chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অযত্নে অবহেলায় জাতিসংঘ পার্ক !

নিজস্ব প্রতিবেদক : জরাজীর্ণ ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র জাতিসংঘ পার্ক। বিনোদনের এই পার্কটি এখন রূপ নিয়েছে নার্সারিতে। এ পার্কের ভিতরের বিভিন্ন অংশে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে মাটির স্তূপ। আছে আবর্জনা। কয়েকটি স্থানে অস্তিত্বহীন পার্কের সীমানাপ্রাচীর। ভিতরে হাঁটার পথ সরু হয়ে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে অনেকটা পরিত্যক্ত একটি জায়গার মতোই। জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

অথচ নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার পার্কটি নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ছিল। সন্ধ্যা নামলেই দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর থাকত এটি। কিন্তু গত সাত বছর ধরে চরম অবহেলা-অযত্নে পড়ে আছে সম্ভাবনাময় বিনোদন কেন্দ্রটি। নানা-শ্রেণি পেশার মানুষের বিনামূল্যের এ কেন্দ্রটি এখন একটি পরিত্যক্ত জায়গা, জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা।

গণপূর্ত বিভাগের জায়গায় গড়ে ওঠা পার্কটি পরিচালনা করে আসছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকত পার্কটি।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পার্কটিতে মানুষের আনাগোনা নেই। প্রবেশের গেটটিও বন্ধ। পার্কের চারপাশে ময়না ফেলে রাখা হয়েছে।

অযত্নে অবহেলায় জাতিসংঘ পার্ক
অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র জাতিসংঘ পার্ক। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

নগরবাসীর অভিযোগ, চট্টগ্রাম নগরী জনসংখ্যার তুলনায় বিনোদন কেন্দ্র যথেষ্ট অপ্রতুল। তবুও জাতিসংঘ পার্কটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। অথচ চসিক সড়ক-ফুটপাথ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে। একটু আন্তরিক হলেই সিটি করপোরেশন জাতিসংঘ পার্কটিকে একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব হতো। এর মাধ্যমে ইট-পাথরের এই শহরের মানুষ অন্তত একটু মুক্ত বাতাস নেওয়ার সুযোগ পেত। নগরীর অন্যতম বৃহত্তম আবাসিক এলাকার মানুষও এখানে পড়ন্ত বিকালে সময় কাটাতে পারত।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, পার্কটি নিয়ে আদালতে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৬ সালে জাতিসংঘ পার্ককে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এলিট পার্ক লিমিটেড নামের ওই প্রতিষ্ঠান সেখানে কমিউনিটি সেন্টার ও অতিথি হাউসসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এবং পাঁচলাইশ আবাসিক সমিতির বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি। এরপর পার্কের মালিকানা নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। পরে গণপূর্ত অধিদপ্তর ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিলেও তাতে বাধা দেয় সিটি কর্পোরেশন।

সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম জাতিসংঘ পার্কের এক একর জায়গার ওপর চার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সুইমিংপুল ও একটি জিমনেসিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ ২০১৫ সালের জুনে শেষ হয়।

চসিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে গণপূর্ত বিভাগ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় এক একর জায়গায় পার্কটি গড়ে তোলে। ২০০২ সালে এটি জাতিসংঘ পার্ক নামকরণ করা হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কের একাংশে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থের দুটি সুইমিং পুল এবং সাত হাজার বর্গফুটের একটি জিমনেশিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়, ২০১৫ সালে এ কাজ শেষ হয়। কিন্তু বর্তমানে এটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।

এসএএস/নচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর