chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সড়ক বিভাজনে নেই সড়কবাতি, বাড়ছে ঝুঁকি

ইফতেখার নিলয় : চট্টগ্রাম নগরীর শুলকবহর এলাকায় দুই ফ্লাইওভারের মাঝে ডিভাইডারে (সড়ক বিভাজন) নেই সড়কবাতি। তাই সন্ধ্যার পর ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারপার হয় এলাকাবাসীকে। সড়কবাতি না থাকায় রাতে ছিনতাইকারীর খপ্পরেও পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে। অনেক সময় ইভটিজিংয়ে শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেক মেয়ে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, দ্রুতই সমস্যাটি সমাধান করা হবে।

মুরাদপুর এন মোহাম্মদ কনভেনশন হলের সামনে থেকে শুরু হওয়া মুরাদপুর-লালখান বাজারমুখী ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড়।

আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার মুরাদপুর প্রান্ত থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার দূর থেকে বহদ্দারহাট- এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এম. এ. মান্নান ফ্লাইওভারের সীমানা শুরু।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দুই ফ্লাওভারের মাঝের এই ২০০ মিটার রাস্তার ডিভাইডারে নেই কোনো সড়কবাতি। যার ফলে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন এলাকাবাসী। দীর্ঘ এই ডিভাইডারের রাস্তার দুই পাশে রয়েছে তিনটি আবাসিক এলাকা। মোহাম্মদপুর আবাসিক, এশিয়ান হাউজিং সোসাইটি এবং শুলকবহর। এই তিন এলাকায় স্থানীয়-অস্থানীয় মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস।

সড়কবাতির জন্য বৈদ্যুতিক খুঁটি দেয়া হলেও কোন খুঁটিতে নেই সড়কবাতি। তবে সন্ধ্যার পর রাস্তার দুই পাশের ব্যবসায়ীদের দোকানের লাইটের স্বল্প আলোয় বেশ ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হতে হলেও রাতের বেলায় বাধ্য হয়ে অন্ধকারে রাস্তায় চলাচল করতে হয় পথচারীদের। এতে করে বাড়ছে দূর্ঘটনার শঙ্কা। ঘটছে নানা অপকর্মের ঘটনা।

পথচারীরা জানিয়েছে, দীর্ঘ এই ডিভাইডারের মাঝে রাস্তা পার হওয়ার জন্য রয়েছে সংকীর্ণ ফাঁকা জায়গা। যার ফলে দু-প্রান্তে রাস্তা পার হওয়ার জন্য মানুষের জটলা লাগে। দুইজনের বেশি পার হওয়া যায় না একসাথে। দৈনন্দিন কাজে তাড়ায় থাকা মানুষজন ডিভাইডারের উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে রাস্তা। এক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে হয় নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের। রাস্তায় অধিক মানুষ জড় হয়ে গেলে সৃষ্টি হয় যানজটের।

এই সমস্যা আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই রয়েছেন বলে অনেক পথচারী জানিয়েছেন।

সংলিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর পুরাতন ডিভাইডার গুলো ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তীতে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শেষের পর আবার নতুন করে ডিভাইডারগুলো বসানো হয়। ডিভাইডার বসানো হলেও বসেনি সড়কবাতি।

এশিয়ান হাইওয়ের দুই ফ্লাইওভার দিয়েই প্রতিদিন বাস, ট্রাক, কার্গোসহ হাজারো হালকা ও ভারি যানবাহন চলাচল করে। বিশেষত, কক্সবাজারগামী হাইওয়ের বাসগুলো তীব্র গতিতে ছুটে যায় এই রাস্তা ধরে। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে নেমে এই ২০০ মিটার রাস্তা তীব্র বেগে এগিয়ে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে উঠে যায়। হাইওয়ের গতিশীল গাড়িগুলোর চাপে রাস্তা পার হতে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে এলাকাবাসীদের।

শুলকবহরের বাসিন্দা ফারুক চট্টলার খবরকে বলেন , সড়কবাতি না থাকার দরুণ ভুক্তভোগী হচ্ছে শুলকবহর, বহদ্দারহাটসহ আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। বিভিন্ন সময় পথচারীরা ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। এছাড়াও ওই জায়গায় অন্ধকার থাকায় মেয়েরা রাস্তা পারাপারের সময় উত্যক্তকারীদের দ্বারা নানা ধরনের হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। সামাজিক বিশৃঙ্খলা রুখতে এবং একইসাথে বড় কোনো দূর্ঘটনা এড়াতে উক্ত স্থানে পর্যাপ্ত সড়কবাতি থাকা আবশ্যক।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নাইমুর রশিদ বলেন, রাতের বেলায় অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয়। অনেক সময় অন্ধকারে সামান্য দূরত্ব থেকেও পথচারীদের গাড়িচালকরা খেয়াল করতে পারেন না। এতে করে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। অন্ধকারে রাস্তার অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এতে করে গাড়ী চালকদেরও বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় এবং অন্ধকারের সুফল লাভ করতে ছিনতাইকারী মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।
রাত যত গভীর হয় তত কঠিন হয়ে পড়ে ওই সড়কে যাতায়াত করা।

সুমন নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, শুক্রবার ছাড়া অন্যান্য দিন আশেপাশের দোকানপাটের আলোয় রাস্তা পার হওয়া গেলেও, শুক্রবারে দোকানপাট বন্ধ থাকায় রাস্তার অবস্থা উপলব্ধি করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। দোকানের লাইটের আলোয় রাস্তা পার হওয়া গেলেও এটি অন্ত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সড়কবাতির ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তারা খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কান্তি দাশ চট্টলার খবরকে বলেন, লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারের দুই পাশে এলইডি বাল্ব সম্প্রসারণের জন্য ভারতের এলওসির অধীনে একটি প্রজেক্ট রয়েছে। ভারত থেকে অনুমোদন আসলে এ সংক্রান্ত টেন্ডার পাশ করা হবে। আশা করছি মাস দুয়েকের মধ্যেই এর টেন্ডার পাশ হয়ে গেলে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, অস্থায়ীভাবে এশিয়ান হাইওয়েতে সড়কবাতির ব্যবস্থা করা হবে।

উল্লেখ্য, বহদ্দারহাট এলাকার যানজট নিরসনে ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয় বহদ্দারহাট-এক কিলোমিটার পর্যন্ত এম.এ মান্নান ফ্লাইওভারটি। ২০১৭ সালে এ ফ্লাইওভারের কালুরঘাটমুখী র‌্যাম্প চালু করা হয়। একই বছর মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত যানজট দূর করতে নির্মাণ করা হয় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার।

এএসএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর