chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

হাটহাজারীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের নিষ্ঠুরতার ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে তোলপাড়!

নিজস্ব প্রতিবেদক:  চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা গ্রামের মারকাজুল কোরআন ইসলামিক একাডেমি নামে একটি হাফেজী মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিলেন ৮ বছরের শিশু শিক্ষার্থী ইয়াসিন ফরহাদ।  বয়সের কারণেই মনটা এখনো চঞ্চল তার। তাই প্রায় সময় তাকে সঙ্গ দিতে একাডেমিতে ছুটে যান মা-বাবা। গত মঙ্গলবার ছিল শিশু ফরহাদের জন্মদিন। আর তাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে বিকাল ৫টার সময় ফরহাদের কাছে যায় তার মা পারভিন আক্তার। দেখা শেষে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফিরে আসছিলেন মা।

মায়ের চলে যাওয়া যেন মন মানছিলো না ফরহাদের। আর তাই মায়ের পেছন পেছন ছুটে যায় কোমলমতি এ শিশুটি। এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাড়ায়। মুহুর্তেই ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে একাডেমির হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মো. ইয়াহইয়া।

তিনি শিশু শিক্ষার্থীকে ঘাড় ধরে নিয়ে যান তার কক্ষে। এবার শুরু হয় শিশুর উপর বর্বর নির্যাতন। শিক্ষার্থীর ওপর শিক্ষকের অমানুষিকভাবে বেদম প্রহারের ৩৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুটিকে নির্মমভাবে প্রহার করছে তার শিক্ষক। এ নিয়ে তোলপাড় হয়ে উঠে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম। শিক্ষকের কঠোর শাস্তি দাবিসহ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।

এদিকে বিকেলের ওই ঘটনার একটি ভিডিও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক হাটহাজারি থানার একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সেখানে শিশুটির সাথে কথা বলে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ ইয়াহইয়াকে আটক করা হয়।

তবে নির্যাতনের শিকার শিশুর পরিবারের একটি আবেদনে নির্যাতনকারী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি জানালেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন।

তিনি বলেন, আমার ফেইসবুক মেসেঞ্জারে মঙ্গলবার রাত ১২.৪৫ মিনিটে একটি ভিডিও ফুটেজ আসে। ৩৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায় এক শিক্ষক তার ছাত্রকে সড়ু একটা বেত দিয়ে বেদম প্রহার করছে।

তাৎক্ষণিক হাটহাজারি থানা পুলিশের সহায়তায় ওই হেফজ খানায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করার সময় নির্যাতনের শিকার শিশুর বাবা মা ওই শিক্ষককে মাফ করে দিতে অনুরোধ জানান।

পরে একটি লিখিত আবেদনে তারা জানায়, পুত্রকে এভাবে মারধর করায় আমরা মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ হয়েছি তবে এ ঘটনায় মামলা করতে রাজি নয়।   তাছাড়া শিক্ষককে ক্ষমা করে দিয়েছেন উল্লেখ করে আমাদেরকেও আইনগত ব্যবস্থা না নিতে লিখিত অনুরোধ জানান।

তাদের বক্তব্য, এতে শিক্ষকের অমর্যাদা হবে, শিক্ষক সামাজিকভাবে হেয় হবে। এভাবে অভিযোগ দিতে চাই না, ‘আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম’ এসব বলে তারা লিখিত দিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেননি।

হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, শিশুটিকে অমানবিকভাবে প্রহার করে ওই শিক্ষক পৌজদারি অপরাধ করেছে। তবে শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের মামলা বা অভিযোগ না করায় আটক ওই শিক্ষককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’

তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে মাদ্রাসায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার কথা জানিয়েছেন তিনি। তাছাড়া তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানায়।

এদিকে নির্যাতনের শিকার শিশুর জন্মদিনের কথা জানতে পেরে চকলেট ও খেলনা নিয়ে তাকে দেখতে যান হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ছেলেটার শরীরের ব্যাথা নয় মনের ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করছি, শরীরের ব্যাথা হয়তো নাপা খেলেই সেরে যাবে। ইয়াসিন দ্রুত ভুলে যাক এই জন্মদিনের স্মৃতি।

 

এই বিভাগের আরও খবর