএএস/এমআই/চখ

এই বিভাগের আরও খবর