chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

‘হি ইজ দ্যা সুপারস্টার অফ বাংলাদেশ ক্রিকেট’

ইফতেখার নিলয়: হি ইজ দ্যা সুপারস্টার অফ বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যান্ড হি প্লেইড লাইক আ সুপারস্টার টুডে। হতাশ কিংবা আশাহত না হয়ে যারা বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন’স ট্রফির ম্যাচটা দেখেছেন, তাদের কাছে ইংলিশ কমেন্টেটর নাসের হুসেনের এই লাইন খুবই পরিচিত হওয়ার কথা। খাদের কিনারায় চলে যাওয়া বাংলাদেশের সেমির সম্ভাবনা, ব্যাট হাতে জিইয়ে রেখেছিলেন সাকিব আল হাসান

সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের এক ঝলক দেখতে হলে, সবচেয়ে বড় ক্রেডিটটা কাকে দিতে হবে ? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কে ? উত্তরটা অবশ্যই হ্যাঁ অথবা না দুটোই হতে পারে। মাগুরার মত মফস্বল শহরে বেড়ে ওঠা কিশোর ফয়সালের (সাকিব আল হাসান) প্রতিভার প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিলো বিকেএসপি। মাগুরা থেকে উঠে আসা কিশোর প্রতিভার প্রমাণ রেখে ধীরে ধীরে স্থান করেও নিয়েছিলেন বয়সভিত্তিক দল থেকে জাতীয় পর্যায়ে।

বিকেএসপি এবং এরপরের দিনগুলোতে মাগুরার ফয়সালকে সাকিব আল হাসানে রূপান্তরিত করতে পরবর্তী বন্ধুর পথকে মসৃণ করে তুলেছিলেন ক্রিকেট কোচ সালাউদ্দীন। গুরু সালাউদ্দীন বললেই হয়তো বেশি শোভা পাবে এক্ষেত্রে। সাকিব যেখানে হোঁচট খেয়েছেন সেখানেই সাকিবকে টেনে তুলেছেন তার গুরু সালাউদ্দীন। বল হাতে সাকিব শুরু থেকেই জাদুকর ছিলেন। ব্যাট হাতে তার আজকের এই অবস্থান পরিশ্রমের ফলাফল।

মাগুরার মাঠ থেকে মিরপুর আর মিরপুরের মাঠ থেকে ক্রিকেটের মক্কা লর্ডস, সব মাঠেই সাদা ও রঙিন পোশাকে করেছেন ঈর্ষা জাগানিয়া পারফরম্যান্স। সকল প্রতিপক্ষকেই নিজের জালে পেঁচিয়ে কুপোকাত করেছেন। এত এত অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের প্রথম স্বীকৃতি এসেছিলো ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। যেদিন সাকিব হয়েছিলেন দেশ সেরা থেকে বিশ্বসেরা। দেশ সেরাদের তালিকা টপকে সাকিব সেদিন বিশ্ব সেরাদের কাতারে মিলিত হয়েছিলেন। হলেন ওডিআই ক্রিকেটের অল-রাউন্ডার র্র‌্যাংকিংয়ে  এক ।

সফলতা তার কাছে যেন অনায়াসেই ধরা দেয়। ক্যামেরার সামনে তা নজরে আসলেও ভ্রুক্ষেপ হয়না সাকিবের পরিশ্রমের চিত্র। এই কাড়নেই আমাদের কারোই জানা ছিলোনা ২০১৯ বিশ্বকাপের পূর্বে সাকিব আইপিএলের সাইড বেঞ্চে বসে বসে কি করেছেন! দলে সুযোগ না পেলেও সাকিব সেখানেও থেমে থাকেননি। দেশ থেকে গুরু সালাউদ্দিনকে ভারতে উড়িয়ে নিয়ে করলেন বিরতিহীন পরিশ্রম। শরীরের জড়তা আর মেদকে তাড়িয়ে এক তরুণ সাকিবের জন্ম হলো ২০১৯ বিশ্বকাপে।

এ গল্পের বাকি অনুচ্ছেদ সবারই জানা। ধারাবাহিক নৈপুণ্যে সাকিব পেছনে ফেলেছেন বহু মহারথীদের। বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে দুই শতকে ৬০৬ আর বল হাতে এক ফাইফারে শিকার করলেন ১১ উইকেট। টিভি পর্দায় মহারথীরা সাকিবের এমন দানবীয় রূপ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছিলেন এই ভেবে যে সাকিবের যুগে তাদের ক্রিকেট খেলতে হয়নি। অন্যদিকে আফসোস টা করেছে কেবল বাংলাদেশিরা। দলের বাকি সদস্যরা সাকিবকে যৌক্তিক সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উড়েনই লাল সবুজের পতাকা সেমিফাইনালের আকাশে।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পরের সময়টা সাকিবের জন্য কেবল-ই ঘোর অন্ধকার। দেশের ক্রিকেটের পরিবর্তনের আশায় সতীর্থদের নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু দুদিনের ব্যবধানেই সাকিবের এক অসহায় চেহারা গণমাধ্যমে। এত অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হয়েও তিনি করলেন এক শিশুসুলভ ভুল। ভুলের মাশুল গুনতে হয়েছিলো এক বছরের নির্বাসনে। এক বছর বাদে ফিরে কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি। সাকিব এখনও সাকিব-ই রয়ে গেছেন।

বিতর্ক যেন সাকিবের পিছুই ছাড়তে চায়না। তাই নিউজিল্যান্ড সিরিজে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিলেও শ্রীলঙ্কা সিরিজ খেলবেন না সাকিব আইপিএলের কারণে। যুক্তি হিসেবে জানা গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যেহেতু ভারতে তাই তিনি ভারতে অনুষ্ঠিত আইপিএলে অংশ নিতে চাচ্ছেন। এমন সাকিব অনেকের কাছে অচেনা হলেও মাঠের বাইরের প্রতিবাদী সাকিব আর বাইশ গজের বুকে দাপিয়ে বেড়ানো সাকিব সর্বদাই সবার ভালোবাসার।

বিসিবির ভেতর চলতে থাকা অনিয়মের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার সাকিব আল হাসান। অযৌক্তিক কার্যক্রমকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেদরসে সমালোচনা করেছেন দিনকয়েক আগে। এতেই সাকিবের উপর সমর্থকদের জমে থাকা রাগ-ক্ষোভ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। দেশের ক্রিকেটের চলমান সংস্কৃতির পরিবর্তনে তাই মাঠে ও মাঠের বাইরে অসংখ্য সাকিব আল হাসান প্রয়োজন।

সাকিব তো ক্রিকেটবিশ্বে একমাত্র ক্রিকেটার যিনি তিন ফরম্যাটেই অল-রাউন্ডারের শীর্ষস্থান ছুঁয়ে দেখেছেন। এমন কীর্তি তো আর কেউই গড়তে পারেননি। এভাবেই সাকিব আলাদা করেন বিশ্ব ক্রিকেটে বাকিদের কাছ থেকে নিজেকে। বিশ্ব ক্রিকেটে সাকিব একজন-ই। সাকিব ভিন্ন, সাকিব অনন্য। এই কারণেই ইংলিশ কমেন্টেটরের নাসের হুসেনের কাছে, ‘সাকিব আল হাসান ইজ দ্যা সুপারষ্টার অফ বাংলাদেশ ক্রিকেট।’

চট্টলার খবরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জান বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসানকে ৩৪ তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

নচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর