দুই পা কেটে এক পা নিয়ে যাচ্ছে খুনি!
বাঁশখালীতে একের পর এক হত্যাকান্ডে শঙ্কিত জনগণ
রাজীব সেন প্রিন্স: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বছরের শুরু থেকে অপরাধীদের তৎপরতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চলতি মাসে তা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মহামারি করোনাকালেও উপজেলায় হঠাৎ বেড়ে গেছে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সংখ্যা।
খুনীদের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতা কিংবা ব্যবসায়ীরাও। হত্যার পর দুই পা কেটে এক পা নিয়ে যাওয়ার মত বর্বরতাও দেখেছে বাঁশখালীর জনগণ।
শুধুমাত্র গত ৪ দিনেই ৩টি হত্যাকান্ড ঘটেছে বাঁশখালীতে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (১৯ মার্চ) রাতে বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব চাপাছড়ি গ্রামে।
খুনীদের নৃশংসতার শিকার হয়ে খুন হয় বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের ৯ং ওয়ার্ড পূর্ব চাপাছড়ির সাবেক ইউপি সদস্য আবুল বশর তালুকদার (৪৫)।
স্থানীয় দইরগ্যা পুকুর পাড় এলাকার আবদুল জব্বারের সিএনজি অটোরিক্সার গ্যারেজ হতে বাড়িতে যাওয়ার পথে খুনের শিকার হয় সাবেক এই ইউপি সদস্য।
কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে চাপাছড়ি গ্রামের আবদুস ছালাম তালুকদারের ছেলে এবং বাহারছড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক এ ইউপি সদস্যকে।
শুধু কুপিয়ে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি খুনিরা। দুই পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাম পা নিয়ে গেছে তারা। মাত্র একদিন আগেই একই কায়দায় খুন হয়েছে এক আওয়ামী লীগ নেতাও। দুই পা কেটে নেওয়ার পর হত্যা করা হয় তাকেও। এর ৭২ ঘন্টা আগে ছুরিকাঘাতে ভুঁড়ি নামিয়ে দেয়া হয় এক মুরগি ব্যবসায়ীর।
এ কোন খেলায় মেতেছে খুনিরা তা ভেবে ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ছেন বাঁশখালী উপজেলার জন সাধারণ। দুই পা কেটে নিয়ে হত্যা করার পর এক পা নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা এর আগে আর কখনো দেখেনি বলে জানায় স্থানীয়রা।
পুলিশ প্রশাসনকেও বিষয়টা ভাবিয়ে তুলছে। দুইটি হত্যাকাণ্ডের ধরণ মিলে যাওয়ায় বিষয়টা নিয়ে তারাও চিন্তিত। তবে এসব হত্যাকান্ড ও নৃশংসতার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রসিদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সর্বশেষ সাবেক ইউপি সদস্য খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিউল কবির।
তিনি বলেন, শরীর থেকে দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সাবেক ওই ইউপি সদস্যের মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করেছে। একটি পা ঘটনাস্থলের পাশেই পাওয়া যায়, অন্যটি পাওয়া যায়নি। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এর আগে গত ১৮ মার্চ রাতে পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে খুন করা হয়েছে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছাবের আহমদকে (৪৫)। তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শুক্রবার বিকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নিহত ছাবের আহমদ উপজেলার খন্দকার পাড়া এলাকার মৃত আব্দুল মাবুদের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আমেনা খাতুন বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে এ ঘটনায় পুলিশ মো. হাসান(১৯) নামে একজনকে গ্রেফতার করেন।
নিহত ছাবেরের পরিবারের লোকজন জানান, আজ শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে আগামীকাল রবিবার বিকালে নিজ বাড়ি পুকুরিয়ায় তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে গত ১৬ মার্চ রাতে বাঁশখালী চাম্বল বাজারের মুরগী ও ডিম ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে (৩৫) ছুরিকাঘাত করে ভুঁড়ি নামিয়ে দিয়েছে দৃষ্কৃতিকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান।
দোকান শেষে বাড়ি ফেরার পথে দৃষ্কৃতিকারীদের রোষানলে পড়ে খুন হন এ ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় নিহতের ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলাটিতে আসামি অজ্ঞাত।
পরপর হত্যাকান্ডের বিষয়ে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, অধিকাংশ ঘটনা পারিবারিক ও জায়গা সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা জানতে পেরেছি।
সর্বশেষ খুন হওয়া সাবেক ইউপি সদস্য আবুল বশরের স্ত্রী খালেদা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, ‘স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক ব্যবসায় বাধা ও নেশাজাত দ্রব্য বিক্রি করার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে খুন হয়েছেন স্বামী আবুল বশর তালুকদার।
তবে তিনি মারা যাওয়ার আগে খুনীদের কয়েকজনের নাম তার বড় মেয়ের কাছে জানিয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।
এদিকে কেন এ নৃশংস হত্যাকান্ড, কারা এর সাথে জড়িত এবং নিয়ে যাওয়া কাটা পা উদ্ধারে চেষ্টার পাশাপাশি পুলিশ অধিকতর তদন্ত করছেন জানায় সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) মো. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতোমধ্যে জুয়া খেলায় সম্পৃক্ত তিন ব্যাক্তিকে আটক করা হয়েছে।
আরএস/এমআই/চখ