আমরা বিজয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা গর্বিত জাতি: মেয়র
ডেস্ক নিউজ: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আলহাজ্ব এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, আমরা বিজয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা গর্বিত জাতি। ২৩ বছরের সংগ্রামী ইতিহাস তৈরি করে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে মুক্তিপাগল অদম্য একটি জাতিতে পরিণত করেছিলেন।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) চসিক মিলনায়তনে চসিকের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চসিক মেয়র বলেন, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের ইঙ্গিত ও যুদ্ধ পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন যদি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেয়া হত, তাহলে পাকিস্তানিরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বিচ্ছিন্নতাবাদীর তকমা লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুসহ সমাবেশে উপস্থিত লাখো জনতাকে নিধন যজ্ঞে লিপ্ত হবার জন্য।
‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণে কৌশলী শব্দ চারণে তারা সেদিন বোকা বনে গিয়েছিল। চরম অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরহ নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর পৈশাসিক আক্রমণ ও হত্যা লীলায় মেতে ওঠলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ইপিআর এর ওয়ারলেস ট্রান্সমিশনের মধ্য দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাঙালিরা যে যে অবস্থায় আছে, যার যা কিছু আছে তা নিয়ে প্রানপণ প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত করার আহ্বান জানান।’
তিনি বলেন, ২৬ তারিখেই আমাদের অগ্রজ মরহুম জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর জুপিটার হাউজ থেকে সাইক্লোস্টাইলে টাইপ করা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিলি করার সাথে সাথে মাইকিং করা হয় এবং কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টলার অবিসংবাদিত জননেতা এম এ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি পাঠ করেন। এরপর অন্যরাও এটি পাঠ করে শোনান।
মেয়র বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা অনেক হয়েছে, কিন্তু জোর করে ইতিহাস বদলে দেয়া যায় না। ইতিহাসের বিকৃতি সাধন করে মানুষের সেন্টিমেন্টকে বন্দি করে, বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিয়ে পুনরায় পাকিস্তানি ভাবধারার বাংলাদেশ গড়তে গিয়ে জাতির জীবন থেকে অনেকগুলো বছর নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। জাতিকে পিছিয়ে দিয়ে দারিদ্রপীড়িত, খরা, দুর্যোগ আর হাতপাতা জাতিতে পরিনণত করেছিল সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার কলঙ্কময় ঘটনার বেনিফিসিয়ারি গোষ্ঠী।
রেজাউল বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কঠোর সংগ্রামের পথচলায় উজ্জীবিত বাঙালি সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে দেশকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘আজ একটি মর্যাদাশীল গর্বিত জাতি হিসেবে আমরা জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতিসংঘ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীতকরণকে উদযাপন করছি। আগামীর পথ চলায় এ প্রেরণাকে সাথী করে আমরা অচিরেই মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় যুক্ত হতে চাই।’
তিনি বলেন, এজন্য প্রজন্মের নিকট সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করতে হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে অধিকতর শক্তিশালী করতে হবে।
চসিকের ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্যানেল মেয়র ও ১৫নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুল আমিন।
এ ছাড়াও ৩০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আতাউল্লাহ চৌধুরী, ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম, জামাল খান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন,
মহিলা কাউন্সিলর শাহীন আকতার রোজী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভার সঞ্চালনা করেন কঙ্কন দাস।
এমআই/চখ