chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ

দেয়াল তুলে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক কেটে লণ্ডভণ্ড করেছে বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসার ছাত্ররা। মাদ্রাসার সামনে ইটের দেয়াল তুলে বিক্ষোভ করছেন তারা। এতে ওই মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার কালীবাড়ির সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে রাত ৯টা ২৫ মিনিটে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের সদস্য মওলানা ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে হেফাজত নেতারা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের মধ্যে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।

তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, নিহতদের মরদেহের সঠিক ময়নাতদন্ত এবং দাফন কাজে কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি না করার দাবি করলে আমরা এ ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করি। ১ ঘণ্টা পর তাদের আবার বৈঠক করার কথা রয়েছে।

এরপর রাত ১১টার দিকে ফের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকটি প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে।

তবে বৈঠকের এক ফাঁকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে হেফাজতের আমির আল্লাহ বাবুনগরী মাদ্রাসার মাইকে বলেন, এমন ঘটনার জন্য তোমাদের মতো আমিও ব্যথিত।

তোমাদের মতো আমারও অনেক দাবি-দাওয়া আছে। তিনি বলেন, মোদিকে এখনই বাংলাদেশ ছাড়তে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।

এছাড়া তোমাদের শনি ও রোববারের পরীক্ষা আগামী সোম ও মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। তোমরা মাদ্রাসায় ফিরে আস। তার এ আহ্বান জানানোর পরপরই শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় ফিরে গেছেন।

এরপর মাদ্রাসার মাইক থেকে আনুষ্ঠানিক ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো-এক. খুনিদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে; দুই. ছাত্র-জনতার ওপর কোনো ধরনের হামলা করা যাবে না; তিন. নিহতদের ক্ষতিপূরণ হাটহাজারী প্রশাসনকে বহন করতে হবে।

চার. আহতদের চিকিৎসার খরচ সরকারকে বহন করতে হবে। পাঁচ. চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

ছয়. হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত এবং ইন্ধনদাতাদের গ্রেফতার করতে হবে। এ ব্যাপারে বৈঠকের পর ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, তাদের কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে এবং বাকিগুলো আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা মিছিল বের করে এবং থানা ও আশপাশের কয়েকটি সরকারি অফিসে হামলা চালায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ পালটা গুলি ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় নয়জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) আনা হয়।

তাদের মধ্যে চারজনকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের রবিউল ইসলাম (২২), মাদারীপুরের মেহেরাজুল ইসলাম (২২), হাটহাজারীর মো. জামিল (২০) ও ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের আবদুল্লাহ মিজান (২৩)।

হতাহতদের চমেক হাসপাতালে আনার পর একদল বিক্ষুব্ধ যুবক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে যান হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী।

তবে তিনি ওই সময় ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী যুগান্তরকে বলেন, পুলিশের গুলিতে হেফাজতের ১০-১৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। আহতদের মধ্যে আরেকজনের অবস্থা গুরুতর।

ঘটনার পরপরই হাটহাজারী দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার সামনে অবস্থান নিয়ে হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেন।

দুপুর সোয়া ২টার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে হাজারখানেক ছাত্র আনুমানিক ৫০০ মিটার দূরে থানার সামনে যান। তবে মাদ্রাসার মাইক থেকে তাদের ফেরত যেতে বারবার অনুরোধ করা হয়।

এরপর তারা থানার দিকে এগোতে থাকে। থানার সামনে গিয়ে হঠাৎ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন তারা। ছাত্রদের ছোড়া ইট-পাথরের টুকরায় থানার সামনের কাচের দরজা ভেঙে যায়। বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ প্রথমে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এরপর পুলিশ ও হেফাজত কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হয়। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

পুলিশ আরও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ার পর মাদ্রাসাছাত্ররা পিছু হটেন। তারা মাদ্রাসার মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ থানার সামনে অবস্থান নেয়।

হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন জানান, মিছিলকারীরা ভূমি অফিসে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। ফাইলপত্র, আসবাবপত্র সব জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভূমি অফিসের একটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে। উপজেলার ডাকবাংলোতে ঢুকেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

রাত সোয়া ৮টার দিকে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক হয়। বৈঠকে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ স্থানীয় প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা অংশ নেন।

এসএএস/নচ

এই বিভাগের আরও খবর